ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

সাংবাদিক সংগঠন যেন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি না হয়

মিনহাজুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ৫ নভেম্বর ২০২৩  
সাংবাদিক সংগঠন যেন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি না হয়

গণমাধ্যম হচ্ছে সংগৃহীত সব ধরনের মাধ্যম, যা গণসংযোগ কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেসব মাধ্যমে জনগণের কাছে সংবাদ, মতামত ও বিনোদন পৌঁছানো বা পরিবেশন করা হয় তাকে গণমাধ্যম বলে। গণমাধ্যম হচ্ছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, যা দর্পণস্বরূপ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য অপরিহার্য। আমরা আমাদের দেশের গণমাধ্যমকে কতটা সুরক্ষিত রাখতে পেরেছি?

রাজনীতির কষাঘাতে আমাদের দেশের গণমাধ্যম অনেকাংশেই অবহেলিত। মফস্বলে যারা কাজ করেন, তারা অনেকাংশেই লাঞ্ছিত হন। এমন ঘটনা আমরা প্রায়ই পত্রিকার পাতায় দেখতে পাই। গণমাধ্যমকে শ্বাসরুদ্ধ করতে অনেকের জীবনও নেওয়া হয়েছে। জাতি তাদের আত্মত্যাগকে গভীরভাবে স্মরণ করে।

যারা গণমাধ্যমে কাজ করেন তাদের সাংবাদিক নামে অভিহিত করা হয়। সাংবাদিকদের একমাত্র আশ্রয়স্থল 'প্রেস ক্লাব' নামের সামাজিক সংগঠন। মফস্বল থেকে শহর সব জায়গায় সাংবাদিকদের একত্রিত হওয়া এবং অধিকার রক্ষার আশ্রয়স্থল প্রেস ক্লাব। আমাদের হীনমন্য রাজনীতির কারণে অনেক ক্লাব তার গতি হারিয়েছে, ধ্বংস হয়েছে, বন্ধ হয়েছে। এর প্রভাব শুধু একটি প্রেস ক্লাবে পড়ে না, বরং পড়ে গণমাধ্যমের উপরই।

উদাহরণ হিসেবে গাজীপুরের গাছা প্রেস ক্লাবের তালা ঝুলানোর ঘটনা বলা যেতে পারে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন অভিযান চালিয়ে গত ১ অক্টোবর প্রেস ক্লাবটি সিলগালা করে দেয়। কারণ হিসেবে দেখানো হয়, সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি একটি কক্ষ ব্যবহার করা।

সচেতন মহলের কাছে প্রশ্ন, সরকারি সম্পত্তি কাদের কল্যাণের ব্যবহৃত হবে? প্রেস ক্লাব কি কোনো ব্যক্তিগত সংগঠন? একটি প্রেস ক্লাব পুরো একটি জেলার স্বার্থে কাজ করে। পুরো একটি জেলার খবর ওই ক্লাবের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়। শুধু একটি কক্ষ ব্যবহার করে সরকারি সম্পত্তির কতটুকু ক্ষতি করা হয়েছে?

প্রেস ক্লাবটির নবনির্বাচিত সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন ওই এলাকার সাবেক কাউন্সিলর। মূলত এই কমিটিগত দ্বন্দ্বই ছিল ক্লাবে তালা ঝোলানোর প্রকৃত কারণ।

এলাকার জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, প্রেস ক্লাবের এ কক্ষটি এক সময় ময়লার স্তুপ ছিল। এই কক্ষটি কেউ কখনো ব্যবহার করেনি। ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম মজিবুর স্যার নিজেও কক্ষের নোংড়া পানি অপসারণ করেছেন। ক্লাবের সদস্যরাও অনেক ত্যাগ স্বীকার করে তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন ক্লাবটি। ২০১৬ সাল থেকে গাছা প্রেস ক্লাব নাম নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল সংগঠনটি। এভাবে বন্ধ করায় এলাকাবাসীসহ অনেক গণমাধ্যম কর্মীরাও নিন্দা জানিয়েছেন।

প্রেস ক্লাবটি বন্ধ করা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের মোটেও উচিত হয়নি। রাজনৈতিক কোন্দল যদি থেকেই থাকে, তাহলে কমিটি বিলুপ্ত করতে পারত। পুরো প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার প্রয়োজন ছিল না। অনেক সাংবাদিক তাদের গতি হারিয়েছে, হারিয়েছে একটি আশ্রয়স্থল। নিঃসন্দেহে বলা যায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অবরুদ্ধ করার মত একটি গর্হিত ঘটনা এটি। সরকারের উচিত মফস্বল পর্যায়ের সমস্ত প্রেস ক্লাব সরকারিভাবে রেজিস্ট্রেশন করা এবং তাদের পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে কর্তৃপক্ষ নিযুক্ত করা। দেশের কোনো প্রেস ক্লাব যেন এমন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে তালা না ঝোলে।

-লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়