ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

বশেমুরবিপ্রবিতে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মাণে ধীরগতি

হৃদয় সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩  
বশেমুরবিপ্রবিতে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মাণে ধীরগতি

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েও শেষ হলো না। ম্যুরাল নির্মাণের জন্য ২০১৪ সালে প্রজেক্টের অনুমোদন হলেও এখনও সেটির শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। আদৌ এটি কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে রয়েছে অনেক সংশয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে অনুমোদনপ্রাপ্ত বশেমুরবিপ্রবি অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে ১৩টি টেন্ডারের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের জন্য বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এসময় প্রকল্পগুলো শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত হয়েছিলো। ২৪০ বর্গমিটার জায়গায় ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে ম্যুরালটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিলো। কিন্তু ২০১৭ সাল পর্যন্ত ম্যুরালটির কাজ শুরুই করেনি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। সে সময় কয়েক দফায় বশেমুরবিপ্রবি অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।

পরবর্তীতে ২০১৮ সালে প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা উন্নয়ন এবং ওয়ার্কস দপ্তরের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা উন্নয়ন এবং ওয়ার্কস দপ্তর প্রকল্পটি প্রথম রিভাইজড করে। রিভাইজড বাজেটে ২৪০ বর্গমিটার স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এর প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছিলো ১৫ কোটি ৮৫ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা।

পরিকল্পনা দপ্তর জানায়, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মাণ বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিএফসি অ্যান্ড টিবিএল (জেভি) ১৪ কোটি ২৭ লক্ষ ৩২ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ম্যুরাল নির্মাণের কার্যাদেশ গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করার কথা ছিলো। কিন্তু মেয়াদ এক বছর আগে শেষ হলেও এখনও ম্যুরাল নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা উন্নয়ন এবং ওয়ার্কস দপ্তর জানায়, ২০১৮ সালে শিক্ষা ও প্রকৌশল দপ্তর থেকে আমাদের নিকট প্রকল্পটি হস্তান্তরিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো প্রকল্প বা ম্যুরাল নির্মাণ করতে হলে বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। সেজন্য প্রকল্পটি হস্তান্তর হওয়ার পর দপ্তরটি কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়। বঙ্গবন্ধুর নামে ম্যুরালটি ইউনিক করতে পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে ডিজাইনে একাধিক পরিবর্তন আনা হয়। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল কমপ্লেক্স বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের কাছে প্রকল্পটি পাঠানো হয়। কিন্তু এর পরেই করোনা চলে আসে। ফলে দীর্ঘদিন এটা বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের কাছে ছিলো। ফলে তখন পর্যন্ত দপ্তরটি প্রকল্পের কাজটি শুরু করতে পারেনি। করোনা পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রজেক্টের মেয়াদকে সামনে রেখে ২০২১ সালে তারা কাজ শুরি করে বলে জানায় ওয়ার্কস দপ্তর।

সরেজমিনে দেখা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পেরিয়ে ২০২৩ সাল শেষ হতে চললেও প্রকল্পটি শতভাগ কাজ সমাপ্ত হয়নি। কিছুদিন আগে প্রায় ২-৩মাস ধরে ম্যুরাল নির্মাণসহ অন্যান্য টেন্ডারের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিলো। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এর শতভাগ বাস্তবায়নে ব্যর্থ ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন এবং ওয়ার্কস দপ্তর ও প্রকৌশল দপ্তর। ফলে সরকার থেকে টাকা না পেয়ে যথাসময়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা। তবে গত সপ্তাহ থেকে এটির কাজ নতুন করে শুরু করে, যা চলমান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের সর্বশেষ জরীপের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ম্যুরাল কমপ্লেক্স নির্মাণে আর্থিক ব্যায় হয়েছে ৪০.০৮ শতাংশ। যার ভৌত অবকাঠামো হয়েছে ৮০ শতাংশ। ২০২৪ সালের ১৭ মার্চের মধ্যে ম্যুরাল নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারবে বলে জানায় পরিকল্পনা দপ্তর।

এর আগে বশেমুরবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের কোনো ধরনের নির্মাণ কাজ শুরু না করেই দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণাধীন দেখানো হয়েছিলো। এমনকি কাগজে-কলমে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখানো হয়েছিলো ১৬.১৯ শতাংশ এবং ব্যয় দেখানো হয়েছিল আড়াই কোটি টাকা।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়