ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

হোমিও চিকিৎসক কীভাবে হবো?

মিনহাজুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ২ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৮:১৯, ২ ডিসেম্বর ২০২৩
হোমিও চিকিৎসক কীভাবে হবো?

দিন যতই সামনে এগোচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিস্তৃতির প্রয়োজনীয়তা ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি শাখা হচ্ছে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা। আমাদের দেশের প্রায় ৪০শতাংশ মানুষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। বলা হয়ে থাকে হোমিও ঔষধে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। হোমিও চিকিৎসা নিয়ে অনেকের মধ্যে কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে।

অনেকেই মনে করেন হোমিও ডাক্তারদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। ছোটখাটো কোর্স করেই হোমিও ডাক্তার হওয়া যায়। কিন্তু হোমিও শাস্ত্রে জ্ঞান অর্জনের জন্য উচ্চতর শিক্ষা পদ্ধতি চালু রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার হোমিও চিকিৎসার উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য অনেকটাই সচেতন হয়েছে‌। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ নভেম্বর জাতীয় সংসদে হোমিও চিকিৎসা আইন পাশ হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে এখন থেকে হোমিও চিকিৎসকরা আইনগতভাবে ডা. পদবী ব্যবহার করতে পারবেন এবং হোমিও ডাক্তাররা তাদের নিজস্ব অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকবেন।

কিভাবে একজন হোমিও ডাক্তার হব?

সরকারি ও বেসরকারি- দুই মাধ্যমেই হোমিও চিকিৎসা নিয়ে শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে। হোমিও ডাক্তার হওয়ার জন্য বাংলাদেশে দুটি কোর্স চালু রয়েছে। ব্যাচেলর ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিএইচএমএস) এবং ডিপ্লোমা অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (ডিএইচএমএস)। এই দুটি কোর্সের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী হোমিও চিকিৎসক হতে পারেন।

বিএইচএমএস কোর্স কি?

ব্যাচেলর ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিএইচএমএস) হলো এমবিবিএস কোর্সের সমমান একটি কোর্স। সরকারি এবং বেসরকারি উভয়ভাবেই এ কোর্স করা যায়। এ কোর্সের মেয়াদকাল পাঁচ বছর।

সরকারিভাবে এই কোর্স করতে গেলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৪.০০ পেতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট আসনের বিপরীতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। এই কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য ৫০ টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে ৫০ জন শিক্ষার্থী এখান থেকে হোমিও ডাক্তার হতে পারেন।

বেসরকারিভাবে বিএইচএমএস কোর্সে ১০০টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক ভর্তি পরীক্ষায় যারা অংশগ্রহণ করবেন শুধু তারাই বেসরকারিভাবে বিএইচএমএস কোর্স করতে পারবেন। বিএইচএমএস কোর্সের একমাত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রাজধানীর গুলিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই প্রতিষ্ঠানে কোর্সটি সম্পন্ন করার জন্য সর্বমোট খরচ হয় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠান দুটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের আওতাধীন।

বিএইচএমএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা কিভাবে অনুষ্ঠিত হয়?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে সার্কুলার দেওয়া হয়। সাধারণত এমবিবিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষার পরে এই সার্কুলার প্রকাশ করা হয়। শুধু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর আবেদন করতে পারেন। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৪.০০  পেতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

ডিএইচএমএস কোর্স কি?

ডিপ্লোমা অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (ডিএইচএমএস) কোর্সটি যেকোনো বিভাগ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরে এই কোর্সে এ ভর্তি হওয়া যায়। এই কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য তেমন কোনো শর্ত থাকে না। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় ৬৫টির বেশি ডিপ্লোমা হোমিওপ্যাথিক কলেজ রয়েছে। ডিপ্লোমা কোর্সে উত্তীর্ণরা বিএইচএমএস কোর্সের সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে না। তবে ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করে ভালো রেজাল্ট নিয়ে বিএইচএমএস কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। ডিএইচএমএস কোর্সধারীরা নামের পাশে ডা. পদবী ব্যবহার করতে পারেন না। এই কোর্সের সময়কাল ৪ বছর। এই কোর্স সম্পন্ন করতে তেমন খরচ হয় না।

হোমিওপ্যাথিক কোর্স করে কি বিসিএসে অংশগ্রহণ করতে পারবো?

বিএইচএমএস কোর্সধারীরা সরাসরি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং ডিএইচএমএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। তবে কেউ যদি ডিএইচএমএস কোর্স সম্পন্ন করে বিএইচএমএস কোর্স সম্পন্ন করেন, তবে তিন বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বিএইচএমএস কোর্সটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টির অন্তর্ভুক্ত।

হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারদের ক্যারিয়ার কি?

বাংলাদেশের প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল রয়েছে সেখানে হোমিওপ্যাথিক ডক্টররা নিয়োগ পান। দেশে অনেক বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল রয়েছে, সেখানেও তারা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। তাছাড়া নিজস্ব চেম্বারে রোগী দেখার সুযোগ রয়েছে। সম্মানের দিক থেকে এমবিবিএস ডাক্তারদের সমান গুরুত্ব দেয়া হয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়