ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

জীবনযুদ্ধে সফল হওয়ার প্রতিজ্ঞা আহসান উল্লাহর

রফিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৭:১৩, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩
জীবনযুদ্ধে সফল হওয়ার প্রতিজ্ঞা আহসান উল্লাহর

বাবা-মা ও তিন ভাই-বোন নিয়ে আহসান উল্লাহর পরিবার। সব মিলিয়ে সুখেই চলছিল তাদের দরিদ্র পরিবার। কিন্তু ধরণীর বুকে বিধাতা তাদের এই সুখ বেশিদিন স্থায়ী করলো না। সুখ যেন সত্যি মরিচিকা হয়ে গেল। আহসান উল্লাহ যখন চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী, তখন তার বাবা মানসিক ভারসাম্য হারায়। শুরু হয় জীবন যুদ্ধ।

বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই পরিবারকে বাঁচাতে শিশু আহসান উল্লাহকেই কাজ করতে হবে। কারণ উপার্জন করার মতো তাদের পরিবারে আর কেউই নেই। অন্যের বাড়িতে কাজ করেই চলতে থাকে আহসান উল্লাহর পাঁচ সদস্যের পরিবার।

কাজ নেই, তো চুলায় আগুনও জ্বলে না। তাই প্রতিদিনই কাজ করেতে হবে। তা-না হলে, না খেয়ে পার করতে হবে দিন। প্রতিদিন কাজ শেষ করে বাড়িতে চাল নিয়ে ফিরলেই শুরু হয় রান্না, জোটে আহার। আর এভাবেই শিশু আহসান উল্লাহ অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার নামক মহা সমুদ্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছেন। তবে এতো অভাব অনটনের মধ্যেও লেখা-পড়ার প্রতি তার আগ্রহ এতটুকু কমেনি। কাজ ও পড়ালেখা সমান তালে চালিয়ে যান।

মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামীর সঙ্গে সংসার করবেন না বলে তার মা তিন সন্তানসহ মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামীকে ফেলে রেখে হঠাৎ চলে যান। আহসান উল্লাহ তখন ১০ম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরে তার। পায়ের নিচ থেকে সরে গেলো মাটি। চোখে মুখে নেমে এলো আমানিশার ঘোর অন্ধকার। একদিকে ভারসাম্যহীন বাবা অন্যদিকে ছোট দুটি বোন। তবুও হারতে রাজি নন অদম্য আহসান উল্লাহ।

জীবনযুদ্ধে সফল হতে হবে এটাই যেন তার প্রতিজ্ঞা। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে সারাদিনের রান্না শেষ করে অন্যের বাড়িতে কাজে যান তিনি। জীবনের বাস্তব চিত্র অনুধাবন করে জীবন সংগ্রামে হার না মেনে এক সঙ্গে চলতে থাকে পড়ালেখা ও কাজ।

এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম তিনি হচ্ছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের ডোমবাড়ী চালা গ্রামের শহীদুল ইসলামের ছেলে আহসান উল্লাহ। বাড়ি ভিটা-মাটি ছাড়া কৃষি কাজের জন্য নিজের এক টুকরো জমি না থাকলেও শিশু শ্রেণি থেকে এ পর্যন্ত লেখাপড়া করে আসা ও বোনদের লালন-পালন করায় এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের কাছে প্রশংসার পাত্র তিনি। চারিদিকে তার সুনাম ছড়িয়েছে ভালো ছেলে হিসেবে।

কথা হয় আহসান উল্লাহর সঙ্গে। তিনি জানান, বর্তমানে তিনি শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজে ভূগোল বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করে করে জীবন সংগ্রামে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। ছোট এক বোনকে ইতোমধ্যে বিয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও আরেক ছোট বোন এবার এসএসসি পাশ করেছে।

তিনি বলেন, ‘সরকার যদি আমাকে স্বল্পসুদে ঋণ দেয়, তাহলে আমি আরও বেশি পরিমাণ জমি লিজ নিয়ে মৌসুমী সবজি চাষ করে আরও ভালো কিছু করতে পারবো।’

প্রতিবেশি লাভলী বেগম জানান, আহসান উল্লাহ ছোট থেকে খুব কষ্ট করে বড় হয়েছে। এলাকার সবাই তাকে খুব ভালোবাসে।

আহসান উল্লাহর ছোট বোন বলেন, ‘আমার ভাই মানুষের জমি বর্গা চাষ করে নিজে লেখাপড়া করছে ও আমাকেও লেখাপড়া করাচ্ছে। সংসারের পুরো দায়িত্ব কাঁধে তুলে খুব কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছেন। এমন ভাই পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।’

তেলিহাটি ইউপি সদস্য তারেক হাসান বাচ্চু বলেন, ‘বর্তমানে এমন ছেলে পাওয়া যায় না। আহসান উল্লাহ যুব সমাজের অহংকার।’

শ্রীপুর যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, ‘তিনি যদি চান তাহলে তাকে যুব উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে। আহসান উল্লাহর মতো যুবকরা এগিয়ে আসলেই দেশ আরও বেশি এগিয়ে যাবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, ‘আহসান উল্লাহকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রণোদনার আওতায় উফসী জাতের বীজ ও সার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তার বাড়িতে পারিবারিক পুষ্টির বাগানের ব্যবস্থা করতেও কৃষি অফিসের সহযোগিতা অব্যহত থাকবে।’

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়