ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

বিজয়ের মাসে চবি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

সুস্মিতা চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩  
বিজয়ের মাসে চবি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

বাঙালির কাছে ডিসেম্বর একটি অবিস্মরণীয় মাস। কেননা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষের ওপর থেকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর দীর্ঘ ২৪ বছরের অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক এবং সামরিক বৈষম্যের অবসান হয়েছিলো। রচিত হয়েছিল বীর বাঙালির গৌরব গাঁথা। কিন্তু বিজয়ের ৫৩ বছরে পা দিয়ে দেশ কি তার স্বাধীনতার চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের অভিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে? বিজয়ের গৌরব গাঁথা নিয়ে বর্তমান তরুণরাই-বা কি ভাবছে? এ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সুস্মিতা চক্রবর্তী।

শহিদদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না

বাঙালি জাতির রয়েছে একটি গৌরব মণ্ডিত ইতিহাস। আমাদের এই ইতিহাস, অর্জন গোটা বাঙালি জাতি তথা বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের সামনে এক অনন্য মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এতো অর্জন, ইতিহাসের পিছনে রয়েছে অজস্র দেশপ্রেমিক মানুষের আত্মত্যাগ। দীর্ঘ নয় মাস প্রাণপণে যুদ্ধ করার পর আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। শুধু এই ভূখণ্ডকে রক্ষা করার জন্য স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের মহামূল্যবান জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতেও তারা কুণ্ঠাবোধ করেননি।

স্বাধীনতার অর্ধ শত বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা কি প্রকৃতপক্ষেই স্বাধীন হয়েছি; সেটিও ভাবার বিষয়। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের এই সার্বভৌমত্ব লাভ করেছি আমরা। তার সুফল আমরা কতটুকু ভোগ করছি। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা, বঙ্গবন্ধুর সামগ্রিক জীবনের ত্যাগ-তিতিক্ষা, কারাবরণের মূল কারণ, দেশ-মাতৃকার প্রতি ভালোবাসা, জনগণের সুখ-দুঃখের অংশীদার হওয়া। এই মূল্যবোধ আর চেতনা যতদিন না আমরা ধারণ করতে পারবো, ততদিন বিজয়ের প্রকৃত স্বাদ পাবো না।
(লেখক: মো. জাহিদুল হক, শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি।)

'১৬' কেন তাৎপর্যপূর্ণ?

কেবল ‘১৬’ সংখ্যাটির যে গুরুত্ব রয়েছে, তা বাঙালি জাতির জীবনে এক সাফল্যমণ্ডিত বিজয়ের ইতিহাসকে ধারণ করে। ১৯৭১ সালে অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকিস্তানি কর্তৃক নৃশংস হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠে স্বাধীনতার যে ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছিল সেটিই যেন প্রতিধ্বনিত হয়ে নিয়ে এসেছিলো বাঙালি জাতির অতি আকাঙ্ক্ষিত বিজয়। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী সংঘটিত যুদ্ধে দুই লক্ষ সম্ভ্রমহানি ও ত্রিশ লক্ষ প্রাণের রক্তগঙ্গা দিয়ে প্রবাহিত বিজয় অর্জিত হয়েছিলো ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর।

এদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানিদের ৯০ হাজারের বেশি সৈন্য বাঙালির দামাল ছেলেদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। প্রতিবছর ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয় দিবসের সূচনা ঘটে এবং দিনটি উৎযাপিত হয়। বীর বাঙালির এই আত্মত্যাগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ এবং বাঙালির কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জন বস্তুত '১৬' সংখ্যাটিকেই এক ভিন্ন মাত্রা দান করে।
(লেখক: প্রত্যুৎ দেবনাথ, শিক্ষার্থী, সমাজতত্ত্ব বিভাগ।)

বিজয় দিবস বাঙালির মুক্তির দিবস

লাখো শহিদের তাজা রক্ত, মা বোনের সম্ভ্রম আত্মত্যাগের বিনিময়ে  বিশ্বের বুকে ঠাঁই হয়েছে লাল-সবুজের পতাকার। দীর্ঘ ২৩ বছর স্বৈরাচারী পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণের বিরুদ্ধে নিজেদের মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুনিপুণ নেতৃত্বে দীর্ঘদিনের যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে উন্মোচিত হয়েছে বাঙালির বিজয় ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। বিজয়ের এ মাস বাঙালির মুক্তির মাস। বিজয়ের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে শহিদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে দেশের সার্বিক কল্যাণে ব্রতী হওয়া আবশ্যক। স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে সুউচ্চ স্থানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
(লেখক: আনোয়ারুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ।)

দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই

বিজয় দিবস বাঙালির জন্য গৌরব, অত্যন্ত আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের দিন। ৩০ লাখ শহিদ ও মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাঙালি এই বিজয় অর্জন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল কারণ ছিলো বাঙালির প্রতি হওয়া বিভিন্ন বৈষম্য, অন্যায়-অত্যাচার, দুর্নীতি, শোষণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এই অসহনীয় জুলুম থেকে নিজেদের মুক্ত করতে বাঙালি রুখে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু আসলেই কি এই দুর্নীতি, অত্যাচার, শোষণ আমরা বন্ধ করতে পেরেছি? বিজয়ের ৫৩ বছরে পা দিয়েও এই দুর্নীতি বন্ধ হয়নি; বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতি মাত্রাতিরিক্ত দেখা যায়। বিজয়ের মাসে এটাই চাওয়া যে, এই প্রিয় মাতৃভূমি এক বিশুদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হোক, যেখানে দুর্নীতির কোনো ছোঁয়া থাকবে না।
(লেখক: ইফফাত সুলতানা দিনা, শিক্ষার্থী, সমাজতত্ত্ব বিভাগ।)

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন

বর্তমানে জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর তরুণ প্রজন্মের অনেকে এতো আত্মত্যাগী ইতিহাসের কথা ভালেভাবে জানে না। এই সংগ্রামের ইতিহাস না জানলে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হবে না। তাই সবার উচিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানা। স্বার্থে নয়, নিঃস্বার্থ হয়ে দেশকে ভালোবেসে রক্ষা করা।

স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। তাই সুস্থ দেশের প্রত্যাশায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিজয় দিবসের চেতনা ধারণ করে, যোদ্ধাদের অবদানগুলোকে অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদের সচেষ্ট রাখবো, এটাই হোক আমাদের মূলমন্ত্র।
(লেখক: আফরিন সুলতানা মীম, শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ।)

ব্যক্তি জীবনে বিজয়ের চেতনা ধারণ

৭১ কেবল একটি সংখ্যা নয়, এটি বাঙালি হৃদয় এবং সত্তার গভীরে প্রোথিত পবিত্র চেতনার ধারক। অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রতীক। কেননা দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর মানচিত্রে 'বাংলাদেশ' নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আমরা পেয়েছি একটি নিজস্ব পতাকা এবং বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ঠিকানা।

একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে বিজয় দিবসের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। শোষণ মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিজয় দিবসের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতির উন্নতির জন্য আমাদের সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এক যোগে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে।
(লেখক: পূর্ণিমা রাধে, শিক্ষার্থী, সংস্কৃত বিভাগ।)

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়