ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

শীতার্তদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব

রবিউল আওয়াল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫১, ১৯ নভেম্বর ২০২৩  
শীতার্তদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব

শীতের পরশ লেগেছে গ্রাম-গঞ্জে। শহরগুলোও সিক্ত হতে শুরু করেছে শীতের কমল পরশে। এ বছর গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে পুড়েছে মানুষ। ফলে শীতের আগমনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে অনেকে। ইতিমধ্যেই গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে পড়েছে পিঠাপুলির ধুম। শহরের মোড়ে মোড়ে অনেকে‌‌ সাজিয়ে‌‌ বসেছে পিঠাপুলির পসরা।‌ পোশাকের দোকানগুলোও সাজতে শুরু করেছে নানা রঙের শীত পোশাকে।

এতসব আয়োজনের মধ্যেও বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ আতঙ্কে কেঁপে উঠছে শীতের আগমনী বার্তায়। নাতিশীতোষ্ণ এ দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া এখন চরমভাবাপন্ন। ফলে গ্রীষ্মে মানুষকে পুড়তে হচ্ছে অসহনীয় তাপে এবং হিমশীতল হয়ে জমতে হচ্ছে শীতে। প্রতি বছর তীব্র শীত মোকাবেলা করতে দেশের বড় একটি অংশের জীবনী শক্তি প্রায় ফুরিয়ে আসার উপক্রম হয়।

২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহ গণনা অনুযায়ী গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ২১৯ জন এবং প্রায় ১৮ লাখ মানুষ বসবাস করে বস্তিতে।

জনশুমারি প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, খোদ রাজধানী ঢাকাতেই গৃহহীন ও বস্তিবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যদিও ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, শুধু ঢাকা শহরে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ৫০ হাজার। বিভিন্ন সংস্থার মতে, সারা দেশে পথ শিশুর সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ লক্ষ।

এই ছিন্নমূল মানুষগুলোর নেই কোনো ঘরবাড়ি, নেই স্থায়ী ঠিকানা। রেলস্টেশন, ফুটপাত, দোকান পাট এমনকি খোলা আকাশের নিচে মাথা গুঁজেই রাত পার করেন তারা। তাছাড়াও আরও বড় একটি অংশ রয়েছে, যাদের ঘরবাড়ি থাকলেও সেগুলো তীব্র শীত মোকাবেলার উপযোগী নয়। উপরন্তু তাদের কাছে নেই পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র। প্রতিবছর দেশব্যাপী তীব্র শীতের কবলে পড়ে কত শত অসহায় মানুষ বেঘোরে প্রাণ দেয় তার কোনো পরিসংখ্যান নেই।

মূলত এসব মানুষদের সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপরই বর্তায়। প্রথমত সরকারকে,আসন্ন শীতে কত সংখ্যক মানুষের শীত মোকাবেলা করার সামর্থ‌ সেই সমীক্ষা চালাতে হবে এবং সে অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে নতুন আশ্রয়ন প্রকল্প।

১৯৯৭ সাল থেকে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ জনের (আনুমানিক একটি পরিবারে পাঁচ জন ব্যক্তি হিসেবে) আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। এই আবাসন প্রকল্প অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এখনো সারা দেশব্যাপী অনেক ভূমিহীন ও‌ গৃহহীন মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এসব মানুষকে আসন্ন শীতে সুরক্ষিত রাখতে নেওয়া প্রয়োজন একটি জোরালো পদক্ষেপ।

আসন্ন শীত তীব্র হতে শুরু করবে ডিসেম্বর মাস থেকেই। এতো অল্প সময়ের মধ্যে এতো সংখ্যক মানুষকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় প্রদান করা দুরুহ। কাজেই সরকারকে শীতার্ত মানুষগুলো যেন খোলা আকাশের নিচে না জমে কোথাও আশ্রয় নিতে পারে দ্রুত সে ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার সঙ্গে ধর্মীয় উপাসনালয় ও মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাত্রিকালীন আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে রাস্তায় বসবাসরত ছিন্নমূল মানুষের জন্য বানাতে হবে স্বল্পস্থান দখল করে এমন অস্থায়ী কাঠের কুঠুরি। যার মধ্যে রাত্রিকালীন অবস্থান করে তারা তীব্র শীতে উষ্ণ থাকতে পারবে।

শীত মোকাবেলায় অনুপযোগী ঘর সরকারি অনুদানে মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে শীত নিবারণে পর্যাপ্ত বস্ত্র। যাতে করে শীতকালে তারা ঘরে থাকতে পারে উষ্ণ, নির্বিঘ্নে যেতে পারে কর্মস্থলে।

আমরা প্রতি বছর দেখি, শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক দল ও সেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলো শীতার্ত মানুষের জন্য একটু করুণা করে পাতলা কম্বল দান করে থাকেন। আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হওয়ায় যেখানে বদ্ধ ঘরে পুরু কম্বল গায়ে চাপিয়েও শীত নিবারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে, সেখানে খোলা আকাশের নিচে বা ঝুপড়ি ঘরে বসবাসরত মানুষকে একটি পাতলা কম্বল দান করা রীতিমত লোক দেখানো ও অযৌক্তিক।

আসন্ন তীব্র শীত থেকে আশ্রয়হীন, অসহায়, দুস্থ মানুষদের রক্ষা করতে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও দেশের উচ্চবিত্তদের। তাদের প্রতি আমাদের আকুল চিত্তে নিবেদন, তারা যেন আসন্ন শীতে শীতার্ত মানুষের জন্য যথাযথ আশ্রয়স্থল ও গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করেন। যাতে করে আর একটি মানুষও তীব্র শীতে কষ্ট না পায় বা ঠাণ্ডায় জমে মৃত্যুবরণ না করে।

-লেখক: শিক্ষার্থী: গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
 

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়