ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

তারুণ্যের ভাবনায় বিজয়

তানজিদ শুভ্র || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৫, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩  
তারুণ্যের ভাবনায় বিজয়

বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন মহান বিজয় দিবস। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন। জাতীয় জীবনে অসামান্য এই দিনটি নিয়ে কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ভাবনা জানিয়েছেন তানজিদ শুভ্র।

ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩- ঘড়ির কাঁটা আর ক্যালেন্ডারের পাতায় সময় এগিয়েছে ৫২ বছর।  সঙ্গে এগিয়েছে প্রিয় বাংলাদেশও। একের পর এক অর্জনের পাতায় যুক্ত হয়েছে নানা সাফল্যগাঁথা। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হাত ধরে গল্প এগিয়েছে স্বপ্নপূরণেরও। কিন্তু মনুষ্যত্ববোধ, জাগ্রত বিবেক কোথায় আছে এখন? এখনও স্বার্থের কড়াঘাতে দুর্বিষহ হয় জনজীবন। কখনো বা মারপ্যাঁচে প্রাণ যায় আমজনতার। মাথাপিছু আয় বাড়লেও অসাধু চক্রান্তে ধনী ধনবান হয়, অপরদিকে বৃহৎগোষ্ঠী নিঃস্ব হয়ে যায়। শাশ্বত হয়ে উঠে রবীন্দ্রকথন, ‘রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।’ কখনো যেন জাগ্রত হয় সেই প্রশ্ন- ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন!’

সব অপশক্তি হটিয়ে বিজয় আসুক আবারও। প্রতিষ্ঠিত হোক সেই সোনার বাংলা। তারুণ্যের হাত ধরে বিশ্ব জানুক এক অপরাজেয় সত্ত্বাকে- ‘আমি চির বিদ্রোহী বীর/আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির।’
(লেখক: মো. খালিদ আহমেদ সাইফউল্লাহ সা'দ, শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।)

স্বাধীনতার অর্জনের এতদিন পরেও এখনো দেশজুড়ে হাজারো সমস্যায় জর্জরিত আমরা। বিজয়ের মাসে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমরা নানানভাবে মূল্যায়ন করতে পারি। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন এবং সম্ভাবনা এটাকে অস্বীকার করার কোনোই সুযোগ নেই। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সারাদেশের প্রতিটি উপজেলায় মডেল মসজিদের মত মেগা প্রকল্পগুলো আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রমাণ দিচ্ছে।

পৃথিবীব্যাপী জ্বালানি সংকটের মাঝে সরকার দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে একটি নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় নিয়ে এসেছে। নিরক্ষরতা মুক্ত ডিজিটাল দেশ গড়ার কাজে বর্তমান সরকারের সফলতা আমরা প্রতি পদে পদে উপভোগ করছি। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং বেকারত্ব দূরীকরণে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাংলাদেশকে আমরা একটি আদর্শ দেশ হিসেবে পৃথিবীর কাছে পরিচিত করে তুলতে পারব, ইনশাআল্লাহ। বিজয়ের এই মাসে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সব যোদ্ধা ও শহিদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
লেখক: জিল্লুর রহমান রিয়াদ, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির বিজয়ের দিন। আমি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সন্তানদের প্রতি। তাদের ত্যাগের বিনিময়েই আজ আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারছি। আমাদের মহান বিজয় কেবল একটি লাল সবুজের পতাকা বা স্বাধীন একটি ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং বৈষম্যহীন দেশ গঠনের অনুপ্রেরণা এই বিজয়। বিজয়ের এত দিনে দেশ অনেক সূচকে এগিয়ে গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছে দেশ।

মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি ছিলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। কিন্তু বিজয়ের ৫২ বছরে এসেও একটিরও প্রতিফলন পায়নি দেশের সাধারণ মানুষ। সব মানুষের মধ্যে মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা বিজয়ের মূল লক্ষ্য।

