ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

কিশোর অপরাধ: সমস্যা ও সমাধান

শামছুন্নাহার ঋতু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ১১ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৩:৪৪, ১১ নভেম্বর ২০২৩
কিশোর অপরাধ: সমস্যা ও সমাধান

বর্তমান বিশ্বে কিশোর অপরাধ অনেক জটিল একটি বিষয়। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই কিশোর অপরাধ  কমবেশি ঘটে থাকে এবং ক্রমাগত এটি বেড়েই চলেছে। তবে কিশোর অপরাধ ঘটার কারণ চিহ্নিতকরণ এবং প্রতিরোধ বা প্রতিকার নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে নেওয়া হয় না। কিশোর অপরাধ সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য তুলে ধরা হলো।

কিশোর অপরাধ কী?  সাধারণ কিশোর বা কিশোরীদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধকে কিশোর অপরাধ বলে বিবেচনা করা হয়। ইংরেজিতে একে জুভেনিল অফেনস বলা হয়। যেসব কিশোর কিশোরী এসব অপরাধ করে তাদের জুভেনিল অফেনডার বলা হয়।

প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, কিশোর বা কিশোরী কারা? কিশোর-কিশোরী সম্পর্কে বিভিন্ন আইনে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়েছে। দ্য মেজরিটি অ্যাক্ট, ১৯৭৫-এ বলা আছে ১৮ বছর বয়সী ছেলেমেয়ে সাবালক বা সাবালিকা। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন,১৯২৯ অনুযায়ী পুরুষ হলে ২১ বছরের নিচে এবং মহিলা হলে ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু।

শিশু আইন, ২০১৩-তে বলা আছে অনুর্ধ ১৮ বছর বয়সের সব ব্যক্তিই শিশু বলে গণ্য হবে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী ১৪ বছর অতিক্রম করেছে, কিন্তু ১৮ বছর অতিক্রম করেনি এমন ব্যক্তি শিশু হিসেবে বিবেচিত হবে। দন্ডবিধি, ১৮৬০ অনুযায়ী ৯-১২ বছর বয়সী ব্যক্তিরা শিশু। আবার সংবিধানে ১৮ বছর বয়সী ছেলেমেয়েকে প্রাপ্তবয়স্ক বিবেচনা করা হয় এবং তাদের ভোটাধিকার দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে ১২-২০ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা শিশু হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ ১২-১৬ বছর বয়সী এবং ক্ষেত্রবিশেষে ৯-১৬ বছর বয়সী ব্যক্তি কর্তৃক সংঘটিত অপরাধই কিশোর অপরাধ।

কিশোর অপরাধের কারণ কী? কিশোর অপরাধের কারণকে আমরা বেশকিছু ক্ষেত্রে ভাগ করতে পারি। যেমন- পরিবেশগত, বংশগত, মনস্তাত্বিক, শিক্ষাগত, ধর্মীয় ইত্যাদি। সব ক্ষেত্রকে একত্রিত করে কিছু কারণ তুলে ধরছি-

১. শিশুর বেড়ে ওঠার ওপর পরিবেশের একটি বড় প্রভাব তৈরি হয়। যদি অপরাধ সংক্রান্ত এমন কোন পরিবেশে শিশু বড় হয়, তবে সে ছোট থেকেই এসব অপরাধ বিষয়ে আগ্রহী হবে।

২. পরিবারে বাবা মায়ের বিচ্ছেদ বা ঝগরা কলহ দেখলেও শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

৩. পরিবার বা বংশে কেউ অপরাধে জড়িত থাকলে শিশুর মনে এর প্রভাব পড়ে।

৪. নৈতিকতা ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাব থাকলে।

৫. অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশার কারণে।

৬. আইনে শিশু অপরাধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক তেমন কোন শাস্তির বিধান না থাকা।

৭. যেসব শিশু পরিবার দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেশি।

৮.দারিদ্র্য শিশু অপরাধের অন্যতম মূল কারণ। দারিদ্র্যের কারণে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে শুরু করে চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হয় এবং একটা সময় শিশুরা নিজেরাও অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

৯.বর্তমান যুগ ডিজিটালাইজেশনের। মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেও শিশুরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

শিশু অপরাধ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। বিশেষ করে শহর এলাকায় এর প্রবণতা বেশি। আবার এই অপরাধ দমনের জন্য যথোপযুক্ত কোনো আইন তৈরি করা হয়নি। তবে কিছু সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে এই অপরাধগুলো কমিয়ে আনা সম্ভব। এর সমাধান হিসেবে দুটি ক্ষেত্র তুলে ধরতে পারি। তা হলো- প্রতিরোধ ও প্রতিকার মূলক।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

শিশু পরিবার থেকেই প্রথম শিক্ষা নেয়। তাই শিশুর ওপর যাতে নেতিবাচক কোনো প্রভাব না পড়ে, সেদিকে অবশ্যই বাবা মায়ের খেয়াল রাখতে হবে। শিশু কাদের সঙ্গে মিশছে, সেদিকেও নজর দিতে হবে। নৈতিক শিক্ষা দেওয়া বাঞ্ছনীয়। মোবাইল ফোন ইন্টারনেট বয়বহার থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। ব্যবহারের অনুমতি দিলেও তারা আসলে কী কাজে ইনৃটারনেট বা ফোন ব্যবহার করছে, সেগুলোতে নজর রাখতে হবে। শিশুদের সঙ্গে সব সময় নমনীয় আচরণ করতে হবে, যাতে তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। 

প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা

শিশুদের অপরাধের শাস্তি দেবার জন্য যথেষ্ট কোনো আইন তৈরি হয়নি। সব আইনে শিশুদের বড় ধরনের শাস্তি মওকুফ করা হয়েছে। শিশু আইনে শিশু আদালত প্রতিষ্ঠার কথা বলা থাকলেও আদালতে শিশুদের কোনো প্রকার শাস্তি দেয়া হয় না। যদিও শিশুরা অপরাধ এবং এর ফলাফল সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না, তবুও প্রতিকার হিসেবে শিশুদের অপরাধের জন্য ন্যূনতম শাস্তির বিধান করা উচিত বলে মনে করি। শিশু অপরাধীদের জন্য সংশোধনের ব্যবস্থা যেমন কিশোর হাজত, প্রশিক্ষণ, প্রবেশন এবং প্যারোলসহ সংশোধনীমূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।

পরিশেষে একটি কথাই থেকে যায়, প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে উত্তম। একজন কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়লে তার সঙ্গে আরও ১০ জন অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। তাই ১০ জনকে রক্ষা করতে একজনকে প্রতিরোধ করাই উত্তম এবং বেশি ফলপ্রসু হবে। শিশু অপরাধ বিষয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করি।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়