ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

খাদ্যদ্রব্যের অগ্নিমূল্যে বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীরা

সানজিদা জান্নাত পিংকি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৫, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩  
খাদ্যদ্রব্যের অগ্নিমূল্যে বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীরা

দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি দেশের বহুল আলোচিত একটি বিষয়। বাজারে যেন অধিক মূল্যের আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে, ছুটে চলেছে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া। জীবন-জীবিকা ও সংসারের খরচ সামলাতে গিয়ে মানুষের এখন ত্রাহি অবস্থা, চোখে দেখছেন অন্ধকার। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে যেন নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। আর এই চরম বিপাকে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদেরকেও। শিক্ষার্থীদের উপর দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির প্রভাব ও এর প্রতিকার নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন সানজিদা জান্নাত পিংকি।

বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা

দ্রব্য মূল্যের এই চড়া বাজারে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে জনজীবন। বাড়ি থেকে দূরে অবস্থানরত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এর বাইরে নয়। বেশি সমস্যায় পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আশা শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। অনেকে হল ডাইনিং, ক্যাফেটেরিয়ার অপরিচ্ছন্ন ও অপুষ্টিকর খাবার খেতে পারেন না। ফলে রান্না করে খান হাজারো শিক্ষার্থী। কিন্তু পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে তারা প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য কিনতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে কোনোভাবে দু'মুঠো খেয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

অধিক মুনাফার আশায় পণ্য মজুদ থাকা সত্ত্বেও বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে পেঁয়াজ, ডিম, আলুর মতো নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান কিনতেও দু'বার ভাবতে হচ্ছে। এই বাজার সিন্ডিকেটের কবলে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেড়েছে মানসিক হতাশা, পড়াশোনায় ঘটছে ব্যাঘাত। শারীরিক ও মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ছেন। সাধারণ ভোক্তারা যাতে নির্ভেজাল পণ্য ও সেবা পেতে পারে সেদিকে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাই কেবল এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের পথ হতে পারে।
(লেখক: মো. তানবীর রহমান, শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ।)

পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ভোগান্তি বাড়িয়েছে

দেশে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় সিন্ডিকেট তৈরি করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। ক্যান্টিনগুলোতে খাবারের মূল্যবৃদ্ধি ও মান কমানোতে একদিকে যেমন বাড়তি টাকা গুনতে হয়, আবার বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও।

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঊর্ধ্বগতির বাজারের চলছে যানবাহন শ্রমিকদের নৈরাজ্য। কিছুদিন আগেই যাতায়াত ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন তারা। ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও মানা হচ্ছে না সেই নির্দেশনা। দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া তো সোনালী অতীত! ডিজেলের দোহাই দিয়ে দাবি করছে অতিরিক্ত ভাড়া। তাই, ঊর্ধ্বগতির বাজারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়ন কষ্টকর হয়ে পড়ছে। উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে সরকারের উচিত অসাধু ব্যবসায়ীদের তৈরিকৃত সিন্ডিকের নির্মূল করা এবং নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা।
(লেখক: অন্তু সরকার, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।)

বাজার সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হবে

সাধারণ শিক্ষার্থী, যারা একটি দেশের কারিগর, তাদের শিক্ষিত হওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উর্ধ্বগতি। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই নিজের খরচ চালাচ্ছে খণ্ডকালিন চাকরি বা টিউশনির মাধ্যমে। আবার সেই টিউশনিও আজকাল সোনার হরিণ। অনেকেই আর্থিক টানাপড়েনে খাবারটুকুও জোগাড় করতে পারছে না। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রেরই দাম এখন তুঙ্গে। টিউশনি করা শিক্ষার্থীদের বেতন বাড়ছে না, অথচ দাম বেড়ে চলেছে। অনেক শিক্ষার্থীই এই দেয়াল ভেদ করে এগিয়ে যেতে পারছেন না, বেছে নিচ্ছেন হেরে যাওয়ার পথ। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য স্থিতিশীল এবং কার্যকরি রাখা দরকারি হয়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতিরিক্ত টাকা দাবি করছে। বাজার ব্যবস্থায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোর অবহেলাকে পুঁজি করে এসব সিন্ডিকেট অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করছে এবং হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। টিসিবি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের হ্রাসবৃদ্ধির অস্বাভাবিকতার কারণ সমাধান করতে হবে এবং সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের অধিকহারে পণ্য মজুতের ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
(লেখক: ইমরান আহমেদ শুভ, শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।)

পুরো সপ্তাহেও এক হালি ডিম খাওয়া হয় না

দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস চাল-ডাল থেকে শুরু করে শাকসবজি প্রত্যেকটি পণ্যের দাম যেনো লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলেছে। এতে করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা। বাড়ি থেকে স্বল্প টাকা নিয়ে চলতে প্রতিনিয়িত হিমশিম খেতে হয়। খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমার এবং পরিবারের উপরে একটা আলাদা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই চাপ কমাতে আমি সকালে এবং বিকেল/সন্ধ্যার নাস্তা করা বাদ দিয়েছি। কিছুদিন আগেও দৈনিক একটি ডিম খাওয়া হতো। কিন্তু এখন সপ্তাহজুড়ে এক হালি ডিম খাওয়া হয় না। অন্যদিকে কমেছে মেসের মিলের মান এবং পরিমাণ। আবার বাড়ি থেকে প্রতি মাসে পড়ালেখাসহ অন্যান্য খরচ বাবদ যে টাকা আনি তা মাসের মাঝামাঝি সময়েই শেষ হয়ে যায়। ফলে বাকি দিনগুলো ভোগান্তিতে কাটাতে হয়। সরকারের উচিত মজুদদারি ও অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে আইনের আওতায় আনা। পাশাপাশি আমদানি শুল্ক কমানোসহ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা।
(লেখক: মো. তরিকুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ।)

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়