মধ্যরাতে বাকৃবিতে ছাত্রী নির্যাতন, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) তাপসী রাবেয়া হল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে মধ্যরাতে জোরপূর্বক ডেকে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী মুরছালিন মুস্তাাকিন মাফি কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

নির্যাতনের মূল নেতৃত্বে ওই হলের কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী হাফসা তাসনিম ছিলেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে । তবে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।

বুধবার (২২ নভেম্বর) রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত মুস্তাাকিন মাফিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার ঘটনাটি ঘটে। পরে বুধবার দুপুরে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী। এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে হলের সুনামক্ষুণ্নের পাল্টা অভিযোগ এনে প্রাধ্যক্ষের লিখিত বিচার দাবি করেন তাপসী রাবেয়া হল ছাত্রলীগ নেত্রীরা।

হলের একাধিক সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলের ডায়নিংয়ের কুপনের টাকার দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। এরপর থেকেই হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। গত মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) গেস্টরুমে তাকে দুই-তিন বার ডেকে পাঠালে তিনি যাননি। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত নির্যাতন চালানো হয়।

হলের একাধিক ছাত্রী জানান, হলের ডাইনিং পরিচালনা করেন ছাত্রলীগ নেত্রীরা। তারা ছাত্রীদের বাধ্য করেন ডাইনিংয়ে খাওয়ার জন্য। এছাড়া একদিনের টোকেন পরের দিন ব্যবহার করতে ছাত্রীদের বাধাও দেন তারা। এই বিষয়ে প্রতিবাদ করায় মাফির উপরে চড়াও হন ছাত্রলীগ নেত্রীরা।

ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাফিকে হলের গেস্টরুমে ডেকে জোরপূর্বক তার ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে ফোনের লক খুলে দিতে বলে একই হলের ছাত্রলীগের কর্মীরা। মাফি ফোনের লক খুলতে না চাইলে ৬-৭ জন ছাত্রী তার হাত-চেপে ধরে। এ সময় একজন ছাত্রী এসে তাকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে ও গলা চেপে ধরার চেষ্টা করে।

এক পর্যায়ে শিবিরের সঙ্গে যুক্ত অভিযোগ এনে চড়াও হলে মাফি চিৎকার করেন। এসময় ওড়না দিয়ে তার মুখ চেপে ধরেন ছাত্রলীগ নেত্রীরা। এতে অবস্থা খারাপ হলে তাকে ওয়াশরুমে পাঠানো হয়। তখন তিনি ওয়াশরুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে নির্যাতন থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন।

অপরদিকে হল ছাত্রলীগের পাল্টা অভিযোগে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) হল ফিস্ট উপলক্ষে লেভেল-২ এর ছাত্রীদের নিয়ে আলোচনাকে কেন্দ্র করে অরাজনৈতিক কার্যক্রমকে রাজনৈতিক বলে অপপ্রচার করা হয়। পরবর্তীতে জামায়াত-শিবির সন্দেহে মুরছালিন মুস্তাকিন মাফি নামে একজনকে পাওয়া যায়। তাকে সাধারণ জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে উদ্দেশ্য প্রণেদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়। ওই ছাত্রীর সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার তাপসী রাবেয়া হল ছাত্রলীগ নিবে না। এমতাবস্থায় ওই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাকে হল থেকে স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাওয়া হয় অভিযোগে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাফসা তাসনিম বলেন, মেয়েটা কোনো প্রোগ্রামে আসে না বলে জানায় তার লেভেলমেটরা। এমনকি ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে না যাওয়ার জন্যেও অন্যদের নিরুৎসাহিত করেন। তিনি অন্য দল করতেই পারেন। কিন্তু প্রোগ্রামে অন্যদের যেতে কেন নিষেধ করেন, সে বিষয়ে জানার জন্যেই ডাকা হয়েছিলো। তবে থাপ্পর মারা হয়নি, এটি গুজব।

তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হলে আরও অনেক গুজব ছড়ানো হয়েছে। একটি কুচক্রি মহল আছে, যারা হলের ডায়নিং এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ইন্ধন জুগিয়ে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির পায়তারা করছে।

গোপন সূত্রে জানা যায়, একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে ছাত্রলীগ কর্মী হাফসা তাসনিম বলেন, ‘মাফি মেয়েটা জামায়াত-শিবিরের। ওর সাপোর্টে কিছু আপু ঝামেলা করতেছে। তোরা ওখানে কেউ যাস না। স্যার এবং ছাত্রলীগের ভাইরা আসতেছে। তারা এসে সমাধান করবে।’

বিষয়টি নিয়ে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, ঘটনাস্থলে আমি গিয়েছিলাম। এটা হলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই আমি প্রাধ্যক্ষ স্যারকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে বলেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাপসী রাবেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. গোপাল দাস জানান, অভিযোগপত্রটি আমার হাতে এসে পৌঁছেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তবে অভিযোগপত্রে কারোর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট করে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয় নি। যেহেতু ঘটনাটি গতকাল রাতের, তাই এখনই কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। কমিটি গঠনের পর তদন্ত সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।