ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২১ ১৪৩১

কার্তিকের শীত

ফয়সাল হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৫, ১৭ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১৪:১৭, ১৭ অক্টোবর ২০২৩
কার্তিকের শীত

দিনের সায়াহ্নে প্রকৃতির শরীর থেকে শীতের গন্ধ স্পষ্ট। সন্ধ্যার শেষে গ্রামের ল্যাম্পপোস্টগুলো জ্বলে উঠে। কিন্তু তার আলো চারদিকে ঠিকঠাক ছড়াচ্ছে না; ঘিরে আছে কুয়াশার ঘনঘটা। বেশ ভালোভাবেই আলো ঠেকাচ্ছে কুয়াশা।

টপটপ করে টিনের চালে শিশির বিন্দু পড়ার আওয়াজও বেশ জোরেশোরে কানে আসা শুরু করেছে। মাঝে মাঝে শোঁ শোঁ করে কয়েক ছটাক বাতাসও আসছে। এ বাতাস গরম তাড়িয়ে শীত নিয়ে আসে। বাতাসের গতিতে কুয়াশা পড়ার গতিও বেড়ে যায়।

শীতকালীন মাটি পোঁকারাও ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে। এটা তাদের বাৎসরিক চিল্লাচিল্লি করার সিজন। ইতোমধ্যে দলবল নিয়ে গর্তের মুখে এসে নিজেদের মেলে ধরা শুরু করছে তারা। নানা কৌশলে প্রকৃতিকে জানান দিচ্ছে তাদের উপস্থিতি। মারাত্মক ফাঁপর তাদের। এদিকে ছোট বাচ্চারা কখনো ক্ষিপ্ত হয়ে গর্তের মুখে পানি ঢেলে তাদেরকে মারতে উদ্যত হচ্ছে।

মধ্যরাতে শরীরের কাঁথা-কম্বলের প্রয়োজন- এমনটাই জানান দিচ্ছে কার্তিকের শীত। শরীরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গ্রামের বউ-ঝি’রা দলেদলে পুকুর ঘাটে কাঁথা কম্বল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। উঠানে উঠানে নতুন কাঁথা বানানো এবং পুরাতন কাঁথা জোড়াতালি দেওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে।

সকালে উঠানের ধারে দূর্বাঘাসের মাথায় শিশির কণা সূর্যের আলো পেয়ে ভালোই রূপের ছটা দেখাচ্ছে। একইভাবে রূপ দেখাচ্ছে শিশিরে টয়টুম্বর কৃষকের পরম যত্নে আগলে রাখা সবুজ ধানের ক্ষেত। খড় দিয়ে বানানো পুতুল সাদৃশ বস্তুর উপর ধবধবে সাদা আলখাল্লা জড়িয়ে রাখা কাকতাড়ুয়াগুলোও কুয়াশায় ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। ছোটছোট বাচ্চাদের সারাদিন শান্ত রাখতে মহিলারা সকাল সকাল এসে ধানক্ষেতের কাকতাড়ুয়াগুলো ব্যবহার করছে, ভড়কে দিচ্ছে তাদের।

কৃষক-কৃষাণীরা ফসলের মাঠে ভেজা মাটি হাতে নিয়ে সকালের সূচনা করে চলেছে। রাতের শেষবেলা থেকেই তারা দলবেঁধে মাঠে এসে শীতের সবজি উৎপাদনে নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখছে। কেউ মাটি টিপে শস্যদানা রোপণ করে আবার কেউ মুগুর দিয়ে মাটি পিটিয়ে সমান করে। কেউ আগাম উৎপাদন করা সবজি নিয়ে দোকান পাতে।

খেজুর গাছের মাথা থেকে টুংটুং আওয়াজ আসা শুরু করেছে। রস আহরণের জন্য খেজুর গাছকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। আর মেঠোপথ ধরে লেপ-কম্বলের কারিগররা মাথায় তুলার বোঝা নিয়ে হাঁকডাক দিয়ে গ্রাম চষে বেড়াচ্ছে। সবমিলিয়ে চিরচেনা রূপে ফুটে উঠতে শুরু করেছে মা-মাটি এ বাংলা।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়