ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের পূজা ভাবনা

অলংকার গুপ্তা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২১ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১০:৫৯, ২১ অক্টোবর ২০২৩
হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের পূজা ভাবনা

সনাতন হিন্দুধর্মের প্রকৃত নাম হিসেবে গণ্য করা হয়। সংস্কৃত এই শব্দবন্ধটির অর্থ হল 'চিরন্তন ধর্ম' বা 'চিরন্তন পন্থা'। এর অনুসারীগণ সনাতন ধর্মকে অপরিবর্তনশীল বলে মনে করেন। সমাতন ধর্মের ১২ মাসে ১৩ পার্বণের মধ্যে সবচেয়ে বড় শারদীয় দুর্গোৎসবের শুরু হয়েছে। পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবকে ঘিরে কি ভাবছেন উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। তাদের নানা পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন রাইজিংবিডির হাবিপ্রবি সংবাদদাতা অলংকার গুপ্তা

‘পূজার আনন্দ পরিবারেই’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পাঁচ দিনব্যাপী এই পুজাকে ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এক অন্যরকম উৎসাহ আনন্দ বিরাজ করছে। পূজার আনন্দ পরিবারের মধ্যেই বিদ্যামান। এছাড়াও অষ্টমী এবং নবমীতে বন্ধুদের সঙ্গে পূজা মণ্ডপে ঘুরে-ঘুরে প্রতিমা দর্শন করার অনুভূতি সবসময় অন্যরকম হয়। শুনেছি দিনাজপুরের আশেপাশে অনেক বড় আয়োজনে পূজা হচ্ছে। সব মণ্ডপ ঘুরে দেখার ইচ্ছা আছে। সবকিছু মিলিয়ে আশা করছি পূজা অনেক ভালো কাটবে।
- দিপু রায়, এমবিএ, মার্কেটিং বিভাগ।

‘ধর্মীয় আচারের সঙ্গে মিল রেখে অনুষ্ঠান করব’ 
ছোটবেলায় যেমন ঘুরতাম, দলবেঁধে ঠাকুর দেখতাম সেই আনন্দগুলো কমে গেছে। পূজায় অঞ্জলি দিব, মন্দিরে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানগুলোর সাথে মিল রেখে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করব। পরিবারের সঙ্গে মেলা দেখতে যাব। এসবেই পূজা আনন্দের। একই সঙ্গে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি যেন শক্তির আরাধনার মধ্যে দিয়ে অশুভ শক্তির নাশ হয় এবং শুভ শক্তির জাগরণ ঘটে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যেন সুন্দরভাবে নিরাপত্তার সঙ্গে পূজা করতে পারে এটাই চাওয়া একজন সনাতনী হিসেবে। সেই সঙ্গে সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা।
- প্রসেনজিত বিশ্বাস, মাস্টার্স, গণিত বিভাগ।

‘পূজায় নিরাপত্তার ভয় কাজ করে’
বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজাকে ঘিরে প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা পরিকল্পনা থাকে। তবে পূজা এলেই সনাতনীদের মাঝে নিরপত্তা নিয়ে ভয় কাজ করে। প্রতিবার পূজার সময় বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙ্গাসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে। এজন্য ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর সবাই একত্রিত হয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়াই হোক মহোৎসবের অন্যতম মাহাত্য। সেই সঙ্গে সবাইকে জানাই শারদীয়া প্রীতি ও শুভেচ্ছা। মায়ের কাছে সবার মঙ্গল কামনা করি।
- তুষার চন্দ্র রায়, ১৯ ব্যাচ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ।

‘দূর্গাপূজা দৈবশক্তি ও স্বার্থশক্তির পাঠ শেখায়’
দুর্গাপূজা বর্তমানে উৎসব আকারে পালন করা হলেও এর মধ্যে লুকায়িত আছে এক আধ্যাত্মিক সত্য। দৈবশক্তির সম্মিলিত রূপ দেবী দুর্গা স্বর্গরাজ্য দখলকারী মহিষাসুরকে বধ করে স্বর্গ পুনরুদ্ধার করার যে পৌরাণিক কাহিনি দেখতে পাই, সেখানেই এই সত্য চিত্রিত হয়েছে। বাস্তব জীবনেও তাই সর্বদা ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, ধর্ম-অধর্মের যুদ্ধ চলছে। আসুরিক শক্তি স্বার্থের কারণে সহজেই ঐক্যবদ্ধ  থাকে। তাই অধিকাংশ সময় দৈবশক্তির উপর বিজয় প্রাপ্ত হয়।

