যবিপ্রবির সেই ড্রাইভার আর নেই

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সিনিয়র ড্রাইভার মো. মফিজুর রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় তিনি গত শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) গভীর রাতে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মাহত্যার চেষ্টা করেন।

এ ঘটনার ৩ দিন পর গতকাল সোমবার (১ জানুয়ারি) রাত আনুমানিক ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। মফিজের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন।

মফিজের জানাজা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে এবং এরপর গ্রামের বাড়ি শ্যামনগরে তাকে দাফন করা হবে।

আরও পড়ুন: শরীরে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা যবিপ্রবি ড্রাইভারের

মফিজের সহকর্মীদের সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি তিনি তার এক সহকর্মীর (হেলপার) স্ত্রীকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন। এ নিয়ে সেই হেলপার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর বিচার দাবি করে লিখিত অভিযোগ দেন। এর প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং তদন্তের স্বার্থে তাঁকে গাড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ায় অভিযোগে প্রথম স্ত্রী 'নারী ও শিশু নির্যাতন আইন' এ মফিজুরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

পরবর্তীতে প্রথম ঘটনায় আপোষ মীমাংসা হলেও প্রথম স্ত্রীর মামলা চলমান থাকায় তদন্ত কমিটি আদালতের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত মফিজুরের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে জানা যায়। তবে তিনি গাড়ি না চালানোয় দীর্ঘদিন ধরে ওভার টাইম পাচ্ছিলেন না। এতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

এসব নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় গত শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) রাত ১টার দিকে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। এতে তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়।

এদিকে মৃত্যুর আগে আত্মহত্যার বিষয়ে এক ভিডিওতে মফিজুরকে বলতে শোনা যায়, আগে থেকেই তিনি মানসিকভাবে অশান্তিতে ছিলেন। এরপরে পরিবহন প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে গাড়ি দেওয়া হবে না মর্মে চিঠি দেওয়া হয়। এতে তিনি কষ্ট পান। এসব কারণে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

আরও পড়ুন: মানসিক চাপে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন মফিজুর, তদন্ত কমিটি গঠন

বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি পরিবহন পুলের কিছু গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় সব গাড়ি চালককে পরিবহন দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে মফিজুরকে অফিসিয়াল কাজে নিযুক্ত করা হয়। তাকে কোনোভাবেই ছোট করা হয়নি।

উল্লেখ্য, মফিজুর আত্মহত্যার চেষ্টার পর গত ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন কর্মকর্তা-কর্মচারিরা প্রশাসকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে চিঠি দেন। এর প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। এছাড়া পরিবহন প্রশাসককে সাময়িক সময়ের জন্য দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সহকারী পরিবহন প্রশাসক ড. জাহাঙ্গীর আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।