ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

বিতর্ক নিয়েই হতে যাচ্ছে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২২, ১২ নভেম্বর ২০২৩  
বিতর্ক নিয়েই হতে যাচ্ছে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি

কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার জন্য প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কুমিল্লা জেলা দক্ষিণের নতুন ওই কমিটিতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র ভঙ্গের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে বলে জোর গুঞ্জন উঠেছে। জেলা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের মদদে কমিটিতে একাধিক বিবাহিতসহ কোনো কোনো প্রার্থীর বয়স জালিয়াতিরও অভিযোগ উঠেছে।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদসহ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতার জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন কর্মীরা। দু’একদিনের মধ্যেই নতুন কমিটি ঘোষণাও দেয়া হবে বলে খবর মিলেছে।

কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১৪ সালে। দীর্ঘ আট বছর পর ২০২২ সালে সেই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় জেলা ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সেখানে প্রার্থিতা করেন মোট ৪৩ জন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, গেলো সপ্তাহে কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং মুজিবুল হক স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে দুই ছাত্রনেতার নাম উল্লেখ করে তাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে প্রেরণ করা হয়।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনোনীত ওই দুই প্রার্থীর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত মিনহাদুল ইসলাম ওরফে রাফি বিবাহিত। যার বিবাহের প্রমাণপত্র স্বরূপ কাবিননামা ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া যে সব প্রার্থীরা পদ বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা করছেন, কাবিননামার সেই কপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নিকট তারা ইতিমধ্যেই পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী রাফির সেই কাবিননামায় সাক্ষী হিসেবে রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের ভাতিজা ও লালমাই উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শাহীনের স্বাক্ষর।

এছাড়া যারা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে বিবাহিত ছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স জালিয়াতিরও প্রমাণ মিলেছে। এম রুবেলে হোসেন নামে এক সভাপতি প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ ২৫-১০-১৯৯২ থাকলেও পদ পেতে জীবন বৃত্তান্তে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে যে বৃত্তান্ত তিনি পাঠিয়েছেন, সেখানে সিভি এবং মার্কশীটে বয়স জালিয়াতি করে ২৬-১০-১৯৯৩ সাল দেখানো হয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে চোৱাই মোটরসাইকেল ব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় সম্পৃক্ততা এবং নারী কেলেঙ্কারীর সঙ্গে জড়িত থাকার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

একই পদ প্রত্যাশী ইসমাইল হোসেন মোল্লা নামে অপর এক প্রার্থীও বিবাহিত। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ ০২-০১-১৯৮৯ ( বর্তমানে ৩৪ বছর বয়স)। বর্তমানে তিনি ২ সন্তানের জনক এবং স্ত্রী জেসমিন আক্তার কলি পেশায় একজন শিক্ষিকা (লাকসাম জিলা হাই স্কুল)।

আসন্ন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী কাজী শিহাব শুভ পেশায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদার। মেসার্স শিহাব এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তিনি। জেলায় কোথাও দলীয় কোনো পদ না থাকলেও তিনি সিভিতে বিভিন্ন সময়ের দলীয় পদের কথা উল্লেখ করেছেন।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ মাহমুদ বলেন, বিবাহিত কিংবা বয়স শেষ এমন কারও কমিটিতে আসার নিয়ম নেই। তবে বয়সের বেপারটি যদি এমন হয় যে করোনার কারণে কিংবা অন্য কোনো কারণে কমিটি হতে বিলম্ব হচ্ছে, তখন কেন্দ্রীয় কমিটি বিবেচনা করতে পারে।  তবে ছাত্রলীগে নিয়মের বাইরে গিয়ে বিতর্কে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

/রুবেল/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়