দুর্গাপূজার দ্বারা এই শিক্ষাই পাই, যেদিন দৈবশক্তি সর্বশক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হবে, সেদিনই আসুরিক শক্তির উপর বিজয় প্রাপ্ত হবে। একজন মানুষের মধ্যেও এই দুই প্রবৃত্তি রয়েছে। তাই বাহ্যিক জগৎ ও আত্মিক জগৎ উভয়ের ক্ষেত্রেই দৈবশক্তির বিজয় প্রাপ্ত হওয়াটা জরুরি। বর্তমান যুদ্ধে লিপ্ত বিশ্বের প্রেক্ষাপটে সর্বত্র এই দেবী মাহাত্ম্য প্রচার হওয়া জরুরি। তবেই যুদ্ধের পর শান্তি আসবে। সবাই কে দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
- মেধস কান্তি রায়, ১৯ ব্যাচ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ।

‘মহালয়ার আগের দিনে অ্যান্টেনা ঠিক করতাম’
পিতৃপক্ষের সমাপ্তির পর মাতৃপক্ষের সূচনা ঘটেছে। মহালয়ার এই পূর্ণ লগ্নে প্রতি বছরের ন্যায় চণ্ডীপাঠ শুনেছি। রেডিওতে বা টিভিতে নয়, ল্যাপটপে। শুনছি সেই চিরচেনা ব্যক্তি, শ্রী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে। হঠাৎ ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে ছোটবেলায়। মনে পড়ছে ছোটবেলার সেই মহালয়ার দিনগুলো। দিদি আর আমি, মহালয়ার আগের দিন রাতে বাবার সাহায্যে অ্যান্টেনা নাড়িয়ে ভারতীয় ন্যাশনাল চ্যানেল আমাদের সাদাকালো টিভিতে সংযোগ করতাম। পরদিন ভোর বেলায় মহালয়া দেখতে বা শুনতে কোন বাধার সৃষ্টি যাতে না হয়, সেজন্যই ছিল এতো আয়েঅজন। চণ্ডীপাঠ শেষ হতে হতে সূর্যোদয় হতো।

সমবয়সীদের সঙ্গে হাঁটতে বের হতাম। কিভাবে মা দেবী দুর্গা আবির্ভূত হলেন, কিভাবে মহিষাসুরকে বধ করলেন, এসব নিয়ে চলতো আড্ডা। কখনো কখনো তা তর্কের পর্যায়ে চলে যেতো। প্রযুক্তির এই যুগে হাতের মুঠোয় চলে এসেছে পুরো বিশ্ব। অনলাইনে সার্চ করলেই মুহূর্তের মধ্যে সব তথ্য, তথ্য সংক্রান্ত স্থিরচিত্র, চলচ্চিত্র পাওয়া সম্ভব। কিন্তু ফেলে আসা সেই ছোটবেলা আর পাওয়া সম্ভব নয়। দিনগুলো এখন মস্তিষ্কের কোনো একগুচ্ছ নিউরনের সংযোগস্থলে স্মৃতি হয়ে জমে আছে। 

জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে দূরে অবস্থান করছি। সবার পূজা ভালো কাটুক, মহাবিশ্বে শান্তি বজায় থাকুক। শুভ শারদীয়া।
- পার্থ সারথী সরকার, ২০ ব্যাচ, পরিসংখ্যান বিভাগ।

‘অঞ্জলি প্রণাম সিঁদুরেই পূজার আনন্দ’
নতুন জামা, খাওয়া-দাওয়া, মণ্ডপে ঘুরাঘুরি- সব মিলিয়ে পূজার আনন্দ অন্য রকম। পরিবারের সঙ্গে অঞ্জলি দিতে পারি, মা কে প্রণাম করতে পারি, দশমীতে সিঁদুর খেলতে পারি, মায়ের বিসর্জন দেখতে পারি- এতেই আমার পূজা সার্থক। নিজের এলাকার পূজা উদযাপন করবো। সব অশুভ শক্তির নাশ হোক, শুভ শক্তির উদয় হোক- এই প্রার্থনাই করি।
- সুমি রানী সরকার লতা, ১৯ ব্যাচ, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ। 

‘পঞ্চমী পর্যন্ত ক্লাস করেছি’
বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উৎসবগুলোর উপর থেকে আবেগ কমেছে। এটার যোগসূত্র পূজার সঙ্গেও রয়েছে। এবার ভার্সিটির ক্লাস করলাম পঞ্চমী পর্যন্ত। পূজোর কেনাকাটাও করেছি ক্লাস, ল্যাবের ফাঁকেই। এখন বাকি পরিবার ও আশেপাশের সবার সঙ্গে পূজার আনন্দ ভাগ করা। সবাই সুষ্ঠ সুন্দর উৎসব পালন করতে চায়। সনাতনীরাও সেটাই কামনা করে। আশা করি, পূজো মণ্ডপগুলো নিরাপদ থাকবে। সবার পূজা ভালো হোক।
- অনুরাধা রায়, ২০ ব্যাচ, কৃষি অনুষদ।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়