ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

সিট থেকে রাবি শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দিলো ছাত্রলীগ 

রাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৮:৪০, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪
সিট থেকে রাবি শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দিলো ছাত্রলীগ 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে সিট থেকে এক শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের ১৩০ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বেলা ৩টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামক গ্রুপে দেওয়া একটি পোস্টে এ অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী রাকিবুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

অপরদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম সোহান হাসান। তিনি শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি নিরুপায় এক সাধারণ শিক্ষার্থী বলছি। আর্থিক সমস্যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে খুবই শঙ্কায় আছি। অর্থ সঙ্কটে আমি বিভাগে এক বছর পিছিয়ে গেছি। মেসে থেকে পড়াশোনা চালাতে না পেরে হলে সিটের জন্য প্রাধ্যক্ষকে প্রায় ৬ মাস ধরে বলে আসছি। অবশেষে আমি গত ১০ জানুয়ারি শহীদ হবিবুর রহমান হলের ১৩০ নম্বর কক্ষে বরাদ্দ পাই। আমি ৯ জানুয়ারি থেকে উক্ত রুমে অবস্থান করি।’

তিনি লিখেছেন, গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় আমি খাবার খাওয়ার জন্য বাহিরে যাই। রুমে ফেরার পর দেখি ছাত্রলীগ নেতা সোহান (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) আমার প্রয়োজনীয় সব জিনিস বেড থেকে ফেলে দেয় এবং তাদের পছন্দ মত একজন শিক্ষার্থীকে আমার বেডে তুলে দেয়। আমি রাত ১১ টা ৪০ মিনিটে রুমে ফিরলে আমাকে জোরপূর্বক এই রাতে অন্য কোথাও আশ্রয় নিতে বলে। তখন নিরুপায় হয়ে প্রাধ্যক্ষকে ফোন দিলেও তিনি ধরেন নি।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘বিষয়টি আজ সকালে প্রাধ্যক্ষকে জানালে তিনি বলেন, আমার দায়িত্ব সিটে তুলে দেওয়া। সিটে থাকতে পারবে কিনা, সেই দায়ভার আমার না। এখন তোমার কোনো বড় ভাইয়ের সাপোর্ট নিয়ে সিটে থাকো। সিট দেওয়ার দায়িত্ব আমার, সিট রক্ষার দায়িত্ব তোমার।’

ছাত্রলীগ আসন ছাড়তে চাপ দিচ্ছে উল্লেখ করে ভুক্তভোগী লিখেছেন, ‘আমি আমার নিজস্ব সিটে নিরাপদে থাকতে চেয়ে একটি অভিযোগপত্র লিখি এবং প্রাধ্যক্ষকে দেয়। তিনি দেখবেন বলে জানান। কিন্তু আমার সিট এখনো দখল। আমার বেড মেঝেতে, এই শীতে আমি কি করব বুঝছি না। ছাত্রলীগ আমাকে সিট ছাড়তে চাপ দিচ্ছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে আমি খুবই ভীতসন্ত্রস্ত। আমি আমার বৈধ সিটে নিরাপদে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই।’

এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সোহান হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘হল থেকে কোনো আবাসিক শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার ছাত্রলীগের নেই। এ ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি সোহানকে (অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা) ডেকেছি এবং জানতে চেয়েছি সে এটা কেন করেছে। এরপর আমি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে তার সিটেই তুলে দিয়ে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি।’

শিক্ষার্থীর অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, 'কয়েকদিন আগে ওই শিক্ষার্থীকে হলের সিট ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে আবাসিকতা দিয়েছি। ২-৩ দিন আগে জানতে পারি, ১৩০ নম্বর কক্ষে একটি আসন খালি হবে। পরে ওই শিক্ষার্থী ওই কক্ষের আবাসিকতার জন্য আসেন। এর আগে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও ওই কক্ষে একজন উঠবে বলে জানিয়েছিল। পরে ওই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করি, তুমি থাকতে পারবে কি না? ওই শিক্ষার্থী থাকতে পারবে বলে জানায়। সে আমার বিরুদ্ধে যেভাবে অভিযোগ করেছেন, আসলে আমি সেভাবে বলিনি। বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। আর সমস্যা হবে না।'

/শাকিবুল/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়