ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

সেন্ট মার্টিন: বঙ্গোপসাগরের বুকে প্রাকৃতিক নৈসর্গ

হামিদুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩  
সেন্ট মার্টিন: বঙ্গোপসাগরের বুকে প্রাকৃতিক নৈসর্গ

শহরের যান্ত্রিক কোলাহল আর একঘেয়েমি জীবন থেকে মুক্তি পেতে আমরা কত কিছুই না করি। আর সেটা যদি হয় প্রাণবন্ত, সতেজ সামুদ্রিক হাওয়া এবং স্ফটিক-স্বচ্ছ নীল জলরাশির মধ্য দিয়ে হেটে বেড়ানো, তাহলে তো আর কথাই নেই। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য, ছন্দময় ঢেউ, দিগন্তে আকাশের সঙ্গে নির্বিঘ্নে মিশে যাওয়া আকাশী জলের মনোরম দৃশ্য প্রশান্তির আশ্রয়ে সেন্ট মার্টিন দেশি-বিদেশি পর্যটককে আকর্ষণ করে।

এই সেন্ট মার্টিন হলো বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটির নাম। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপটি প্রায় ৪৫০ বছর আগে জেগে উঠে। আরব বণিকদের হাতে প্রথম এ দ্বীপটি নজরে আসে এবং তাদের হাতেই ‘জাজিরা’ নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে এটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত হয়। পর্যায়ক্রমে ব্রিটিশদের তত্বাবধানে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয় ‘সেন্ট মার্টিন’। সর্বপ্রথম ১৮৯০ সালে কিছু মৎস্যজীবী এ দ্বীপে বসতি স্থাপন করে।

সম্প্রতি টেকনাফ থেকে সূর্যের ম্লান হাসিতে ঘাট থেকে সিনবাদ জাহাজে শুরু হয় আমাদের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ। পথিমধ্যে গাঙচিলের অপরুপ নৃত্যে মুখরিত হয়েছিলাম আমরাসহ প্রত্যেকটি পর্যটক। নীল জলরাশির সঙ্গে জাহাজের ধাক্কায় সৃষ্টি হওয়া সাদা ঢেউ যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছিলো বারবার। অপরুপ দৃশ্য উপভোগ করে করে পৌঁছে যাই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপে।

পছন্দের হোটেলে উঠে বিশ্রাম নিয়ে চলে যাই সৈকতে। নীল জলরাশিতে মানুষের মানুষের উচ্ছ্বাস ছিলো চোখে পড়ার মতো। মনে হচ্ছিলো প্রতি মুহূর্তে সমুদ্রের বুকে ধুয়ে যাচ্ছে সমগ্র কোলাহল আর একঘেয়েমি। অবকাশের আমেজে মুখরিত চারদিক। আমরাও শুরু করি সমুদ্রে ঝাঁপাঝাপি। ঢেউয়ের সঙ্গে নিজেকে ভাসানোর খেলায়। এরপর গোধূলি বেলায় উপভোগ করি সূর্যাস্ত।

রাতের সেন্ট মার্টিন যেন স্বপ্নের মতো রুপ ধারণ করে। সেন্ট মার্টিনের পশ্চিম পাড়ায় জমে অন্য রকম আসর। একদিকে সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন অন্য দিকে সবাই বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-প্রিয়জনকে নিয়ে প্রত্যেকটা সারিতে সামুদ্রিক মাছের বার্বিকিউ পার্টি। সামুদ্রিক মাছের বৈচিত্র্যের যেন অভাব নেই। রাত অনেকটা চলে যায় এই দৃশ্যগুলো উপভোগ করেই।

পরদিন সকাল হতেই বেরিয়ে পড়ি সাইকেল নিয়ে। এখানে সহজেই ঘণ্টা প্রতি সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায় স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে। সাইকেল নিয়ে ঘুরলাম দ্বীপের বিভিন্ন পয়েন্ট ও চারপাশ। সবকিছু ছিলো দারুণ উপভোগ্য। সেন্ট মার্টিন দ্বীপটির আয়তন ৮ বর্গ কিলোমিটার। যা সাধারণত পাঁচটি ভাগে বিভক্ত। উত্তর পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, মাঝের পাড়া, পূর্ব ও পশ্চিম পাড়া। দক্ষিণে রয়েছে ছেড়াদ্বিপ ও বাংলাদেশের অন্তিম সীমান্ত।

এভাবেই মনোরম দৃশ্য, সামুদ্রিক গর্জন, বাহারি মাছের মুখরোচক স্বাদে আনন্দে কেটে গেলে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে দুইটি দিন। প্রত্যেকটি অনুভুতি ছিলো মনোমুগ্ধকর। তবে পর্যটক হিসেবে আমাদের দায়িত্ববোধ ছিলো অনেক কিছু। দ্বীপে ভ্রমণের প্রত্যেকটা সময় আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা, লাল পতাকায় চিহ্নিত ‘রিপ-কারেন্ট’ জোন এড়িয়ে চলা, দ্বীপের সৌন্দর্য রক্ষায় সর্বোপরি সচেতনতা আমাদের তৃপ্তি এনে দেয়। তাই দেরি না করে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতির লীলাভূমি সেন্ট মার্টিনে।

(লেখক: শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।)

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়