ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

বিলম্বিত বর্ষা ও শরৎ বিলাস

ফয়সাল হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ১৮ অক্টোবর ২০২৩  
বিলম্বিত বর্ষা ও শরৎ বিলাস

কার্তিকের শুরুতে এসেও ক্ষণেক্ষণে বৃষ্টি। বৃষ্টি তো একেবারে জাতের বৃষ্টি; বেরসিক যাকে বলে। বৃষ্টির তোপে গাছের রতবল ভেঙ্গে সব এলোমেলো! ঢালপালা ঝুকে আছে নিছের দিকে। তবে বৃক্ষরাজি এবং তৃণাদি সমূহ টানা বৃষ্টির কল্যাণে সতেজ আর নির্মল সেজে উঠছে। তারা সতেজতার বাহারে রমরমা। বৈশাখের ধূলিবসন প্রকৃতিতে বৃষ্টি আসলে যেমনটা দেখায়।

ঘন দুপুরের শেষবেলা, প্রকৃতি ঠাণ্ডা এবং থমথমে। মাঝে মাঝে বাতাসের কয়েক ছটা এসে নাকে মুখে সংঘর্ষ বাঁধে এবং দেহের ভেতরেও ঢোকে একদম সুনিপুণে। অত্যন্ত নিরেট বস্তু এটি। ঝঞ্ঝাটের রেশমাত্র এতে নেই। এটি নির্মল এবং প্রশান্তিদায়ক। আদিখ্যেতার আধিক্যতা আর যাত্রিকতা বহির্ভূত এই বাতাস নিরেটর প্রশ্নে একদম দোষশূন্য।

আকাশ ধবধবে সাদা। আর তার নিছে একই রংয়ের বকের সারির সমাহার। এটি অদ্ভুত সুন্দরের উদ্রেককারী। সবে কার্তিকের প্রথম সপ্তাহ। তবে শীতের কিছুটা মধুর আধিপত্য এবং রেশ শরীর ভালোভাবেই গ্রহণ করতেছে। পথের ধারের বেশকিছু বারোমাসি কৃষ্ণচূড়া গাছে নিছে পড়ে যাওয়া আর গাছে টিকে থাকার লড়াইয়ে দোদুল্যমান অবস্থায় রক্ত রংয়ের ফুলের উপস্থিতি। আর তার শরীর চুঁইয়ে ফুলে ভেজা পানির ফোঁটা যেন মাঘ মাসের ঘন বনের মাঝখানের কোন কুয়োর পানি; যেখানে  সূর্যের দর্শন চাঁদের আমাবস্যার স্বরূপ বর্তায়। ঠাণ্ডা, খুব ঠাণ্ডা!

বৃষ্টির চোটে জমিনে সটান হয়ে বিছিয়ে পড়া কাশফুলের রাজ্যের উপর নগ্ন পায়ে প্রজাপতির পিছনে ভোঁ ছুটে স্বল্প সময়ের জন্য নিজেকে লিপ্ত আর শিশু জাহির করতে লজ্জা কীসের?

দূর্বাঘাসের উপর স্বচ্ছ পানি। তার উপরে ভেসে থাকা কাশফুলের ঘাড়ে পা দিয়ে ফুলের ছোঁয়া এবং পানির চলচল শব্দের ধ্বনির আয়োজনে আর উৎকণ্ঠার স্থান কীসে? অন্তরে লেপ্টে থাকা বিয়োগ আর বিস্বাদের দখল থেকে একফালি প্রশান্তির পরশ আর স্বাদের ফোয়ারা ছিনিয়ে এনে দহন আর যন্ত্রণাকে গোল্লায় পাঠিয়ে ছুটি দিবে আপনাকে।

গোধূলী লগ্নে মেঘেরা তীব্র গতিতে ছুটে যায়! যেন তাদের মুক্তি আর বাড়ি ফেরার খুব তাড়া! অন্ধকার  রংধনুকেও গায়েব করে অল্প সময়ের জন্য ঘোর নিকষ তমসা দিয়ে বিদায় নেয়। রংধনুর রং গায়েব হয়ে নিকোষ অন্ধকারে পরিপূর্ণ সন্ধ্যার ঠাঁই বেশিক্ষণ থাকেনি। কিছুক্ষণ পর দীর্ঘদিন পরে গোল হয়ে চাঁদের আবির্ভাব। রূপালী আলোর ঘনঘটায় নতুন তকমা লাগে অন্তরে।

বৃষ্টির দখল থেকে নিজেদের প্রাণ জিইয়ে রাখতে সক্ষম হওয়া কিছুসংখ্যক কাশফুলেরা মৃদু বাতাসে দোলা খায়। প্রজাপতিরা ঘরে ফিরছে আর জোনাকী পোকারা তাদের জায়গা দখল করে। রূপালী আলোয় বৃষ্টির পানিতে পা চুবিয়ে রেখে ফুল, চাঁদ আর জোনাকী পোকার দিকে পূর্ণ মনোযোগ।

আচমকা পিছন থেকে চা ওয়ালা  হাঁকডাক দিলো- এ মামা....  চা খাইবেন, চা? দারুণ আবহাওয়ায় দারুণ চা। মশলা দিয়া চা, ভালো পাতার চা।

এবার সবকিছু আরও জম্পেশ হলো, যাকে বলে জমে ক্ষীর!

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, তিতুমীর কলেজ

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়