ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন : যোগ্য নেতৃত্ব চান শিক্ষার্থীরা

সানজিদা জান্নাত পিংকি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৯, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩  
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন : যোগ্য নেতৃত্ব চান শিক্ষার্থীরা

‘নির্বাচন’ গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার প্রতিনিধি মনোনয়নের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। যেখানে সরাসরি জনগণের মতামত প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী দেশে রাজনৈতিক অবস্থা বিশেষ কয়েকটি ছকে ফেলা যায়। তবে বর্তমান রাজনীতিকসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থা যারপরনাই অনিয়ন্ত্রিত। অযাচিত হরতাল-অবরোধ, জনদুর্ভোগ সব মিলিয়ে এক প্রকার টালমাটাল পরিস্থিতি।

এ অবস্থায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন নিয়ে নিজেদের অভিমত জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পাঠকের জন্য মতামতগুলো তুলে ধরেছেন রাইজিংবিডির গণ বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা সানজিদা জান্নাত পিংকি।

জনকেন্দ্রিক নেতৃত্ব নির্বাচিত হোক

বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটটাই ভিন্ন হতো। তবুও এই নির্বাচন নিয়ে আমাদের আগ্রহ রয়েছে। আমরা চাই, সারাদেশে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক। তরুণ ভোটার হিসেবে অবশ্যই আমারও চাওয়া- দেশে চলমান এ উন্নয়নের ধারা বজায় থাকুক। কিন্তু আমরা দেখছি যে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি অপচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটের মাধ্যমে একটি সরকার বেছে নেবে। সেটির ওপর নির্ভর না করে অনেকেই বিদেশি প্রেসক্রিপশনের ওপর নির্ভর করছে।

এবার তরুণ ভোটারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। যাদের বড় অংশ প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন। তাই আমিও প্রথমবারের মতো সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই। যিনি জনগণের কথা শুনবেন, তাদের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করবেন এবং জনগণের পক্ষে কথা বলবেন।
(লেখক: শেখ রিহাদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।)

সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন

নির্বাচন হলো নাগরিক দায়িত্ব ও সুশাসন নিশ্চিত করার প্রথম ধাপ। এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা বা কাজকে মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি করা হয়। নির্বাচন একমাত্র সময়, যখন জনগণ রাজনীতিবিদদের মাঝে জবাবদিহিতা সৃষ্টি করতে পারে; যা জনগণ, রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটারদের সামনে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে অভিভাবক হিসেবে বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে। তাই যিনি সব শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করেন, যার সব প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত দক্ষতা রয়েছে এবং নির্বাচিত হলে জনগণের জন্য কাজ করবেন- এমন প্রার্থীকে বাছাই করতে হবে। তবে সবকিছুর মূলে থাকতে হবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা। কেবল সঠিক ব্যবস্থাই পারে নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীকে জণগণের কাছে পৌঁছে দিতে।
(লেখক: মো. কাওসার হোসেন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।)

নির্বাচনেই যোগ্য প্রার্থীর সুন্দর ভবিষ্যৎ

নির্বাচন সংক্রান্ত যৌক্তিক আলোচনা করতে গেলেই বিপদের আশঙ্কা! দেশে এ রকম থমথমে অবস্থা বিদ্যমান। দলের বিষয়গুলো নিয়ে তো আমরা সবাই অবগত আছি। তবে নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনা বা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা জরুরি। প্রার্থী হওয়ার যে যোগ্যতা বা শর্তাবলি দিয়েছে তা যৌক্তিক। তবে রাষ্ট্র পরিচালনার দ্বায়ভারের প্রসঙ্গ যখন আসে, তখন জানতে হবে- যত বেশি দক্ষ, তত বেশি সুনিপুণ কাজ। প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে আরও শক্ত হওয়া উচিৎ। কারণ মনোনিত প্রার্থীর হাতেই রাষ্ট্র উন্নয়নের ফলাফল দিবে।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। একজন মানুষ ভালো খেলাধুলা করে বা ভালো গান গায় কিংবা অন্যকিছুতে বেশ পরিচিত। তার এই পরিচিতি থাকলেই কি সে রাষ্ট্র নেতৃত্বের জন্য যোগ্য? রাষ্ট্র পরিচালনার জ্ঞান, দক্ষতা, রাজনৈতিক ইতিহাস, উন্নত রাষ্ট্রের পরিচালনা পদ্ধতির তুলনামুলক পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা বা নেতার গুণাবলীগুলো কতটা বিদ্যমান তার মধ্যে? এটা একটা নতুন সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে, যা নাগরিকদের ভোগান্তি এবং রাষ্ট্রের অবনতির কারণ হবে। জনগণের  উচিৎ নেতার রাষ্ট্র ভাবনা, রাজনৈতিক যোগ্যতা যাচাই করে মনোনিত করা এবং যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন ঘটানো।
(লেখক: সাজ্জাদ হোসেন, রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।)

সহিংসতা মুক্ত স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ জরুরি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলো সংরক্ষিত ৫০ আসন ব্যতিরেকে জনগণের প্রত্যক্ষ ও স্বতঃস্ফূর্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট প্রদানের মাধ্যমে আইন সভার জন্য ৩০০ জনপ্রতিনিধি নির্বাচন। ১৯৯১ পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে দুই দল কেন্দ্রীক নির্বাচন প্রতিদ্বন্দীতার ধারা সূচিত হয়, যা অদ্যবধি বিদ্যমান। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রয়োজন স্বচ্ছতা ও নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা বর্জন। ভিন্ন মতাদর্শের কারণে রাজনীতি বৈচিত্র্যপূর্ণ। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচনে অগ্রাধিকার জনগণের ও তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার। আমি বিশেষভাবে ২০১১ তে দলীয় সরকার কর্তৃক বর্জিত তত্ত্বাবাধায়ক সরকার ও নব্য আবির্ভূত দলীয় সরকার অধীন নির্বাচনিক নিয়মতান্ত্রিক নিরপেক্ষ।

যেটি আমার চাহিদা পূরণ করবে আমি তার পক্ষে। নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মূল ভুক্তভোগী দেশের সাধারণ জনগণ, ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মী। অগ্নিসন্ত্রাস কেন্দ্রিক সমাবেশ, অযাচিত হরতাল-অবরোধ প্রকৃত অর্থে দেশের গ্লানি। একজন ছাত্র সর্বোপরি দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি মুক্ত চলাচলে শঙ্কাবোধ করি।

জনবান্ধব কর্মসূচিকে বারবার প্রাধান্য দেওয়া ও সহিংসতা মুক্ত আখ্যা দেওয়া হলেও অধিকাংশের পরিণতি ভিন্ন। প্রয়োজন ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা ও মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণে ঐক্যবদ্ধতা। দেশটা আমাদের, জনগণ আমরাই, আমরাই নেতৃত্ব দিবো, আমরাই নির্বাচনে প্রার্থী মনোনীত করবো। আমাদের যৌক্তিক সিদ্ধান্তে নির্ভর করছে আমাদের ও দেশের ভবিষ্যৎ। একটি কাঙ্খিত রাষ্ট্র গঠনে সহিংসতা বিরোধী সর্বাত্মক অংশগ্রহণে, সর্বস্তরের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা কাম্য।
(লেখক: লাবিব বিন শাহেদ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, ব্রাক ইউনিভার্সিটি।)

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়