ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

হাজারো স্বপ্ন ফেরি করে নীল-সাদা লজ্জাবতী

আল মাহমুদ বিজয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৯, ৭ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১২:১৮, ৭ নভেম্বর ২০২৩
হাজারো স্বপ্ন ফেরি করে নীল-সাদা লজ্জাবতী

প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত রাজশাহী  বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়নি এমন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মতিহারের এই সবুজ চত্বর যেন একটি বাগানের মতো। এ বাগানের প্রতিটি ইঞ্চি মাটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের রয়েছে বুকভরা গল্প। তাদের গর্ব ও অহংকারের একটি অংশ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল-সাদা বাস। বাসগুলো যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীদের এক একটি আবেগ।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জোহা চত্বর, বুদ্ধিজীবী চত্বরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুতেই হাজারো শিক্ষার্থীদের প্রেম ও ভালোবাসা জড়িত। তাই তো অনেক শিক্ষার্থীই বলেন, সৌন্দর্যের দিক দিয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রাবির অবস্থান সবার উপরে। বিশ্ববিদ্যালয়টির এরূপ নান্দনিকতাকে পরিপূর্ণ করেছে নীল-সাদা বাস। পরিবহণ চত্বরে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলোর দিকে তাকালেই মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার সার্থকতা এখানেই।

রাবি পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণের ঝুলিতে এখন বাস আছে ৩০টা। তবে চালক সংকটের কারণে ১৪টি রোডে চলে ২২টি নীল-সাদা বাস। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে ক্যাম্পাস থেকে সংশ্লিষ্ট রুটগুলোতে ছেড়ে যায় একে একে ২২টি নীল-সাদা বাস। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরও ৩টা ট্রিপ যায়।

সকালবেলা বাসগুলো যখন ছেড়ে যায়, তখন যেন এক অন্যরকম সৌন্দর্য। নীল সাদা বাসগুলোর অবিরাম গতিতে ছুটে চলা যেন আকাশের সৌন্দর্যের সঙ্গে মিশে যায়। ক্যাম্পাসে সারিতে সারিতে অবস্থানকালে নীল-সাদার প্রতি শিক্ষার্থীদের রয়েছে প্রেমাবেগ, আড্ডা এবং সেলফি তোলার দৃশ্য। ক্লাস না থাকলে শিক্ষার্থীরা অবসর সময়কে আনন্দময় করতে আসে নীল-সাদা লজ্জাবতীর সঙ্গে। তাইতো নীল-সাদা এই রূপসীদের কেন্দ্র করে রয়েছে হাজারো শিক্ষার্থীদের আবেগ, ভালোবাসা এবং রোমাঞ্চকর মুহূর্ত।

নীল-সাদা এই লজ্জাবতীর প্রতি প্রথম আবেগের কথা বলতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী জেসিয়া আলম যুথি বলেন, 'অপূর্ব রূপে নান্দনিকতাকে পরিপূর্ণ করতে সৌন্দর্যের স্বর্গে আবির্ভূত যেন রাবির নীল-সাদা বাসগুলো। রাজশাহী শহরের আনাচে কানাচে হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ফেরি করে রাবির একঝাঁক নীল সাদা বাস। রাবিতে চান্স পাবার অন্যতম প্রেরণা এই নীল-সাদা বাসগুলো। সারি সারি নীল-সাদা বাসগুলো পরিবহণ চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকে অদম্য স্পৃহায়। প্রতিটি বাস ঘিরে রয়েছে হাজারো শিক্ষার্থীর গল্প, গান, আড্ডা, যাত্রাসহ অসংখ্য স্মৃতি। বাসগুলো যেন ধারণ করে চলেছে নব নব স্মৃতির রোমাঞ্চকর আবেগ, অনুভূতি আর প্রেমাবেগ।'

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী হাফসা আক্তার বলেন, 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনলেই শিক্ষার্থীদের মনে ভেসে ওঠে নীল-সাদা বাস। এ এক আলাদা উপাখ্যান। নীল ভালোবাসার রং আর নীল-সাদার মিশ্রণ মানেই মনে আসে এক অন্যরকম নরম কোমল অনুভূতি। ছাত্র-ছাত্রীরা স্বভাবতই একেকজন বিচিত্র স্বপ্নকুঁড়ি। তাদের চোখে নিজের ভার্সিটির সারি সারি এমন শোভনীয়, স্বপ্নীল রঙের বাস ধরা দেয় স্বপ্নপূরণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে।

তিনি আরও বলেন, রাবির প্রতিটি ভবন ও এখানকার আকাশ মাটির মাঝে নীল-সাদা বাস দাঁড়িয়ে থাকে স্বগর্বে তার স্বতন্ত্র মহিমায়। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই বাসের একটি সিট দখল করতে পেরে নিজেরা হয় ধন্য আর ঝাঁকে ঝাঁকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বয়ে নিয়ে নীল-সাদা বাস হয় পরিপূর্ণ। নীল-সাদা বাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনন্য সৌন্দর্যের প্রতীক। দেশের আনাচে কানাচে বিদ্যমান লাখো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নীল-সাদা বাসকে ঘিরেই।'

ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'যখনই নীল-সাদা বাসগুলোর উপর আমার দৃষ্টি পড়ে, তখনই মনে পড়ে এটিই তো আমার প্রথম প্রেমের গল্প। বাসগুলো পরিবহণ চত্বরে সারি সারি হয়ে থাকে যেন লজ্জাবতী লতার মতো। লজ্জাবতীগুলো আমার গল্প, গান, আড্ডা, যাত্রা স্মৃতির গল্প হয়ে চিরকাল থাকবে। বাসগুলোর অবিরাম গতিতে ছুটে চলা, যেন ভেসে যায় আকাশে নীল-সাদা মেঘের ভেলা। ফির ফিরে বাতাসে কপালের এলোচুলের উড়া, হৃদয়ে দেয় যেন প্রেমের দোলা। বাসগুলোর স্নিগ্ধ ছায়ায়, জীবনের রঙিন মুহুর্তগুলো হয়ে ওঠে আনন্দময়। তাইতো নীল-সাদা বাসগুলো প্রতিটি শিক্ষার্থীর আবেগ, অনুভূতি ভালোবাসা।'

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়