ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে একদিন

মো. ইয়াছিন আরাফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৯, ২১ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১৩:৫০, ২১ অক্টোবর ২০২৩
রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে একদিন

কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম একটি পর্যটনস্থল ‘রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী’। পদ্মার তীরবর্তী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এ কুঠিবাড়িটি কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নে অবস্থিত।

দীর্ঘদিন ক্লাস, টিউটোরিয়াল, অ্যাসাইনমেন্ট, ইনকোর্স, কোর্স পরীক্ষা দিতে দিতে যখন হাঁপিয়ে উঠছিলাম। ঠিক তখনই কুষ্টিয়া শহরে থাকা প্রিয় বন্ধুবর ফারুকের সঙ্গে চলে গেলাম বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কুটিবাড়ীটি দেখতে।

সফরের দিনটি ছিল গত ১৯ অক্টোবর, রোজ বৃহস্পতিবার। আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত শেখপাড়া বাজারের পাশে একটি আবাসিক এলাকায় থাকি। ওইদিন সকাল ৯টার সময় কুষ্টিয়া শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ক্যাম্পাসের বাসে এক রকম তড়িঘড়ি করে এসে উঠে পড়লাম।

দীর্ঘক্ষণ বাসে দাঁড়িয়ে থাকার পর কোন সিট ফাঁকা পেলাম না। বন্ধের দিন হওয়ায় ক্যাম্পাসের প্রায় সবাই একটু শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বের হয়েছে। তাই আর বাসের সিটে বসা হলো না। পুরোটা পথ দাঁড়িয়ে গেলাম। মনে মনে তখন অনেক আনন্দ কাজ করছিল, আজ বিশ্বকবির রেখে যাওয়া প্রাচীন বাড়িটি দেখবো। দীর্ঘ চল্লিশ মিনিট পর বাস থেকে নেমে পড়ি কুষ্টিয়ার চৌড়হাস বাসস্ট্যান্ডে।

সেখান থেকে অটোরিকশায় ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে চলে গেলাম লাহিনী বাজার। ওখানে বন্ধু ফারুক থাকে। কিছুক্ষণ তার জন্য অপেক্ষা করলাম। ফারুকের আসার পর শুরু হলো রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীর উদ্দেশ্য যাওয়ার আসল সফর। লাহিনী থেকে সিএনজি যোগে চলে গেলাম কুষ্টিয়ার গুরুত্বপূর্ণ আলাউদ্দিন নগরে। সেখান থেকে ২০ টাকা দিয়ে এবার ভ্যানে করে চলে যাই বহুল কাঙ্ক্ষিত সেই রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীতে।

কুটিবাড়ীতে প্রবেশের পূর্বে দুইজনে মিলে দেখে নিলাম সেখানে দেওয়ালে টাঙানো একটা প্রদর্শনী চার্ট। চার্টে টিকেটের মূল্যসহ আরও কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া ছিল।  চার্ট পড়ে বুঝতে পারলাম ভিতরে ঢুকতে অবশ্যই কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। ২০ টাকা দিয়ে আমি দুইটা প্রবেশ টিকেট সংগ্রহ করে নিলাম।

ভিতরে প্রবেশ করে অবাক হলাম সুন্দর মনোরম নয়ন জুড়ানো স্থাপনা দেখে। ধীরে ধীরে  দুইজনে সামনে হাঁটতে লাগলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর এবার চোখে পড়ল চারটা সুন্দর ভবন। যেগুলো কবি ঠাকুরের লিখিত কাব্যগ্রন্থ ও উপন্যাসের নামে নামকরণকৃত। গীতাঞ্জলি ভবনের সামনে গিয়ে দুজনে ক্যামরাবন্দী হয়ে গেলাম।

আরেকটু সামনে হাঁটার পর পৌঁছে গেলাম সেই কাঙ্ক্ষিত রবি ঠাকুরের কুঠিবাড়ীর ভিতরে। একে একে দেখতে শুরু করলাম কবির অসংখ্য স্মৃতি বিজড়িত প্রাচীন ছবির এলব্যাম। যে এলব্যামগুলো সমৃদ্ধ করা হয়েছে বিশ্বকবির বিভিন্ন ব্যবহৃত জিনিসপত্র দিয়ে। তার মধ্যে কয়েকটি হলো- তার ঘুমানো খাট, খাজনা আদায়ের চেয়ার টেবিল, পদ্মা নদীতে চলচল করা কাঠের নৌকা, হাত পালকি, আট ও ষোল বেহারার পালকি, হাতের লেখা ইংরেজি চিঠিপত্রসহ অসংখ্য কবিতা গানের খণ্ডিত অংশের দেয়ালিকা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কুঠিবাড়ীটি বিভিন্ন বাগান পুকুরসহ প্রায় ১৬ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। বাড়ীটিতে ছোটবড় ১৫টি কক্ষ রয়েছে। নিচতলা ও দোতলার উন্মুক্ত ব্যালকনিগুলি রাণীগঞ্জ টালি দিয়ে তৈরি ঢালু ছাদ দ্বারা আংশিক আচ্ছাদিত। নিচতলার উপরের মধ্যবর্তী অংশে রয়েছে ত্রিকোণ প্রান্তবিশিষ্ট একটি ঢালু ছাদ।দোতলার উপরের পিরামিড আকৃতির ছাদ ভবনটিকে আরও বৈচিত্র্য এনে দিয়েছে।

১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইল সূত্রে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এ জমিদারির মালিক হন। কবিগুরু জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে প্রথম শিলাইদহে আসেন ১৮৮৯ সালের নভেম্বর মাসে। তার নাগরিক কবি থেকে মাটি ও মানুষের কবি হয়ে উঠার পিছনে এই কুঠিবাড়ী তথা শিলাইদহ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ বাড়িতে বসেই তিনি ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারি পরিচালনা করেন। এখানেই বসে তিনি রচনা করেন বিখ্যাত সব কাব্যগ্রন্থ, গান, নাটক ও উপন্যাস। তার মধ্যে সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী, গীতাঞ্জলি অন্যতম।

ঐতিহাসিক এই কুটিবাড়ীর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে দেশের বিখ্যাত পদ্মা নদী। এই নদীতে কবিগুরু নৌকায় চলাচল করতেন। তিনি তার যৌবনকালের উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছেন এখানে। রবীন্দ্র প্রেমীরা এখানে এসে কবির স্পর্শ পেতে চেষ্টা করেন।

এই বাড়িটি পর্যটন আকর্ষণের পাশাপাশি রবীন্দ্র চর্চার জন্য গবেষকদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আমরা দুই বন্ধু বাড়িটার চতুর্পাশ ঘুরে ঘুরে দেখলাম আর সুন্দর সুন্দর দৃশ্যগুলো মোবাইলের ক্যামরাবন্দী করলাম। তারপর কুটিবাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়লাম। আর এরই মধ্য দিয়ে আমাদের বহুল স্মৃতি বিজড়িত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীর সফরটি খুব আনন্দঘন পরিবেশে শেষ হলো।

লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া।

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়