ভয়াবহ ডার্ক ওয়েব ও ফলাফল
মো. সোহান হোসেন || রাইজিংবিডি.কম
ডার্ক ওয়েব হলো- ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের একটি অংশ, যা উন্মুক্ত ইন্টারনেট থেকে গোপনীয়ভাবে পরিচালিত হয়। এতে প্রবেশ করতে সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করা যায় না। ডার্ক ওয়েবে থাকা ওয়েব সাইটগুলো সাধারণত টর (Tor) বা অন্যান্য প্রোটোকল ব্যবহার করে ট্র্যাফিককে ক্রিপ্ট করা হয়, যা ব্যবহারকারীদের পরিচয় গোপন রাখতে সাহায্য করে। এটা বিশাল ওয়েব সার্ভার, যার আকার সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানা নেই। তবে অনুমান করা হয়, এটি সার্ফেস ওয়েবের (সাধারণ ইন্টারনেটের) প্রায় ৫ থেকে ৬ শতাংশ জুড়ে বিস্তৃত।
ডার্ক ওয়েব অপরাধমূলক কার্যকলাপের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। এখানে অস্ত্র, ড্রাগ, মানব পাচার, সাইবার অপরাধ এবং অন্যান্য অবৈধ পণ্য ও পরিষেবা বিক্রি করা হয়। আপনি যদি এদের দাম সম্পর্কে জানেন, তাহলে খুবই অবাক হবেন। এখানে অপরাধ জগতের সব অস্ত্র খুব সহজে বিক্রি করা হচ্ছে।
কিছু গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডার্ক ওয়েবে একজন মানুষের চামড়া দিয়ে তৈরি ব্যাগ মাত্র ৭ থেকে ৮ লাখ টাকায় পাওয়া যায়। আবার আপনি যদি পরিবার, সমাজ বা বিবাহিত জীবনে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি নিয়ে কিছুটা ইনসিকিউরিটির মধ্যে থাকেন, তাহলে আপনি এর সমাধান তৈরি করতে পারবেন। ডার্ক ওয়েবে মাত্র ১ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে একজন ব্যক্তিকে আহত থেকে শুরু করে হত্যা করা সম্ভব। সেখানে সবকিছু থাকবে গোপনীয়। এছাড়া, ব্যক্তিজীবনে কেউ কেউ তার নিরাপত্তার জন্য একটা সিকিউরিটি অস্ত্র খোঁজেন। কিন্তু, বিভিন্ন পলিসির কারণে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন। ডার্ক ওয়েব তারও সমাধান রাখছে।
একটা গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ২ হাজারের বেশি প্রজাতির অস্ত্র আছে ডার্ক ওয়েবে, যা আপনি নিজের নাম ও পরিচয় গোপন রেখে খুব কম দামে কিনতে পারবেন। যেখানে নেই কোনো লাইসেন্স করার ঝামেলা।
শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে শুরু করে সবকিছুই এখন পাওয়া যাচ্ছে। আপনি শুনলে অবাক হবেন, মানুষের শরীরের চামড়া প্রতি ইঞ্চি মাত্র ৭০০ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। আরও অবাক হবেন, মানুষের কিডনি, হার্ট ও চোখ—সবকিছু ডার্ক ওয়েবে খুব সহজে আপনি বেচাকেনা করতে পারবেন।
আর মাদকদ্রব্যের কথা বললে আপনি আরও অবাক হবেন। কারণ, খুব কম দামে এখানে মাদকদ্রব্য কিনতে পারবেন। যেমন: এখানে প্রতি গ্রাম হিরোইন মাত্র ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। আপনার নাম-পরিচয়ও গোপন থাকবে।
এই ভয়াবহ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আগামীতে কী ক্ষতি হতে পারে, আপনি এখন হয়ত একটু হলেও আন্দাজ করতে পারছেন।
ইন্টারপোলের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ডার্ক ওয়েব শুধু অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই বিক্রি করে না; এখান থেকে যেকোনো পশুর চামড়া ও মাংস কেনা সম্ভব। আপনি বাঘের চামড়া ও চোখ, হরিণের মাংস কিনতে পারবেন। এই অপরাধ প্রবণতার কারণে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য, হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্য পশু-পাখি।
একটু মনযোগ দিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলে দেখতে পাব, ডার্ক ওয়েবে যেহেতু অস্ত্র খুব অল্প মূল্যে ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে এবং সেখানে নাম-পরিচয় গোপন রাখা সম্ভব হচ্ছে। ফলে, যাদের অবৈধ কাজ ও অন্যের ক্ষতি করার মন-মানসিকতা আছে, তারা খুব সহজে এখান থেকে অস্ত্র কিনতে পারছেন। আবার ডার্ক ওয়েবে যেহেতু মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় করা সম্ভব, তাই এখানে মানুষ তাদের টাকার চাহিদা মেটাতে আবেগে অনেক সময় নিজের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিক্রি করে দিতে পারেন। এমনকি খুব স্বল্পমূল্যে গোপনীয়তার সঙ্গে মাদকদ্রব্য ক্রয় করে সেবন করতে পারেন। ফলে, তৈরি হবে পারিবারিক, সামাজিক বিশৃঙ্খলা।
তাই, ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। পরিবারের শিশু থেকে শুরু করে পূর্ণ বয়সী কেউ যদি এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোনো কিছু ক্রয় করছে, এমন বোঝা যায়, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। যা দেশ ও জাতির জন্য খুবই লজ্জাজনক।
সবার সচেতনতাই পারে এ ওয়েব সাইট বন্ধ করতে। সবার সচেতন হতে হবে এবং এই ওয়েবসাইট এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিতে হবে।
(লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।)
/মেহেদী/