ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

৫৭টি বসন্ত পেরিয়েছে শাটল ক্যাম্পাস

চবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ১৯ নভেম্বর ২০২৩  
৫৭টি বসন্ত পেরিয়েছে শাটল ক্যাম্পাস

পাহাড়ি অরণ্যে মোড়ানো এক বর্ণিল ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের বৃহত্তর এ শিক্ষাঙ্গনটি ৫৭ টি বসন্ত পেরিয়েছে। গতকাল শনিবার (১৮ নভেম্বর) ছিলো এর ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। মায়া আর বন্ধনে অটুট এক সম্বন্ধ গড়ে দিয়েছে মানুষ প্রকৃতির মাঝে।

প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে পাহাড়ের নির্জনতায় গড়ে উঠেছে ব্যস্ত এক জনপদ। ২৩০০ একরের বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন কোনো কবির ছন্দে আঁকা প্রকৃতির নৈসর্গিক ছবি। পাহাড়,  গিরিপথ, ঝর্ণা আর এর ওপর ইট-পাথরে গড়া স্থাপত্যের আধুনিক ছোঁয়া, কল্পনার এমন দৃশ্যপট যেন বাস্তব হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। গ্রীষ্ম থেকে বসন্ত হাজারো বৃক্ষ গুল্মের পত্র ঝরে এখানে। ঋতু পরিবর্তনের সৌন্দর্যের এক নিদারুণ অনুভূতি হয়ে ধরা দেয় এই আঙিনায়।

শত প্রজাতির গাছ গুল্ম লতা, শরৎ হেমন্তেও ফোটে হরেক রঙের বাহারি ফুল। বলা যেতে পারে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন প্রকৃতি নিজ মহিমায় সাজিয়েছে।  কর্মমুখর ব্যস্ততার মাঝে যেখানে পাহাড় বেয়ে নেমে আসে বুনো মোরগ, বুনো শুকর। পাহাড়ি ঢলে ভেসে আসে বিশাল অজগর। কাটা পাহাড় রাস্তায় কখনো দেখা মেলে ডাগর চোখের মায়া হরিণ। বানরের দুষ্টমি আর এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে বেড়ানো কাঠবিড়ালির দূরন্তপনা দেখা যায় হরহামেশা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে তাই উন্মুক্ত চিড়িয়াখানা ভাবলেও  ভুল হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ের কোল ঘেষেই গড়ে উঠেছে ১২টি হল ও ১০টি অনুষদের ভবন, প্রশাসনিক ও লাইব্রেরি ভবন। নতুন আরও দুইটি হলের নির্মাণ কাজও শেষের পথে। পৃথিবীর একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নিজেস্ব শাটল ট্রেনের ঐতিহ্য বহন করে। প্রতিদিন ১০টি অনুষদের প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী এই বাহনে যাতায়াত করে। এই শাটলের স্মৃতিতে লেখা হয় হাজারো প্রেম সাহিত্য, গলা মিলিয়ে সুর দেওয়া হয় গানে।

শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, শিক্ষা গবেষণায় এই প্রতিষ্ঠানটির অবদান সৌরভ হয়ে ছড়িয়ে গেছে দিগ্বিদিক।  মুক্তযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের ক্রান্তিলগ্নে বিভিন্ন সময়ের গণ আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে মোহাম্মদ হোসেন, অবনী মোহন দত্ত, আবদুর রবদের নাম বাংলাদেশ নামের পাশে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

দেশের রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক জাগরণে উল্লেখ অবদান রেখে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। দেশ বিদেশে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে সফলতা দেখিয়ে অনেক শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।

নৈসর্গিক এতো সৌন্দর্যের মধ্যে অসুন্দর বলেও কিছু আছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের গবেষণায় অনাগ্রহ, ট্রেনে বগির অপর্যাপ্ততা, আবাসন সংকট, হলে মানহীন খাবার, বিভিন্ন বিভাগে সেশন জট ছাড়াও আছে রাজনৈতিক দলাদলি। যা সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে রাখছে। দেশের অন্যতম এই বিদ্যাপীঠ সব সমস্যা দূর করে জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে শিক্ষা গবেষণায় দেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দিবে এ কামনা সবারই।

/আকিজ/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়