ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

ইসলামে আল-আকসার গুরুত্ব

পারভেজ হুসেন তালুকদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ১৭ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১৩:২৯, ১৭ অক্টোবর ২০২৩
ইসলামে আল-আকসার গুরুত্ব

আল-আকসা, যা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে আল-আকস মসজিদ, মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস নামে পরিচিত। ইসলামে আল-আকসা একটি বিশেষ সম্মানিত ও পবিত্রতার সুবাস বহন করছে। জেরুজালেমের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই মসজিদ ইসলামের পবিত্রতম স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম একটি, যা মসজিদুল হারামের পরে স্থাপিত দ্বিতীয় মসজিদ।

আল-আকসার গুরুত্ব ইসলামের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আধ্যাত্মিকতার গভীরে নিহিত। এটি সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য তাৎপর্যের প্রতীক। আল-আকসার সঙ্গে একই প্রাঙ্গণে অবস্থিত কুব্বাত আস-সাখরা, কুব্বাত আস-সিলসিলা ও কুব্বাত আন-নবী; যাদের এক সঙ্গে হারাম আল-শরিফ বলা হয়ে থাকে। আজকের নিবন্ধে আমরা জানব পবিত্র আল-আকসা মসজিদের ঐতিহাসিক তাৎপর্য, ধর্মীয় গুরুত্ব, আলৌকিক ঘটনা, আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ও রাজনৈতিক তাৎপর্য সহ আরও অজানা কিছু তথ্য।

ঐতিহাসিক তাৎপর্য

আল-আকসা বা মসজিদে আকসার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ইসলামের ইতিহাসে গভীরভাবে সংযুক্ত। এমনকি মহানবী (সা:) এর পবিত্র মিরাজের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। মিরাজের রাতে নবীকে (সা.) মক্কা থেকে জেরুজালেমে মসজিদে আকসায় নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে তিনি জান্নাত, জাহান্নাম ও মহান আল্লাহ্ সুবাহানাহু তাআলার দর্শন লাভ করেছিলেন। আল-আকসা মসজিদ হযরত ইব্রাহিম (আ.) নির্মাণ করছিলেন পবিত্র কাবা নির্মাণের চল্লিশ বছর পর। আল-আকসা মসজিদুল হারামের তুলনায় দুরে হওয়ায়, ইব্রাহিম (আ.) এটিকে মাসজিদুল আকসা বলেও উল্লেখ করতেন।

ধর্মীয় তাৎপর্য

মক্কায় অবস্থিত পবিত্র কাবা ইসলাম অনুসারীদের নামাজের জন্য স্থায়ী দিকনির্দেশ (কিবলা) হওয়ার আগে আল-আকসা ছিল প্রথম কিবলা। হিজরতের পরে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ায় এর পরিবর্তে কাবা নতুন কিবলা হয়। বলা হয়ে থাকে জেরুজালেম ইসলামে অন্যতম পবিত্র স্থান। পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতই জেরুজালেমকে নির্দেশ করে; যার কথা একদম শুরুর দিকের ইসলামী জ্ঞানীরাও বলেছেন। জেরুজালেম এর কথা হাদিসেও অনেকবার উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে অবস্থিত মসজিদুল আকসা (আল-আকসা) ইসলামে তৃতীয় সম্মানিত মসজিদ এবং একথা মধ্যযুগের অনেক লিপিতেও উল্লেখ করা হয়েছে।

নবী (সা:) বলেছেন, ‘একজন লোক ঘরে নামাজ পড়লে একটি নেকি পান, তিনি ওয়াক্তিয়া মসজিদে পড়লে ২৫ গুণ, জুমা মসজিদে পড়লে ৫০০ গুণ, মসজিদে আকসায় পড়লে ৫০ হাজার গুণ, আমার মসজিদে অর্থাৎ মসজিদে নববীতে পড়লে ৫০ হাজার গুণ এবং মসজিদুল হারাম বা কাবার ঘরে পড়লে এক লাখ গুণ সওয়াব পাবেন। (ইবনে মাজা, মিশকাত)।’

ধর্মীয় কারণে যে তিনটি স্থানে সফরের কথা মুহাম্মদ (সা) বলেছেন মসজিদে আকসা তার মধ্যে অন্যতম।

অলৌকিক ঘটনা

আল-আকসা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মিরাজ ও ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আরও একটি আলৌকিকতা হচ্ছে সোলায়মান (আ.) জ্বীনদেরকে দ্বারা আল-আকসার স্থাপত্য ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছিলেন এবং আল্লাহ তায়ালা ‘গলিত তামার ঝর্ণা’ প্রবাহিত করেছিলেন।

আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

মুসলমানদের জন্য আল-আকসা ঐশ্বরিক সংযোগ এবং ঐক্যের প্রতীক। বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা এটিকে তাদের হৃদয়ে ধারণ করে এবং প্রায়ই এই পবিত্র স্থানটি দেখার স্বপ্ন দেখেন। আল-আকসায় নামাজ আদায় করা বিশেষত্ব বহন করে বলে বিশ্বাস করা হয় এবং অনেকে তাদের বিশ্বাসকে গভীর করার জন্য আল-আকসা পরিভ্রমণ করার চেষ্টা করেন। পবিত্র মসজিদে আকসার আধ্যাত্মিক গুরুত্বও অনস্বীকার্য।

রাজনৈতিক তাৎপর্য

আল-আকসা মসজিদ জেরুজালেমে অবস্থানের কারণে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতেও রয়েছে, যেটি একাধিক ধর্মের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ শহর। আল-আকসাকে ঘিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা থেকে যায়, যা নিয়ে অনেক আগে থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে আছে।

সংরক্ষণ এবং ঐক্য

আল-আকসার তাৎপর্য ভৌগোলিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত সীমানা অতিক্রম করে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ করার কারণ হিসেবে কাজ করে। এটি মুসলমানদের তাদের ভাগ করা বিশ্বাস এবং ইতিহাসের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই পবিত্র স্থানটির সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জন্য সারা বিশ্বের মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

আল-আকসা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয়, ঐতিহাসিক এবং আধ্যাত্মিক প্রতীক। এর তাৎপর্য মুসলমানদের বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের মধ্যে গভীরভাবে নিহিত। তাদের ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে। যদিও এটি প্রার্থনা এবং গভীর অনুরাগের কেন্দ্রবিন্দু। তবুও এটি বেশ রাজনৈতিক এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্যের একটি স্থানও বটে। আল-আকসার সংরক্ষণ এবং এর পবিত্রতার প্রতি সম্মান ইসলামী বিশ্ব এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লেখক: কবি ও শিশুসাহিত্যিক;
শিক্ষার্থী, সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ।

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়