শরীরে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা যবিপ্রবি ড্রাইভারের
যবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সিনিয়র ড্রাইভার মো. মফিজুর রহমান নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। গত শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আমবটতলা এলাকায় নিজ বাড়িতে তিনি এ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
এতে তিনি গুরুতর আহত হন। আহতাবস্থায় তাকে যশোর সদর হাসাপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ভর্তি না করেই তাকে দ্রুত ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক। পারিবারিক সূত্রে জানা যায় তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। বর্তমানে তিনি জাতীয় বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
এদিকে তার আত্মহত্যার চেষ্টার পিছনে পরিবহন প্রশাসকের অসৌজন্যমূলক আচারণকে দায়ী করে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে যবিপ্রবি কর্মচারি সমিতি।
অভিযোগে বলা হয়েছে, পরিবহন দপ্তরের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. জাফিরুল ইসলাম যোগদান করার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন দপ্তরের কর্মরত ড্রাইভার-হেলপারদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় অসৌজন্য মূলক আচারণ করেন। তেল মাপা কমিটি কর্তৃক মাইলেজ নির্ধরণ করে দেওয়ার পরেও পরিবহন প্রশাসক বিভিন্ন সময় কর্মরত ড্রাইভার-হেলপারদের তেল চোর বলেন।
এমনকি তারা মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেও তিনি বলেন, ‘তোরা তো তেল চোর। তোদের নামজ পড়ে কি হবে?’ এছাড়া তিনি ড্রাইভার-হেলপারদের সঙ্গে তুই-তোকারিসহ অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করেন। তার ব্যক্তিগত কাজে গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবহন দপ্তরের ড্রাইভার-মেকানিক-হেলপারদের ব্যবহার করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সিনিয়র ড্রাইভার মফিজুর রহমানকে বিনা অপরাধে গাড়ি থেকে নামিয়ে অফিসের দায়িত্ব দেন পরিবহন প্রশাসক। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং অপমানিত হওয়ায় রাতে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তিনি বেঁচে গেলেও এখন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মৃত্যু শয্যায়। অগ্নিদগ্ধ মফিজুর হাসপাতালে যাওয়ার সময় তার স্ত্রীকে বলে যান, ‘আমার যদি কিছু হয়, তুমি যানবাহন কর্মকর্তা ও পরিবহন প্রশাসকের নামে মামলা করবে।’
এদিকে মফিজুরের আত্মহত্যা চেষ্টা করার বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে মফিজুরের সহকর্মীদের থেকে জানা যায়, তিনি বেশ কয়েকদিন যাবত পারিবারিক সমস্যার মধ্যে ছিলেন।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. জাফিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার উপরে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়য়ের দুটি বাস নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এতে দুজন ড্রাইভার এমনিতে বসে ছিলো। অফিসে কোনো পিওন না থাকায় উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশে গত শুক্রবার তাদের একজনকে অফিসের কাজের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিলো এবং এটা নিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে কোনো ড্রাইভারদের সঙ্গে আমার খারাপ সম্পর্ক নেই। সে এমনিতেই পারিবারিক সমস্যার মধ্যে ছিলো। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সে এক হেলপারের স্ত্রীকে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। পারিবারিক কারণে হয়তো সে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করতে পারে। তার আত্মহত্যা চেষ্টা করার পিছনে আমি কোনোভাবেই দায়ী নই।’
ড্রাইভারদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তেল চুরি,পাইপ চুরিসহ নানা অপকর্ম না করতে পারায় কিছু ড্রাইভারদের ব্যক্তিগত সমস্যা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকজনকে এই রকম অপকর্মের প্রমাণসহ ধরেছি এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ চলমান। হয়তবা এই কারণে ব্যাক্তিগত আক্রোশের ফলে আমার নামে এমন অভিযোগ করেছে।’
এ বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হলে আমরা খরচ দিয়ে তাকে সাহায্য সহযোগীতা করব।’
/সজিবুর/মেহেদী/