ঢাকা     বুধবার   ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১০ ১৪৩১

নেকাব না খোলায় ছাত্রীর মৌখিক পরীক্ষা নেননি ইবি শিক্ষকরা 

ইবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫০, ২০ জানুয়ারি ২০২৪  
নেকাব না খোলায় ছাত্রীর মৌখিক পরীক্ষা নেননি ইবি শিক্ষকরা 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রী নেকাব না খোলায় শিক্ষকরা তার মৌখিক পরীক্ষা নেননি বলে  অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনালের মৌখিক পরীক্ষায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর বিভাগটির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় নেকাব পরে অংশ নেন এক ছাত্রী। এসময় মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে উপস্থিত শিক্ষকরা তার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য নেকাব খুলতে বলেন। এসময় তিনি নেকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রয়োজনে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু পরীক্ষকগণ বোর্ডের সব সদস্যদের সামনে নেকাব খুলতে বলেন। পরে নেকাব না খোলায় তার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান শিক্ষকরা।

এ ঘটনার দিন বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগে অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি শিমুল রায়, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা ও বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, নেকাব না খোলায় সেদিন অন্য সবার মৌখিক পরীক্ষা নিলেও তারটা নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে নেকাব খুলে ভাইভায় অংশ নিলে আবারও তার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে বলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে ওই শিক্ষার্থী পুরুষ শিক্ষকদের সামনে নেকাব খুলতে অসম্মতি জানান। ফলে এখন পর্যন্ত তার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে বিভাগীয় শিক্ষক ও ভাইভা বোর্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাকে মৌখিক পরীক্ষায় নেকাব খোলার জন্য অনুরোধ করেছি। তাকে বুজিয়েছি যে, চার বছর পর তুমি এভাবে চাকরির মৌখিক পরীক্ষায় গেলে রিটেনে ভালো করলেও তোমার চাকরি হবে না। তাতেও সে রাজি হয়নি। তখন আমরা পরীক্ষা কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে বের করে দিয়েছি। এরপরে আমরা কয়েক দফায় তার সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু সে তার অবস্থান থেকে ফিরে আসেনি।’

পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা বলেন, মৌখিক পরীক্ষার সময় আমরা তাকে বলেছিলাম সে যে আমাদের স্টুডেন্ট, তা প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু তিনি তা প্রমাণ করতে পারেননি।

নারী শিক্ষিক দ্বারা পরিচয় নিশ্চিতের ব্যাপারে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে বোর্ডের অন্য শিক্ষকরা অবজেকশন জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ‘এভাবে করলে আমরা মার্ক দিব না।’”

বিভাগের সভাপতি শিমুল রায় বলেন, ‘এর আগে লিখিত পরীক্ষায় আমরা তাকে ফিমেল টিচার দ্বারা পরিচয় নিশ্চিত করেছিলাম। মৌখিক পরীক্ষাতেও নারী শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু সবসময় তো থাকে না। সে ক্ষেত্রে আমরা কি করবো? সে জায়গা থেকে আমরা তাকে অনুরোধ করছিলাম। কিন্তু সে তার অবস্থানে অনড় থাকায় তার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল বলেন, ‘কেউ তার ধর্মীয় জায়গা থেকে নেকাব করতে চাইলে, তাকে সে স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করে ছাত্রীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া উচিৎ।’

ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, ‘ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গা থেকে কেউ যদি নেকাব করে, তাহলে শিক্ষিকাদের দ্বারা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়া যায়। তবে মৌখিক পরীক্ষায় যেহেতু আই-কন্টাক্ট গুরুত্বপূর্ণ, সেক্ষেত্রে মুখ খুলে অংশ নেওয়া ভালো। কিন্তু তাদের জোর করা যাবে না। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিষয়টি আমি যেহেতু জানি না, সেক্ষেত্রে তা জেনে এ বিষয়ে কথা বলবো।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘এই কাজটি উচিৎ হয়নি। আমাদের সামনেও অনেক সময় এ রকম শিক্ষার্থীরা থাকে। আমরা সব সময়ই নারী শিক্ষকদের মাধমে তাদের শনাক্ত করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে, তাদের (শিক্ষকদের) পেনাল্টি হতে পারে।’

/ইদুল/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়