ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

মানবাধিকার দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

মো. মুরাদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৫, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১২:৩৩, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
মানবাধিকার দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

মানুষ সামাজিক জীব। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের অনেক রকম সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন হয়। জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ আপনাআপনি কিছু অধিকার অর্জন করে নেয়। বলা যায়, মানুষ কিছু অধিকার নিয়েই জন্মায়। এই অধিকারগুলো লঙ্ঘন হলে মানুষের জীবন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ অধিকারগুলো রক্ষার্থে ও সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস পালিত হয়। যা জাতিসংঘের নির্দেশনায় ১৯৪৮ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। এ দিবসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী মতামত প্রকাশ করেছেন। সেগুলো তুলে ধরেছেন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মুরাদ হোসেন।

প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার

মানবাধিকার শব্দটি মানব ও অধিকার এই দুটি শব্দের সমন্বিত রূপ। মানব পরিবারের সব সদস্যের জন্য সার্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকার হলো মানবাধিকার। মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এমন এক অধিকার, যা জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ এই অধিকারগুলো ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে অন্যের ক্ষতি সাধন করে নয়। এক কথায়, মানুষের যে অধিকারগুলো সহজাত ও অহস্তান্তরযোগ্য, যেগুলো পৃথিবীর সব মানুষের জন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য ও উপভোগ্য এবং যেগুলো ছাড়া মানুষ 'মানুষ' হিসেবে বেঁচে থাকতে পারে না, সেই অধিকারগুলোই মানবাধিকার।

মানবাধিকার ভাবনার উদ্ভব হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে। পারত পক্ষে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সাঃ) এর সময়ে মানবাধিকার রক্ষার্থে মদিনা সনদ সাক্ষরিত হয়, যেটি ছিলো মানবাধিকারের প্রধান ভিত্তি। এরপর ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে ম্যাগনাকার্টা নামে একটি শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হয়, যেটাকে মানবাধিকারের প্রথম সনদ বলা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন দেখা যায়। তারই প্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর বৈশ্বিকভাবে মানবাধিকার দিবস পালিত হয়।

বাংলাদেশ সংবিধানে ২৭-৪৪ এই ১৮ টি অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এই মৌলিক অধিকারগুলো আবার মানবাধিকারও। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার অধিকার, সমতার অধিকার, বাসস্থানের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, সরকারি চাকরি লাভের অধিকার, চলাফেরার স্বাধীনতা, সংগঠন সমাবেশের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতার অধিকার ইত্যাদি। এগুলো সব মানবাধিকার।

প্রতিটি দেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার সম্পর্কে বলা আছে। তবে সেগুলো দেশ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে যে অধিকারের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো প্রতিটি দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এই অধিকারগুলো লঙ্ঘন করা মানে মানবাধিকার লঙ্ঘন। মানবাধিকার লংঘনের উদাহরণ হিসেবে সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের যুদ্ধের কথা বলতে পারি। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধ দীর্ঘদিনের। বিদ্ধংসী আক্রমণ চলছেই। এতে ফিলিস্তিনের মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। খাবারের অভাব দেখা দিচ্ছে। ছেলেমেয়েরা স্কুল কলেজ যেতে পারছে না। তাদের বেঁচে থাকার অধিকারই কেড়ে নেয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে অন্যান্য অধিকারগুলোও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। নিজ দেশেই তারা নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারছে না। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

আবার বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে আমাদের দেশের মানুষও নিজের দেশের মানুষের কাছে নিরাপদ নয়। অহরহ গুম, খুন, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি হচ্ছে। বাকস্বাধীনতা রুখে দেওয়া হয়েছে। কোনো দলীয় মিছিল মিটিং সমাবেশ করতে গেলেও বিপদের আশঙ্কা। অথচ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে স্পষ্ট ভাবে বলে দেওয়া আছে এসব অধিকারের কথা।

