ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

শিক্ষা কারিক্যুলাম প্রণয়নে শিক্ষক-অভিভাবকদের নিয়ে বোর্ড গঠন জরুরি

সাহীদ বিন আহমদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩  
শিক্ষা কারিক্যুলাম প্রণয়নে শিক্ষক-অভিভাবকদের নিয়ে বোর্ড গঠন জরুরি

তথাকথিত উচ্চমার্গীয় কারিক্যুলাম নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অভিভাবকদের দিনকে দিন হতাশা, দুশ্চিন্তা বাড়ছে। সমাধানের উপযুক্ত চিন্তাও আসছে না হর্তাকর্তাদের মগজে, যা খুবই হতাশাজনক ও লাঞ্চনাকর। আমরা এমন শিক্ষাক্রম চাইনি দেশের সাধারণ জনগণ হিসেবে।

‘তথাকথিত সভ্য’ ইতিহাসবিদগণ বলে থাকেন, ইখতিয়ারউদ্দীন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী নাকি ভারতবর্ষে এসে বই-পুস্তকে আগুন লাগিয়েছিলেন। যার উদ্দেশ্যই নাকি ছিলো- ভারতবর্ষের মানুষদেরকে মূর্খ করে রাখা, একটা জাতিকে অশিক্ষিত করে রাখা। তখন ওই সমস্ত ইতিহাসবিদগণ তাকে দখলদার, জোরদার ইত্যাদি অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন।

আবার এই সমস্ত ইতিহাসবিদদের বাচ্চাদের বই রচনার দায়িত্বও দেওয়া হয়। এখন এই পরিস্থিতিতে তথাকথিত সভ্য ইতিহাসবিদগণ কেনো চুপ আছেন, তা সবার জানা দরকার। তারা কেনো এই শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছেন না, কেনো দেখিয়ে দিচ্ছেন না এই শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা। এভাবে কি জাতিকে মূর্খ বানানো হচ্ছে না! ভুল পথে পরিচালনা করা হচ্ছে না!

এখন কিরিং কিরিং সাইকেল চালানো, ব্যাঙ হওয়া ইত্যাদি দেখে কি তাদের হাস্যকর মনে হচ্ছে না! এখন আমাদের তো বলতে হবে চেঙিস খান থেকেও আমাদের দেশের হর্তাকর্তারা কম কিছু নন। ওনারা আধুনিকতার নামে আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন কিছু উদ্ভট পরিবর্তন এনেছেন, যা আমাদের ভাই-বোনদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে সবাই। কত সুক্ষ্মভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে ধ্বংস করা হচ্ছে, তা অনুমেয়।

ঢালাওভাবে এই শিক্ষাব্যবস্থাটাকে বর্জনীয় তা বলা উদ্দেশ্য নয়। যে বিষয়গুলো আসলেই হাস্যকর, ধ্বংসাত্মক, এগুলো পরিবর্তন করার দরকার আছে কি-না তা ভাবা দরকার।

ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির বাচ্চাকে শিখানো হচ্ছে কিভাবে বিছানা গুছাতে হয়। এটা কি হাস্যকর নয়! তাদেরকে বিছানা গুছানো, কাগজ দিয়ে ভ্যানগাড়ি বানানো, ডিম ভাজি করা শিখানো বিশ্বের আদৌ কোনো দেশে প্রচলিত আছে কি-না বা থাকলেও কোন শ্রেণির বাচ্চাদের জন্য প্রযোজ্য, তা ভাবা দরকার। বাহিরের দেশের কারিক্যুলাম আমাদের দেশে প্রচলিত করার জন্য আগে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।

প্রথমত আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় রাখা জরুরি। আপনি বললেই অভিভাবকরা তথাকথিত অ্যাসাইনমেন্টের উপকরণ সামগ্রী দৈনিক কিনে দিতে পারেন না। তথাকথিত হর্তাকর্তারা এসি রুমে বসে শিক্ষা-কারিক্যুলাম পরিবর্তন করার অধিকার রাখেন না। দেশের সমস্ত স্তরের শিক্ষক, অভিভাবক থেকে বাছাই করে একটা নির্দিষ্ট বোর্ড গঠন করে, প্রস্তাব উত্থান-গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনার সুযোগ রয়েছে কি-না ভাবা উচিত।

এটা একটা বিশাল প্রজেক্ট, সময় সাপেক্ষ। হুট করেই পরিবর্তন আনা যাবে না। নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে। এই কারিক্যুলামের জন্য শিক্ষকদের যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

এই কারিক্যুলামের কিছু প্রশংসনীয় দিকও রয়েছে। আমার মতে নবম-দশমে কোনো গ্রুপ (বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক) না রাখার এই চিন্তাটা প্রশংসার দাবি রাখে। কারণ বিসিএস পরীক্ষার জন্য আমাদের যারা মানবিক ও ব্যবসায়-অনুষদে আছেন, তাদের নবম-দশমের বিজ্ঞান, ম্যাথ ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞান রাখা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আর এখন কোনো বিভাগ না রাখার চিন্তা এই সমস্যার একটা গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হতে পারে।

একটা বাচ্চা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল ব্যবহার করছে তথাকথিত অ্যাসাইনমেন্ট আর গ্রুপ ওয়ার্কের অজুহাতে। এখন সে কি মোবাইল ভালো পন্থায় ব্যবহার করছে নাকি ভুল পথে ব্যবহার করছে তা বলা কঠিন। অথবা ছাত্র-ছাত্রীরা মোবাইলে প্রচুর সময় অপচয় করছে কিনা, এটার কি জবাব আছে!

বাহিরের দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারে দক্ষ হতে পারে। তবে তাদের দেশের বাচ্চাদের সাইকোলোজি আর আমাদের দেশের বাচ্চাদের সাইকোলোজি এক নয়; এটাও মাথায় রাখতে হবে। তাদের দেশের বাচ্চারা চিন্তা করে, হাত খরচের টাকা বাচিয়ে কিভাবে প্রতিদিন একজন মানুষের মুখে হাসি ফুটানো যায়। পক্ষান্তরে আমাদের দেশের বাচ্চারা চিন্তা করে, কিভাবে টাকাটা দিয়ে বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলায় বাজি ধরা যায়।

আমাদের অভিভাকরা অসহায়। ওরা ওদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। ওরা কোচিং ব্যবসা, গাইড ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়। ওরা চায় ওদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেন এই যুগের চেঙিস খানেরা ছিনিমিনি না খেলে। তারা চায় তাদের বাচ্চাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ।

সরাসরি যদি পরীক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করেই দেওয়া হয়, তাহলে শুধু বাচ্চারা নয়, বিশ্ববিদ্যালেয়ের শিক্ষার্থীরাই পড়াশোনা ছেড়ে দিবে। পরীক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করার আদৌ কি যুক্তি আছে, দেশের মানুষের জানা নেই। তথাকথিত মূল্যায়নের নামে জাতিকে অভিনেতা-অভিনেত্রী বানানো ছাড়া ভিন্ন কিছু হচ্ছে না বা হবে কিনা তাও বলা যাচ্ছে না।

এখন সময় এসেছে উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করার। নতুবা আমরা একটা জাতিকে সুন্দর ভবিষ্যৎ পাওয়া থেকে বঞ্চিত করবো।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়