শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাছে রাবি অধ্যাপকের উন্মুক্ত আবেদন
রাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
![শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাছে রাবি অধ্যাপকের উন্মুক্ত আবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাছে রাবি অধ্যাপকের উন্মুক্ত আবেদন](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2023November/RU-MCJ-2311280916.jpg)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগের ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদ মাউশি/এনসিটিবি/শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে গণযোগাযোগ/যোগাযোগ সাক্ষরতা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে উন্মুক্ত আবেদন করেছেন।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার নিজস্ব টাইমলাইনে তিনি এ সংবলিত আবেদন জানিয়ে একটি পোস্ট করেন।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে বহু বছর আগে থেকে মানবীয় যোগাযোগ, গণযোগাযোগ, গণমাধ্যম সাক্ষরতা পঠন-পাঠন শুরু হয়েছে। ১৯৬২ সালের আগস্ট মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পঠন-পাঠন শুরু হয়। এরপর বিষয়টি সম্প্রসারিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, মিডিয়া স্টাডিজ, ফিল্ম ও টেলিভিশন স্টাডিজ বিভাগে পঠন-পাঠন চলতে। বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবগুলোতেই যোগাযোগ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা কিংবা অন্য কোনো নামে অধ্যয়ন অনুশীলন চলছে। সেই হিসেবে প্রতি বছর দুই হাজারের বেশি গ্রাজুয়েট জ্ঞানের এসব শাখা থেকে বেরিয়ে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিজেদের নিয়োজিত করছে এবং দৃশ্যমান হচ্ছে দেশ ও বিদেশে তাদের সফলতার বিভিন্ন দিক।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমরা জানি যে সমাজ সৃষ্টির আগে থেকেই যোগাযোগ বিদ্যমান। যোগাযোগের সাহায্যে মানুষ সমাজ গঠন করেছে, সামাজিক হয়ে উঠেছে। সামাজিক প্রাণী হয়ে ওঠার আগেই তারা নিজেদের মধ্যে ইশারা-ইঙ্গিতের সঙ্গে গোষ্ঠীবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছে, ভাষা আবিষ্কার করেছে। যোগাযোগ ছাড়া মানুষ সামাজিক নয়। যোগাযোগ-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা সামাজিক হয়ে উঠি, আমাদের সামাজিকীকরণ ঘটে। তারপরই আমরা বলতে পারি আমরা সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক জীব।
গণযোগাযোগের বিভিন্ন শাখার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তথ্য ও বার্তা নিয়ে অনুশীলন। আর আজকের সময়ে তথ্যই হলো শক্তি, তথ্যই হলো সম্পদ, তথ্যই হলো জ্ঞান। তথ্য সমৃদ্ধ মানুষ আজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সবকিছু। যার কাছে তথ্য নেই; সে নিঃস্ব। এজন্য আমরা বলি, যে দেশ যত বেশি তথ্য সমৃদ্ধ, সে দেশ তত উন্নত।
তিনি সেখানে বলতে চেয়েছেন, যোগাযোগ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা কিন্তু তথ্য আদান-প্রদানের কাজটিই করে। তথ্য সংরক্ষণের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার কাজটিই করে। যার জন্য যে তথ্য লাগে, গণমাধ্যম থেকে সে বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। কৃষক থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, সরকার সবারই তথ্য নিয়ে কাজ করতে হয়। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ কর্মকাণ্ডের মূলে রয়েছে মানবীয় যোগাযোগ।
আমরা বিশ্বাস করি মাছের জন্য জল যেমন অপরিহার্য, তেমনি যোগাযোগ মানুষের জন্য অপরিহার্য। যোগাযোগ, গণযোগাযোগ শিক্ষা ছাড়া জন্মের পর শিশু কীভাবে মানুষ হয়ে উঠবে! আমরা দিনদিন আধুনিক হচ্ছি, ইতিবাচক পরিবর্তনে এগিয়ে যাচ্ছি ঠিকই। কিন্তু চোখের সামনে মিডিয়া পণ্য হাতে যে প্রজন্ম ধেয়ে আসছে, তারা কতটা গণমাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক, কতটা গণমাধ্যম সাক্ষরতা জ্ঞান আছে তাদের মধ্যে! অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই আজকাল মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধা-ভক্তি আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট, হাটবাজার, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, মসজিদ, মাদ্রাসা সর্বত্র আজ মানুষের সঙ্গে মানুষের আন্তরিকতা, বন্ধুত্ব, শ্রদ্ধাজ্ঞাপন একেবারেই যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে।
অধ্যাপক বলেন, আমরা যে যোগাযোগ না করে থাকতে পারি না, একথা বোঝার মতো প্রশাসন, আমলা সরকারি বেসরকারি কোনো সংস্থাকে এদেশে এখনো আমরা বোঝাতে পারি নি। আমরা এখনো বোঝাতে পারি নি, যোগাযোগের মধ্য দিয়ে আমরা সামাজিক হয়ে উঠি। যোগাযোগ শূন্যতায় আমাদের বাঙালির অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
তিনি আবেদন জানিয়ে বলেন, সম্প্রতি যোগাযোগের বিভিন্ন উপায় সম্প্রসারিত হওয়ার গুজব, মিথ্যা, অপতথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলো। এর মূলে রয়েছে যোগাযোগ করতে না জানা, যোগাযোগের মাধ্যমে আচরণ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া না বোঝা, যোগাযোগ অক্ষর জ্ঞান না থাকা। একটা মানুষ তার কথা বলা, বাচনিক-অবাচনিক অভিব্যক্তি প্রযোগের মাধ্যমে নিজের আত্মার সৌন্দর্য ফুটে তুলতে পারে।
সবমিলিয়ে যে উপসংহারে আসা যায় তা হলো- মানুষকে তথা নাগরিককে যোগাযোগে দক্ষ করে তুলতে না পারলে পরিবার থেকে রাষ্ট্র সর্বত্র এই লোকগুলো অশান্তি সৃষ্টি করবে। বিশৃঙ্খল দৃশ্যের পূনরাবৃত্তি ঘটাবে এবং হয়ে উঠবে অসহিষ্ণু। আর এজন্যই পাঠ্য বইয়ে, জাতীয় শিক্ষা ক্যারিক্যুলামে যোগাযোগ সাক্ষরতা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
/বিজয়/মেহেদী/
আরো পড়ুন