রাবির বিডিএসএফ একটি পরিবার

দীর্ঘ একটি বছর শেষে আবারও পাড়ি দিল চড়ুইভাতির নভেম্বর মাস। এই মাসকে ঘিরে কতই না আয়োজন, কতই না স্মৃতি! স্মৃতি বিজড়িত এই মাসকে উদযাপন করতে বাঙালিরা কোনো ঘাটতি রাখে না। নানা জায়গা ভ্রমণেরও অভিজ্ঞতা হয় এই মাসে। নভেম্বর আসে অথচ চড়ুইতাতির আয়োজন করেন না এরকম মানুষ বোধহয় খুব কমই আছেন।

তাই তো নভেম্বরকে ঘিরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দেখা যায় বিভিন্ন আয়োজন। বিভিন্ন জেলা সমিতি, সংগঠন এই মাসে ক্যাম্পাসকে উৎসব মুখর করে রাখে। আয়োজন হয় চড়ুইভাতির। বরিশাল ডিভিশন স্টুডেন্টস ফোরামও (বিডিএসএফ) এর ব্যাতিক্রম নয়। ক্যাম্পাসের জিয়াউর রহমান হলের ঠিক সামনে অবস্থিত হবিবুর রহমান মাঠে শনিবার (২৫ নভেম্বর) তারা চড়ুইভাতির আয়োজন করে। চড়ুইভাতির পাশাপাশি ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ, হাড়িভাঙা, গান, বক্তব্য, কবিতাসহ বিভিন্ন ইভেন্টে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজন করা হয় নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ ও প্রবীণ শিক্ষার্থীদের বিদায়ী সংবর্ধনারও।

বিডিএসএফ এমন একটি সংগঠন, যেখানে শিক্ষার্থীরা থাকে সবসময় একতাবদ্ধ। সংগঠনটির অধীনে রয়েছে ছয়টি জেলা। বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার ছয়টি সমিতি থাকার কথা; কিন্তু তা নেই। কারণ বরিশালের শিক্ষার্থীরা যে জেলারই হোক, তারা বিভাগের পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করে। সবার পরিচয় একটাই; মোরা বরিশালের। আর এজন্যই বোধহয় তাদের একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক হলো ভাইবোনের মতো। একজনের বিপদে অন্যজন সবসময় ঝাপিয়ে পড়ে। তাইতো বলা হয় বিডিএসএফ একটি পরিবার।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সূচনা দাস চমক বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে বিডিএসএফের পদচারণা শুরু হয় মতিহারের এই সবুজ চত্বরে। বিডিএসএফ শুধু একটি সংগঠন নয়, রাবিতে এটি বরিশাল থেকে আগত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি পরিবার। ২৫ নভেম্বর কার্যকরী কমিটি ২০২৩ এর বার্ষিক বনভোজন, নবীন বরণ ও প্রবীণ বিদায় সংবর্ধনা ছিলো। নবীনদের আগমনে বিডিএসএফ স্বয়ংসম্পূর্ণ আজ। আমাদের সবার হাত ধরেই বিডিএসএফ একদিন চলে যাবে শতবর্ষে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের বোটানি বিভাগের শিক্ষার্থী মোসা. নাজিয়া মেহজাবিন বলেন, ‘বিডিএসএফের পিকনিক মানেই আনন্দ। আজকের দিনটার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম এক বছর ধরে। অনুষ্ঠানে এসে বন্ধু-বান্ধব, সিনিয়র-জুনিয়র ভাইবোনদের দেখে খুবই ভালো লাগছে। নবীনদের দেখে আমি নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছি। সবার উচ্ছ্বাস দেখে খুব ভালো লাগছে। আমাদের মধ্যমে বিডিএসএফ বেঁচে থাক অনেকদিন।’

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মোসা. হাফসা আক্তার বলেন, আজকে হালকা শীতের মিষ্টি রোদের আভায় বরিশাল ডিভিশন স্টুডেন্টস ফোরামের বার্ষিক পিকনিক অনুষ্ঠিত হল। আমরা বন্ধু-বান্ধবীরা সবাই ভোরে জমায়েত হয়ে কিছু আউটডোর খেলায় অংশ নিলাম। আমিও মেয়েদের ইভেন্টে অংশ নিয়ে ‘ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ’-এ তৃতীয় পুরস্কার পেলাম, যেটা ছিল অন্যরকম ভালোলাগার। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় খাবারের একটু পরেই। সভায় কবিতা আবৃত্তি করতে পেরে নিজের ভালোলাগার পরিধিটা আরও একধাপ বেড়ে গেল। নবীন ও প্রবীণ শিক্ষার্থী ভাইবোন এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলীর উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে আরও সুন্দর এবং আনন্দময় করে তুলেছিলো। ডায়েরির পাতায় জমা হলো আরও একটি রঙিন স্মৃতি।’

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ফেরদাউস ইসলাম শুভ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বিভাগের লোকজন মানে সবচেয়ে কাছের লোকজন। নবীন ও বিদায়ী ভাইবোনদেরসহ বিভাগের সবাইকে নিয়ে এক সুন্দর বনভোজনের আয়োজন করলো কমিটির সদস্যরা ৷ প্রতিবছর এই অনুষ্টানটি উদযাপিত হোক সেই প্রত্যাশা।’