ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মনরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া জরুরি

নাঈমুল ফারাবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ৪ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৩:০৭, ৪ নভেম্বর ২০২৩
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মনরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া জরুরি

দেশের অবস্থা আজ এমন অবস্থানে দাঁড়িয়েছে যে, কিছুদিন পরপরই খবরের কাগজ উল্টালে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর মিলে। এ ব্যাপারটি এতো বেশি ঘটেছে যে, আত্মহত্যার খবরগুলো আমাদের নিকটও স্বাভাবিক হয়ে উঠছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে আত্মহত্যার খবরগুলো খুবই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। আমরাও এতোটা অভ্যস্ত হয়েছি যে, সকালে কারও আত্মহত্যার খবর দেখলে বিকালে তা ভুলে যাই। আমরা ধরেই নিচ্ছি কিছু মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নিবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছুদিন আগেও এই সম্পর্কিত ঘটনাগুলো ছিল বিরল।

বর্তমানে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বসবাস করছি। প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের জীবন-যাপনে নানা পরিবর্তন এসেছে। তরুণরা ভার্চুয়াল জগতেই বেশি সময় দিচ্ছে। আমরা সবাই এখন ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারকারী। ফলে অনলাইন জগতের সঙ্গে আমাদের জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। মানসিক সমস্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে ঘরকুনো হয়ে থাকা।

তাছাড়াও আত্মহত্যার খবরগুলো আমরা এখন যেভাবে খুব সহজেই দেখতে পারছি, কিছুকাল আগেও তা সহজে দৃষ্টিগোচর হতো না। ফলে মানুষের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। কারণ একটি পরিচিত বিষয়ের মুখোমুখি হতে আপনি অপেক্ষাকৃত কম জটিলতার সম্মুখীন হবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একজন শিক্ষার্থীকে নানা চড়াই-উৎরাই এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রেমে ব্যর্থতা, যৌন হয়রানি, পরীক্ষায় ব্যর্থতা, ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা, নির্যাতনের স্বীকার ইত্যাদি কারণে নিজের প্রতি ঘৃণাবোধ জন্ম নেওয়া ও চরম হতাশা বর্তমানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর নিত্য দিনের সঙ্গী। বেশিরভাগ সময় এসব শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় মানসিক সাহায্য পায় না।

মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থ্যের তুলনায় কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। একজন মানুষের শরীর ও মন দুটোরই সুস্থতা প্রয়োজন। কিন্তু শারীরিক সুস্থতাকে আমরা যতটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবি, মানসিক স্বাস্থ্যকে ততটাই অবহেলা করি। আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার পরিবেশটা এখনো প্রতিকূলে। কেউ মানসিক সেবা নিতে চাইলে আমরা হরহামেশাই তাদের পাগল বলে সম্বোধন করি। একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটি ঘনঘন আত্মহত্যার ঘটনাগুলো দেখেই বোঝার কথা।

একটি জাতিকে রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তার জন্য সচেতন মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। যে কোনো দেশে এক সঙ্গে অনেক সচেতন মানুষের বসবাস থাকলে, ওই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবার প্রথমে অবস্থান করবে। আমাদের ক্ষেত্রেও একই নীতি। তাই আমাদের জাতিকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে অভ্যস্ত করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগে নিশ্চিত করতে হবে।

এভাবেই কালের পরিক্রমায় আমাদের সমাজ থেকে মানসিক সমস্যা মানেই পাগল হয়ে যাওয়ার কুসংস্কার বিলুপ্ত করা সম্ভব। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানুষগুলো সমাজেরই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আজকের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনে সমাজের প্রতিটি স্তরে নেতৃত্ব দিবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যদিও আত্মহননের ঘটনা বেশি ঘটছে, এর সমাধানও এখানেই আছে। যেকোনো সমস্যার সমাধান খুঁজতে তার উৎপত্তিস্থল অত্যন্ত কার্যকরী।

এতো ঘটনার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে কেনো মনরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না, তা ভাবনার বিষয়। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই শারীরিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র আছে। একই চিকিৎসা কেন্দ্রে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে একটি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া খুব একটা কঠিন কাজ নয়। আর মনরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। পাশাপাশি চরম হতাশার সময় নিজের আশ্রয়স্থল খুঁজে পাবে।

তাই ইউজিসিসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আস্থা রাখছি, অতি সত্বর মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অকালমৃত্যু থেকে রক্ষা করবেন।

-লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া এবং সহযোগী সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
 

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়