ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

একটি স্মৃতি গড়ার দিনে

তানজিদ শুভ্র || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১২:০৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩
একটি স্মৃতি গড়ার দিনে

ক্যালেন্ডারের পাতায় পৌষের আগমন না হলেও, অগ্রহায়ণের এই শেষ সময়ে সূর্যোদয়ের সময় বেশ শীত শীত লাগে। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে শীত উপেক্ষা করে বের হলাম গাজীপুরের উদ্দেশ্যে। কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য শিক্ষা সফর; উদ্দেশ্য পাঠক্রম অন্তর্ভুক্ত নানা নমুনা সংগ্রহ, এক সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো, একদিন নিজেদের মাঝে আনন্দ বিলানোর।

শীতকালীন অবকাশ শুরু হয়ে গেছে। কলেজে ব্যস্ততা কিছুটা কম। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে পৌঁছে মূল ফটক পেড়িয়ে দেখা পেলাম একজন সহপাঠির। ধীরে ধীরে বাকিদের আসা শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে কলেজের সামনে প্রস্তুত আমাদের যাতায়াত করার জন্য নির্ধারিত বাস।

সব কিছু প্রস্তুত করে অর্ধ শতাধিক সফরসঙ্গী নিয়ে সকাল ১০টার আগেই বাস ছাড়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। আমাদের উদ্ভিদিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিভাগের প্রিয়মুখ শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ। আনোয়ারুল ইসলাম স্যার, আখতার জাহান শাম্মী ম্যাম, গৌড়ি দাস ম্যাম, সোহানা কবির ম্যাম, মালিহা ম্যাম ছাড়াও আমাদের সঙ্গে ছিলেন আনোয়ার স্যারের সহধর্মিনী। মজার ব্যাপার তিনিও শিক্ষাজীবনে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। আমাদের সঙ্গে সর্বকনিষ্ঠ সফরসঙ্গী ছিলো মালিহা ম্যামের আদরের কন্যা রাদিয়া নূর। যার সংস্পর্শে আমার সকালের সুন্দর মুহূর্তের শুরু।

যাত্রা শুরুতে আমি এবং সহপাঠি কানন ছিলাম দলছুট। শুরু থেকে থাকলেও হুট করে দেখা গেল যাত্রা পথের খাবার পানি সরবরাহ করা হয়নি। এদিকে নিকটস্থ দোকানপাট তখনও খোলেনি। বাধ্য হয়ে লোকাল বাসে করে সবার যাত্রা শুরুর আগেই পথ এগিয়ে গেলাম। সফিপুর বাজার থেকে পানি নিয়ে নির্ধারিত বাসে যোগ দেই আমরা দুজন।

এত মানুষের ভীড়ে কেউ-বা আনন্দে উচ্ছ্বাসে মেতেছে হৈ-হুল্লুড়ে আবার কেউ নিরবে জানালার ধারে বসে প্রকৃতি উপভোগ, কেউ অভিযোগ আবার কেউ খুনসুটি। এক সময় আমিও স্কুলের শিক্ষা সফরে এমন নিরব ভূমিকায় থাকতাম। চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া কিছুই না করে অপেক্ষা করতাম যাত্রা শেষের। এবার তেমন হলো না।

আমাদের এই গ্রুপ ট্যুরে ছাত্র সংখ্যা ছিল খুবই কম; সানি, ইমন, রাহিম, আমি আর গন্তব্যে যোগ দেয় প্রান্ত। যাত্রা পথের প্রায় পুরো সময়ই দাঁড়িয়েই কেটে যায়। পথিমধ্যে একবার এক বিপত্তিও ঘটে। আমাদের বাস থামিয়ে স্থানীয়দের কয়েকজন জানাল সামনের পথে বাস নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অগত্যা পথ ঘুরিয়ে আবার ভিন্ন পথে পৌঁছাই গন্তব্যে। আমাদের গন্তব্য গুলবাগিচা পিকনিক স্পট অ্যান্ড রিসোর্ট। পৌঁছানোর পর দেখলাম ঘড়ির কাটা সাড়ে ১১টা পেরিয়েছে।

পৌঁছেই এক দফা যার যার মতো ছুটতে শুরু করল সবুজ আঙিনায়। কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত, কেউ ব্যস্ত কোথায় কী আছে তা জানতে। রিসোর্টে ঢুকতেই পাশেই রয়েছে একটি মিনি শপ; যেখানে চা কফির পাশাপাশি বিস্কুট, চিপসসহ বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায়। আর এই রিসোর্টে দুটো সুইমিং পুলও রয়েছে, যা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। ডাইনিং স্পেস, মুক্ত মঞ্চ, ছোট চিড়িয়াখানাসহ ফুলে ফুলে সজ্জিত সবুজ আঙিনা নিঃসন্দেহে আনন্দময় সময় কাটানোর জন্য এক সুন্দর গন্তব্য।