দেশ আজ মাদকের মতো ভয়াল থাবায় জর্জরিত। দেশের প্রশাসনের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে এর বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে হবে। দেশ কি এজন্য স্বাধীন করেছিল দেশের বীর সন্তানেরা? নিশ্চয়ই না! সবাই মিলে দেশকে আরও উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওযাই হোক আমাদের আজকের বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।
(লেখক: মেহরাব হোসেন শিশির,  শিক্ষার্থী, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।)

বিজয় মানে একটা মানচিত্র, একটা ইতিহাস, একটা লাল সবুজের পতাকা, একটা গর্বিত জাতি, অস্তিত্বে বাংলাদেশ। অন্ধকারের অপশক্তির হাত থেকে বাঙালির জাতীয়তাবাদী শক্তিকে মুক্তি দিতে পারি। ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে শক্তিশালী করতে পারি। সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পকে পরাজিত করতে পারি এবং আমরা বাংলাদেশের মানুষ যেন আধুনিকতার প্রগতিকে ধারণ করতে পারি এ বিজয় দিবস আমাদের সেটাই স্মরণ  করিয়ে দেয়।

শানিত স্লোগানের কথা মনে করিয়ে দেয়, ঝাঁজালো লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয় আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যেসব আদর্শের জন্য জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে, যুদ্ধ করেছে। স্বাধীনতার বিজয় নিশান ছিনিয়ে এনেছে- তা মনে করিয়ে দেয়। আমাদের এ মুক্তির লড়াই এখনও শেষ হয়নি। বিজয় দিবস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন চ্যালেঞ্জগুলোকে আমাদের মনে করিয়ে দেয়।

আজকের এ তরুণরাই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছে, বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার উপহার দিয়েছে। তরুণেরাই সামরিক স্বৈরতান্ত্রের জাঁতাকল থেকে মুক্তি দিয়েছে, সাম্প্রদায়িক বিভ্রান্তের বিরুদ্ধে মৌলবাদের প্রতিরোধ দুর্গ নিশ্চিত করেছে।

বর্তমান এ জায়গা থেকে আজকে তরুণদের মাধ্যমে সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তকে যদি প্রত্যাশার  নিয়ে যেতে হয় তবে সবচেয়ে জরুরি  যে বিষয় তা হলো উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে অবশ্যই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করতে হবে। বিজ্ঞান ভিত্তিক করার পাশাপাশি শিক্ষাকে একমুখী ও কর্মসংস্থানের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। যাদের রক্তে অর্জিত হয়েছে আমাদের এ স্বাধীন বাংলা, তাদের তরে জানাই হাজারো বিনম্র শ্রদ্ধা, সালাম ও দোয়া।
(লেখক: আব্দুল্লাহ আল জোনায়েদ, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।)

আমার কাছে বিজয় মানে অধিকার আদায়ের দ্বার উন্মুক্ত। বাঙালি হিসেবে আমার ভাষার অধিকার, দেশপ্রেমিক হিসেবে সাংবিধানিক অধিকার আদায় আমার হক। বিশ্বব্যাপী আমার জাতিসত্তার আনন্দ, উল্লাসের ও গর্বের জন্য বিশেষ একটি দিন বিজয় দিবস। বিজয়ের হাসি খুশির মাঝে কল্পনায় আমাদের হারানোর বেদনাও রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ কোনো কাল্পনিক গল্পকাব্য ছিলো না। বরং মুক্তিযুদ্ধ ছিলো বাস্তব জীবনে দেশপ্রেম ও অস্তিত্বের লড়াই, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির জন্য রক্ত বিসর্জন। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত দেশের প্রতিটি মাটিকণা দুর্নীতিমুক্ত, নীতিবোধের অবক্ষয় থেকে রক্ষা করে রাখাই হবে আমাদের জন্য প্রকৃত বিজয়। বিজয় দিবস মানে হলো দায়িত্ব, আদর্শ ও ন্যায়-নীতির চেতনাকে আরও একটি বছরের জন্য নিজের মাঝে জাগ্রত করা সুযোগ।
(লেখক: জুবায়ের আহমেদ সাব্বির, শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।)

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়