ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

পথশিশুদের পথ দেখাবে কে!

জাকিয়া সুলতানা শিমু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৭:১০, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩
পথশিশুদের পথ দেখাবে কে!

জ্যামের মাঝে যখন কতশত গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। সেই গাড়ির কাছে গিয়ে যে শিশুরা বিভিন্ন সামগ্রি যেমন- ফুল, রুমাল, আচার ইত্যাদি বিক্রি করে, তারাই পথশিশু। আবার রাস্তার ধারে, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ফুল বিক্রি করে তারাও পথশিশু; যারা অস্তিত্বহীন, বাস্তুহারা। তবে মানুষ হিসেবে আছে তাদের অস্তিত্ব। মূল্যের দিক থেকে তারা শূন্য।

কনকনে ঠাণ্ডার রাতে রাস্তা অথবা ফুটপাতে ঘুমিয়ে যে শিশুরা রাত কাটায়, তারা পথশিশু। কেনো এই শিশুরা জ্যামের মাঝে, স্কুল, কলেজে বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সামনে দ্রব্যসামগ্রী, ফুল ইত্যাদি বিক্রি করে? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আমরা সবাই জানি। হ্যাঁ আমরা জানি, এই শিশুরা শুধু জীবনের তাগিদে এই কাজ করে থাকে। কাজ ছোট নয়, কিন্তু ফুল ফোটার আগে কেনো ঝরে যাবে! কেনো তারা এই বয়সে এমন কর্মে লিপ্ত হবে।

স্কুলে পড়ার বয়সে, মাঠে খেলার বয়সে তারা রাস্তায় দ্রব্যসামগ্রী, ফুল ইত্যাদি বিক্রি করে জীবন কাটায়। কনকনে এই ঠাণ্ডায় রাস্তা, ফুটপাতের ধারে, ওভার ব্রিজের নিচে, বাস স্টপেজে, রেলওয়ে স্টেশনের কাছে দেখা যায়। এই পথশিশু কতোটা করুণভাবে রাত পার করছে, তা আমরা জানি। তাদের এই অসহায়ত্বে আমাদের হৃদয় কেঁদে ওঠে। শরীরের ভীতরে রক্তক্ষরণ হয়। যদিও সবার এটা হয় না। মানবিকতা ও দায়িত্বশীল যদি সবাই হতো তাহলে কি পথশিশু থাকত?

সংবিধান অনযুায়ী একটা শিশুর জন্মের পর থেকেই মৌলিক অধিকার লাভ করে। জাতিসংঘের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রেও মানবাধিকারের কথা বলা আছে। শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এগুলো থেকে বঞ্চিত হয় তারা। কিন্তু এই পথশিশুদের মৌলিক অধিকার কবে ফিরে পাবে! কবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে সবার অধিকার নিশ্চিত করবে? এ প্রশ্ন সবারই।

যদিও সরকার পথশিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। যাদের জমি নেই, ঘর নেই, তাদের জমিসহ ঘর দিচ্ছেন। কিন্তু যারা চোর তাদের কারণে হতে হচ্ছে সুবিধাভোগী থেকে বঞ্চিত। শকুনের কালো থাবায় যেন কোথাও স্বস্তি নেই। বঙ্গবন্ধু ভাষণে বলেছিলেন- ‘পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে,রেখে গেছে চোর।’ সেই চোরের বংশধর এরা, যারা কিনা পথশিশু ও দুঃস্থ্যদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখেন।

তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। অথচ মুখে আমরা বলি 'শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।' কথা ফটর ফটর, বাস্তবায়নে তা শূন্য।পথশিশুরা পথে পথে ঘুরে যা পায়, তাই খেয়ে বেঁচে থাকে কোনরকমে। ইসলামে ও রাষ্ট্রে তাদের মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। যাকাতের কথা বলা হয়েছে। আমাদের নিকট তাদের হক আছে। আর আমরাই সেই অধিকার ক্ষুন্ন করছি। যাকাত দিয়ে থাকি লোক দেখানো অথবা মুড়ি ছিটিয়ে দেয়ার মত।

ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে ছয় লাখের বেশি পথশিশু বসবাস করছে। একটা জাতির ভবিষ্যৎ সেই দেশের শিশুরা। কিন্তু যে দেশের পথশিশুর সংখ্যা এত  বেশি, সে দেশের ভবিষ্যৎ কি হবে ভেবে দেখেছেন কখনো?

অর্থনৈতিকের কারণে পথশিশুদের দেখা যায়, বিভিন্ন সময় নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে। এক সময় তারা সন্ত্রাসী হয়ে যায়। তাদের এহেন কর্মকাণ্ড সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। আবার তারা অনেক সময় মাদকে আসক্ত হয়ে যায় এবং নানারকম অপরাধ করে বসে। এতে করে তাদের দুঃখ-দুর্দশা আরও বৃদ্ধি পায়। এর প্রতিকার কি হতে পারে?

এর প্রতিকার হতে পারে, জাতি হিসেবে আমাদের রাষ্ট্রের পাশাপাশি এদের প্রতি একটু দায়িত্বশীল এবং মানবিকতা থাকা। আমরাই পারি পথশিশুদের এই দুঃখ দুর্দশা দূর করতে। একটি সুন্দর ও সাবলীল জীবন উপহার দিতে।

সরকারকে জোরালোভাবে উদ্যোগ নিতে হবে যাতে পথশিশুদের মৌলিক অধিকার সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা হয়। সমাজের ধনী, বিত্তবান লোকদের পথশিশুদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পথশিশুদের জন্য আরও বেশি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

এভাবে তাদের সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে পথশিশু নামক শব্দটির সঙ্গে পরিচয় থাকবে না।শুধু পরিচয় থাকবে একজন মানুষ, একজন সাধারণ শিশু হিসেবে। তারাও হতে পারবে জাতির ভবিষ্যৎ। ভুমিকা রাখতে পারবে উন্নত জাতি গঠনে। জাতির প্রত্যাশা হয়ে তারাও পারবে একটি সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে।

(লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।)

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়