বেঁচে থাকা মানুষের একটি জন্মগত অধিকার। অথচ এই অধিকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করা হচ্ছে। পৃথিবীর সব দেশেই কোনো না কোনোভাবে কারও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এই অধিকারগুলো রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। আবার এই অধিকার আইন দ্বারা বলবৎ করা যায় না। যার কারণে একজন মানুষ মানবাধিকারগুলো সম্পূর্ণরূপে আদায় করতে পারে না। পরবর্তীতে জাতিসংঘ এসব মানবাধিকার বলবৎ এবং রক্ষার জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নিবে এবং বিশ্বের প্রতিটি মানুষ এই অধিকারগুলো সম্পর্কে সচেতন হবে বলে আশা ব্যক্ত করছি।
(লেখক: শামছুন্নাহার রিতু, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।)

মানুষ পরিচয়ে মানবাধিকার

মানবাধিকার সেটাই, যেখানে ধনী, গরিব, ধর্ম, বর্ণ, জাতির মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। একটাই পরিচয় আমরা মানুষ। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, নিরাপত্তা লাভের অধিকার, যা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য যে, আজ অসম প্রতিযোগিতা, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, আত্নকেন্দ্রিক মানসিকতার ভীড়ে মানবাধিকার আজ বিলীনের পথে। আজ পত্রিকার পাতা খুললেই আমরা দেখতে পাই গুম, খুন, অপহরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নারী নির্যাতনের মত ঘটনা।

আজ মানুষ তার নায্য মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুঁজিবাদের কড়াল গ্রাসে মানুষ আজ দিশেহারা। লোপ পাচ্ছে তাদের নৈতিক মূল্যবোধ। স্বার্থবাদী চিন্তার কারণে মানুষ হয়ে মানুষকে সহযোগিতা করার মানসিকতা এখন কল্পনাতীত। ঘুষ, দূর্নীতি, ক্ষমতা লিপ্সা- এখন নিত্য সঙ্গী। সাধারণ মানুষে জীবনের নিরাপত্তা দিতেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে মানবাধিকার শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ, বাস্তবে প্রয়োগ খুবই সামান্য। সরকারের সদিচ্ছা, জনগণের সচেতনতা, শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা, দল-মত নির্বিশেষে সংবিধানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তবেই আমাদের মানবাধিকার নিশ্চিত হবে।
(লেখক: মো. শাহিদ হাসান মামুন, শিক্ষার্থী, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।)

জাতিসংঘসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

মানবাধিকার বলতে মূলত একজন মানুষের জন্ম থেকেই তার রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদেয় সব ধরনের অধিকারকে বুঝায়। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের চিত্রপট বিবেচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, এখন অবধি এখানে মানবাধিকারের সুষ্ঠু প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। শুধু বাংলাদেশ নয়, বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে ব্যপকভাবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের যুদ্ধ। বর্তমান বিশ্ব স্তম্ভিত এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়। নারী-শিশুসহ হাজার ফিলিস্তিনি মৃত্যুর মুখে আজ।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সমস্যাগুলোর মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা, নারী ও শিশু নির্যাতন, আইনের অবনতি, গুম, হত্যা, নিরাপত্তারজনিত সমস্যা ইত্যাদি। দিন দিন এ সমস্যা বেড়েই চলেছে। এর সমাধান আদৌ হবে কিনা জানা নেই। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি আর ইসরায়েল সমস্যা নিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মাথাব্যথা নেই। জাতিসংঘ যেন নিরব এখন। অথচ উন্নত মুসলিম রাষ্ট্রগুলো একত্র হয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ইসরায়েল পিছু হটতে বাধ্য। মানবাধিকারের এমন করুণ অবস্থা যেন মানুষ তাদের নিজ হাতে তৈরি করেছে। এ সমস্যার সমাধানে সমগ্র বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।
(লেখক: প্রতিভা জাহান নিপা, শিক্ষার্থী, বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ।)

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়