ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

অবসরে গেলেন জাবির ইউআরপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি

জাবি সংবাদদাতা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৯, ১১ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১২:০৩, ১১ নভেম্বর ২০২৩
অবসরে গেলেন জাবির ইউআরপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একে একে কাটালেন জীবনের সুদীর্ঘ ৩৭ টি বছর। এ দীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনে তিনি অসংখ্য শিক্ষার্থীকে তৈরি করেছেন জ্ঞানের এক একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে। নিজের মেধা, শ্রম ও গবেষণা দিয়ে ঋদ্ধ করেছেন জাতিকে। অবশেষে বেজে উঠলো বিদায়ের ঘন্টা। শিক্ষকতার এ দীর্ঘ কর্মচঞ্চল জীবনের সমাপ্তি টেনে গত বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) জাবির নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম আবুল কালাম আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণ করেন।

জহির রায়হান মিলনায়তনে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আনিসা নূরী কাঁকনের সভাপতিত্বে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অধ্যাপক ড. কালামকে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের সমৃদ্ধিতে অধ্যাপক একেএম আবুল কালামের অবদানের কথা স্মরণ করে অধ্যাপক ড. কাশফিয়া নাহরিন মানপত্র পাঠ করেন।

ড. কালামের বর্ণাঢ্য শিক্ষকতা জীবনের পথচলা শুরু হয় ১৯৮৬ সালের ১২ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ১০ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০০৬ সালের ২৬ নভেম্বর অত্র বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা শুরু করেন। ওই বছরই ২৯ ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত পুনরায় বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি পোস্ট ডক্টরাল গবেষণার জন্য যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডার বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গমন করেন।

এছাড়া তিনি প্রাধ্যক্ষ, প্রাধ্যক্ষ কমিটির চেয়ারম্যান, জাবি শিক্ষক সমিতির প্রধান নির্বাচন কমিশনার, জাকসু নির্বাচন কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প কমিটির আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলা সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তার দীপ্ত পদচারণা রয়েছে। বাংলাদেশের পরিকল্পনা পেশার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বিআইপি’তে দুইবার সাধারণ সম্পাদক এবং দুইবার প্রেসিডেন্ট এবং উপদেষ্টা কাউন্সিলের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজউক, এলজিইডিসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট কাজে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও বংলাদেশ ডেল্টা প্লানের এক্সপার্ট প্যানেল মেম্বার হিসেবে সুনামের সাথে কাজ করেছেন। তিনি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন কমিটিতে ছিলেন এবং এখনও আছেন।

বিদায়ী অধ্যাপক ড. কালামের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতি রোমন্থনে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোঃ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ড. কালামের পাঠদান পদ্ধতি, ন্যায়-নিষ্ঠতা এবং ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে তাঁর আচার-আচরণ সবার জন্যই আদর্শ। জাবির ইউআরপি বিভাগের উত্তরোত্তর উন্নতির পেছনে স্যারের অবদান কখনোই ভোলার নয়।

তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বশির আহমেদ বলেন, একসঙ্গেই অনেকগুলো বছর সহকর্মী হিসেবে একই অনুষদে পাঠদান‌ করেছি। তার সুচিন্তিত দিক নির্দেশনায় অনেক শিক্ষার্থী তার ব্যক্তি জীবনে উৎকর্ষ লাভ করেছে এবং দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আমি তার সুন্দর অবসর জীবন কামনা করছি।

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আনিসা নূরী কাঁকন বলেন, ব্যক্তিজীবনে ড. কালাম একজন নিপাট ভদ্রলোক হিসেবে তার ক্লিন একটি ইমেজ তৈরি করেছেন। শিক্ষার্থীরা যেমন তার বাস্তব অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছে, আমরা তার সহকর্মীরাও সমানভাবে উপকৃত হয়েছি। ইউআরপি বিভাগ তার অবদান সবসময় শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

এছাড়াও অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন, অধ্যাপক শফিক উর রহমান, অধ্যাপক ড. হালিমা বেগমসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ ড. কালামের সঙ্গে তাদের চমৎকার সব স্মৃতি তুলে ধরেন।

শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত এই সদ্য বিদায়ী প্রবীণ শিক্ষক ড. কালাম বলেন, জীবনের অনেকগুলো বসন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাটিয়েছি। শিক্ষার্থীদের সবসময় পড়াশোনার পাশাপাশি ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে উদ্বুদ্ধ করেছি। আমার দীর্ঘ এ কর্মময় জীবনে কোনো ধরনের ভুলত্রুটি করে থাকলে সবার কাছ আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বাকি জীবন শিক্ষকতা জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করেই কাটিয়ে দিতে চাই।

/আহসান/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়