কিছুক্ষণ দলছুট থেকে আমরা একদল এই আঙিনায় থাকা বিভিন্ন উদ্ভিদ সনাক্তকরণ এবং নমুনা সংগ্রহ করতে লাগলাম। রঙ বেরঙের ফুল, গুল্মসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে দলবেঁধে নমুনা সংগ্রহ শেষে আমরা স্থানীয় চা-বাগান বাজারে যাই। বংশাই নদীর পাড়ে বিভিন্ন শৈবালের নমুনা, বেশ কিছু লতা-গুল্ম আর সমতল থেকে বিভিন্ন ছোট উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করি।

নদীতে নেমে দেখি একটু পর পর মাছ ধরার জাল সাজানো। শক্ত করে বাঁধা, সেটা তোলার সাধ্যি তো আর আমার নাই। তাই বলে কি যাবো না সেখানে! আনোয়ার স্যার বলছিল নমুনা হিসাবে যেন নদীর পানিও সংগ্রহ করি। যখন কৌটা হাতে নামতে নিলাম কাদায় আটকে যাচ্ছিল পা। তারপর পাশে যেখানে জাল বেঁধে রাখা ছিলো, সেখানে রাখা বাঁশের উপর উঠে পানি নিলাম। স্যারের অনুমতি নিয়ে সামনে থাকা বন্ধুদের ভেজানোর কিঞ্চিত প্রচেষ্টাও আমাদের আনন্দিত করেছে।

দুপুর রোদ। সূর্য তখন মাথার উপরে। নদীর কিনারা থেকে উঠে স্থানীয় বাজারে সবাই মিলে মাঠা খেলাম। এবার পুনরায় রিসোর্টে ফেরার পালা। ফিরে দেখি কয়েকজন সহপাঠী সেখানে অবস্থান করছিল, তারা তখন ব্যস্ত ছিলো ছবি তুলতে। সবাই ফ্রেশ হয়ে মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দিলাম। খাওয়ার পর যার যার মতো সময় কাটালাম আমরা। কেউ সুইমিং পুলের ধারে গিয়ে ছবি, বিকেলের মুক্ত বাতাসে মন খোলা আড্ডা কিংবা সবুজ ঘাসে বসে বসে সময় পার।

সময় ফুরিয়ে এলো। আমাদের আনন্দময় দিনের ইতি টেনে ফিরতে হবে ঘরে। বিকেল ৪টার পর উপস্থিত সবাই ফ্রেম বন্দি হলাম। দুর্ভাগ্যবশত গ্রুপ ছবিতে আমিই অনেকটা অদৃশ্য হয়ে যাই পেছনের সারি থেকে একবার, আরেকবার পাশে দাঁড়িয়ে ফ্রেম থেকেই বাদ পড়ি।

ছোট-বড় যেকোনো আয়োজনে, প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি নিয়েই সমাপ্তি। অপূর্ণতা থাকে বলেই স্বপ্ন দেখি আবার আগামী দিনে কোনো গন্তব্যের পানে এক সঙ্গে ছুটে চলার, ঘুরে বেড়ানোর, আনন্দময় সময় কাটানোর।

আয়োজনের ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য শিক্ষকমণ্ডলীদের পাশাপাশই সহপাঠী মাহফুজুর রহমান সানী আর আমেনা আক্তার কাননের প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকবে। আমার জন্য যতখানি অপূর্ণতা ছিলো, তা শুধরে এক সঙ্গে আরও সুন্দর আয়োজনের প্রত্যাশা থাকবে বরাবর। শেষ বিকেলের রোদের মতো উচ্ছ্বাস, আনন্দ ছিলো আমাদের আর অভিমান সকালের কুয়াশার মতো ঝাপসা।

সন্ধ্যায় কলেজের সামনে এসে বিজয় দিবসের আলোকসজ্জ্বা দেখলাম পুরো কলেজ জুড়ে। এবার যার যার বাসায় ফেরা পালা। আমিও আমার পথের গাড়িতে উঠে অপেক্ষা করলাম পৌঁছার। যানজট পেড়িয়ে বাসায় এসে ক্লান্তি এক পাশে রেখে আনন্দময় দিনটি স্মৃতি হিসেবে রেখে দিলাম জীবনের চলতি অধ্যায়ে। দিনটি একান্তই আমাদের স্মৃতি গড়ার দিন ছিলো।

লেখক: শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ, ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়