ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

লিংকডইন অ্যাকাউন্ট আছে?

কাওসার আকতার নিশাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৭, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩  
লিংকডইন অ্যাকাউন্ট আছে?

বিশ্বব্যাপী ২০০ টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে লিংকডইনের ৯৫০ মিলিয়ন সদস্য রয়েছে। এই পরিসংখ্যানটি প্রমাণ করে যে, সারা বিশ্বে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে ১৬.৪% মানুষের লিংকডইন অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বিশ্বব্যাপী লিংকডইনের ব্যবহারকারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। অন‍্যদিকে বাংলাদেশে ১৮-২৪ বছর বয়সী ফেইসবুক ব‍্যবহারকারীর সংখ্যা দুই কোটি এবং লিংকডইন ব‍্যবহারকারীর সংখ‍্যা মাত্র ৪৬ লাখ। অর্থাৎ কোটি ও লক্ষের অথৈ ফারাকে বাংলাদেশের মানুষ এখনো পিছিয়ে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ‍্যমে বা ইন্টারনেটে বিশ্বের বৃহত্তম পেশাদার নেটওয়ার্ক হচ্ছে লিংকডইন। স্কলারশিপ, ফান্ডিং রিলেটেড নিউজ, ন‍্যাশনাল, ইন্টারন‍্যাশনাল ইন্টার্নশিপ, গ্রাজুয়েশনের পর জব খুঁজতে কিংবা নেটওয়ার্কিং গ্রোথের অন্যতম কর্মশালা হচ্ছে লিংকডইন।

এছাড়াও কর্মজীবনে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো শিখতে, পেশাদার সম্পর্কগুলোকে সংযুক্ত ও শক্তিশালী করতে লিংকডইন ব্যবহার করতে পারেন আপনিও। এখানে আপনি আপনার সব ধরনের অ্যাচিভমেন্ট, কন্টেন্ট, ডকুমেন্ট কিংবা আপনার যেকোনো সৃজনশীল প্রতিভাকে তুলে ধরতে পারবেন। তবে সেগুলো হতে হবে অবশ্যই প্রফেশনাল। অর্থাৎ এখানে সেসবই দেওয়া উচিত যা আপনার সম্পর্কে পজিটিভ ভাইভ ছড়াবে। কারণ এখানে হাসির রিয়েক্ট ট্রিগার করা দুষ্কর। এইতো গেলো লিংকডইন কী!

এবার আসি ছাত্রজীবনে লিংকডইনের অবদানের কথায়। আমরা পরীক্ষা দিয়ে বড় হতে থাকা মানুষ। ছাত্রজীবনে পরীক্ষায় টপ হলে সেটা শেয়ার করার অন‍্যতম ফ্লোর হচ্ছে এটি। এছাড়াও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনো ক্লাবের ইভেন্টে যোগ দিয়ে থাকলে তা তুলে ধরা, সেমিনার অংশগ্রহণ করলে তাও তুলে ধরা। সেই সঙ্গে কোনো রিসার্চ পেপার, প্রজেক্ট, আর্টিকেল প্রকাশ হলে সেগুলোও তুলে ধরতে পারেন। ধীরে ধীরে এসব যোগ করলে নিজের আত্মবিশ্বাস অনেক অনেক বেড়ে যায়।

এছাড়াও আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনাকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে দেশের বাইরে যান। নিঃসন্দেহে এদের এ যাত্রাই লিংকডইনের অবদান ছিলো। তাদেরকে দেখে আমাদেরও পড়ার ইচ্ছে জাগে। কিন্তু সঠিক তথ্যের অভাবে উদাসীন ও আশাহত হয়ে স্বপ্নের চূড়াই পৌছাতে ব‍্যর্থ হই অনেকে। তাই বিভিন্ন দেশে স্কলারশিপ নিয়ে বর্তমানে পড়ছে এমন বাংলাদেশি স্কলার বা শিক্ষার্থীদের লিংকডইনে ফলো করলে তাদের স্টাডি, রিসার্চ এরিয়া সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। এতে করে নেটওয়ার্কিং গ্রো-আপ হয়, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশীপসহ পড়তে চাইলে কি ধরনের প্রোফাইল থাকা চাই, এসব সম্পর্কেও সম‍্যক তথ‍্য পাওয়া যায়।

এখন আপনি হয়তো ভাবছেন- ওসব ব‍্যবহারে আমাদের কী এসে যায়, আমাকে দিয়ে হবে না, আরে আমিতো সাইন্সের না আর্টসের, আমার কোনো প্রতিভা নেই। এসব মূলত ফাঁকিবাজি কথা। এসব বলে নিজেই নিজেকে ধোকা দিচ্ছেন। আপনি সাইন্স নাকি আর্টস এটা কোনো ফ‍্যাক্ট নয়, ফ‍্যাক্ট হচ্ছে আপনি কীভাবে নিজেকে গ্রো করছেন, কীভাবে কোন খাতে সময় বিনিয়োগ করছেন, ফেইসবুকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নাকি প্রোডাক্টিভ কোনো কাজে এবং কোন বিষয়ে আপনি আগ্রহী, তা খুঁজে বের করা।

ধরুন, আপনি এসডিজি সম্পর্কে অবগত। আপনি এটা নিয়ে ভাবতে ইচ্ছুক ও এ সম্পর্কে লিখতে ইচ্ছুক। তো লিখে ফেলুন দেরি কিসের? কিংবা আপনার মাথায় যেকোনো ব‍্যবসা নিয়ে, ডিজাইনের টুল নিয়ে আইডিয়া এসেছে। সেটা নিয়ে লিখতে চাচ্ছেন, প্লিজ লিখে ফেলুন। হতে পারে কোনো বিগ বি-এর চোখে কিংবা অনেক বড় ডেভেলপারের চোখে পড়ে গিয়েছেন।
তাছাড়াও আপনার সারা জীবনের সব অর্জনের অনলাইন সিভি ও একটি আমলনামা হিসেবেও থাকবে এটি। একটা সময় গিয়ে নিজের চিন্তা চেতনা ও প্রতিভা দেখে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা ঝলকে ওঠবে।

সর্বোপরি বাংলাদেশের নতুন কারিক্যুলাম একটি সুদূরপ্রসারী চিন্তা। এখনই নিজেকে প্রস্তুত না করলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে ও আগামী কয়েক বছর পর এমন এমন ক্রিয়েটিভ ছাত্রের আগমন হবে, তাদের পাশে নিতান্তই নিজেকে জীর্ণ-ঝিমানো মনে হবে। এক যোগে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে, আপনাকে একটু আধুনিকায়নে অংশগ্রহণ করতেই হবে।

পৃথিবীতে যত ভালো কাজ আছে তার মধ‍্যে অন‍্যতম হচ্ছে, আপনি নিজেকে কোন হাতিয়ারযোগে তাড়া করছেন, তা নিয়ে একবার চিন্তা করা। জীবনে নতুন সুযোগ রাতারাতি ধরা কখনো দিবে না। বরং সুযোগ তৈরি করে নিতে হবে। এতে করে জীবন হবে কল‍্যাণকর ও সমৃদ্ধপূর্ণ।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়