ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

খেজুর রসের খোঁজে

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২১, ৮ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৬:২৬, ৮ জানুয়ারি ২০২৪
খেজুর রসের খোঁজে

চলছে শীতকাল। আর এই শীতের সকালে খেজুরের রস ছাড়া যেন জমেই না। শীতের সকাল আর খেজুরের রস যেন একে অপরের পরিপূরক। কোনো এক ভোরে সেই রস খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো অনেক দিনের। সেই ইচ্ছেটা আরও তীব্র হতে থাকে শীত ও নির্বাচনের লম্বা ছুটিতে বাড়ি এসে। ঢাকায় থাকাকালে চিন্তাভাবনা থাকলেও বাড়িতে আসার পর সবকিছুই যেন ঠিক হয়ে যায়।

আমার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। বন্ধু সাখাওয়াত ও ছোট ভাই অপিকে নিয়ে খেজুরের রস খাওয়ার পরিকল্পনা সম্পন্ন করলাম। সে অনুযায়ী আমরা বৃহস্পতিবার সবাই সাখাওয়াতের বাড়িতে ঘুরতে গেলাম। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলো আরেক বন্ধু সাইফুল। সেদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরাঘুরির পর মোটামুটি ঠিক হয়ে গেলো যে, আমরা পরদিন সকালেই খেজুরের রস খেতে যাচ্ছি। রাতে খাবারের পর কিভাবে কি করবো, সবকিছু চুড়ান্ত হয়।

মূলত আমাদের মোবারক ভাই খেজুরের রস খাওয়াতে নিয়ে যাবেন। স্থানও মোটামুটি ঠিক হয়ে যায় রাতেই। সমস্যা হলো এতো সকালে যাওয়া নিয়ে। পরে দুটো মোটরসাইকেলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। বলা বাহুল্য আমরা সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী।

শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে ফযরের নামাজের পর আমরা মোটরসাইকেলযোগে রওনা দেই। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে আমরা গন্তব্য স্থলে যাওয়া শুরু করি। পথে কুয়াশায় মোটরসাইকেলের হেডলাইট জ্বালিয়েও কিছু দেখা যাচ্ছিলো না। ধীরে ধীরে আমরা মনোহরদী পৌঁছাই। সেখানে আমরা মোবারক ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করি।

তিনি এবং তার এক ছোটভাইসহ আমরা নির্ধারিত গন্তব্যে দিকে আবারও রওনা হলাম। পথিমধ্যে ভাইয়ের আরও কয়েকজন বন্ধু মোটরসাইকেলে করে এসে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর আমরা আমাদের গন্তব্য স্থল গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার আমরাইদ বাজারের পাশের একটি খেজুরের রস বিক্রেতার গাছের নীচে পৌঁছাই। আমরা যাবো তা আগে থেকেই উনাকে জানিয়ে রাখায় তিনি সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে খেজুর গাছ কেটে পরিষ্কার করে রস সংগ্রহ করা হয়। আমরা যার কাছ থেকে খেজুরের রস খেতে গিয়েছিলাম, তার অনেকগুলো গাছ। তিনি প্রতিদিন বিকেলে নলি, কোমরবন্ধ রশি সঙ্গে নিয়ে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে রসের জন্য ছোট-বড় কলসি ও মাটির হাড়ি বেঁধে রাখেন। মাটির কলসিতে সারারাত রস জমে। ভোরের আলো বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছ থেকে মাটির হাড়ি নামিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহ করেন। আমাদের সামনেই তিনি গাছ থেকে খেজুর রসের হাড়ি পেড়ে তা ছেঁকে দেন।

শীতের সকালে গাছ থেকে নামানো কাঁচা রসের স্বাদ বর্ণনায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সেখানে গিয়ে অনেকেই রস খাওয়া শুরু করে দেয়, আবার কেউ কেউ আমার মতো রসের হাড়ি নিয়ে কিংবা খেজুর গাছে সঙ্গে ছবি তোলা শুরু করে দেয়। আমরা সবাই খেজুরের রস খেলাম।

রস বিক্রেতাও অনেক মজার মানুষ ছিলেন। তিনি আমাদের সঙ্গে একটি ফানি ভিডিও করেন এবং সেটি পরে আবার তার ফেসবুক পেইজে আপলোডও করেন।

তার অনেক জায়গায় খেজুরের রসের অর্ডার থাকায় আমাদের মাত্র নয় লিটার রস খেতে দিতে পেরেছিলেন। আসার সময় তাকে অনেক অনুরোধ করে বোতলে করে কয়েক লিটার রস নিয়ে আসি। খেজুরের রসের স্বাদ সবাই উপভোগ করলেও অনেকেরই মেলেনি তৃপ্তি। তবে আমরা মোবারক ভাই ও তার বন্ধুদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ। তারা না থাকলে হয়তো আমরা এমন বিশুদ্ধ খেজুরের রস খেতে পারতাম না।

পরবর্তীতে আমরা তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করি এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। খেজুরের রস খাওয়া শেষে আমরা সবাই মনোহরদী এসে হালকা নাস্তা করি। পরবর্তীতে তাদের থেকে বিদায় নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে যে যার বাড়িতে চলে যাই। সেদিন সকালটি সত্যিই স্মৃতি পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

(লেখক: শিক্ষার্থী, পরিসংখ্যান বিভাগ, চতুর্থ বর্ষ, ২০১৮-১৯ সেশন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।)

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়