ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

কুবিতে খাবারের দামের সঙ্গে মান কমেছে

কুবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ২৭ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৫:১০, ২৭ জানুয়ারি ২০২৪
কুবিতে খাবারের দামের সঙ্গে মান কমেছে

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রশাসন খাবারের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গেই খাবারের মান ও পরিমাণ কমিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে দোকানিদের বিরুদ্ধে।

এর আগে, গত ১৫ জানুয়ারি খাবারের মান ও দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস সংলগ্ন খাবারের দোকান তালা দেয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে দোকানি ও শিক্ষার্থীরা আলোচনা করে নতুন মূল্য নির্ধারণ করে।

নতুন মূল্য তালিকা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দোকানদাররা খাবারের মান ও পরিমাণ কমিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ নতুন মূল্য তালিকা অনুযায়ী তারা লোকসানে দোকান চালাচ্ছেন। শীঘ্রই নতুন মূল্য তালিকা চান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ফয়সাল আলম বলেন, 'খাবারের দাম খুব একটা পরিবর্তিত হয়নি। যে ৫-১০ টাকা পরিবর্তন হয়েছে, তার বিনিময়ে খাবারের পরিমাণ কমেছে। তাই আমাদের আন্দোলনের কোনো মূল্য থাকলো না। কারণ, দিন শেষে আমরা নির্দিষ্ট দামে গুণগত মান সম্পন্ন খাবার পাচ্ছি না।'

খাবারের মানের উদাহরণ টেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম আবর্তনের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ লাবিব আহমেদ বলেন, 'যে খাবারের আইটেম তারা ৪৫ টাকা রাখার কথা ওইটা ৫০ টাকা রাখছেন। মাংসের পিসও ছোট করে ফেলেছেন। আবার সার্ভিসও আগের মতো পরিচ্ছন্নতা নেই।'

একই অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ বলেন, 'সবজির সঙ্গে যে ডাল ফ্রি দেওয়ার কথা ছিল, সেটি দিচ্ছেন না। ডাল দিলে তার বিনিময়ে ৫ টাকা বাড়তি চাচ্ছেন।'

এইসব অভিযোগের বিপরীতে নির্ধারিত মূল্য তালিকায় স্বাক্ষর করা বিশ্ববিদ্যালয় ফটক সংলগ্ন মামা হোটেলের মালিক আব্দুল মান্নান বলেন, 'এই মূল্য তালিকার জন্য আমাদের প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা লস হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের কোনো ভর্তুকি দিচ্ছে না। আমরা এখানে লাভের জন্যই দোকান নিয়ে বসছি। আমরা শীঘ্রই প্রক্টর স্যারকে এই তালিকা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য কথা বলব।'

একই প্রশ্নের উত্তরে আল মদিনা হোটেলের মালিক নুরুল ইসলাম বলেন, 'আমি মূল্য তালিকায় নির্ধারিত দামে পূর্বেই বিক্রি করতাম। তাই আমার দোকানে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। শুধু সিঙ্গারা-সমুচার দাম কমাতে হয়েছে। তাই সমুচার সাইজ ছোট করে ফেলছি। কারণ, পেয়াজের দাম বেশি। আর ৪৫ টাকা প্রতি প্লেট মূল্যে তেহারি বিক্রি করা আমাদের লস হয়ে যায়। হয়তো সামনে নিম্নমানের চাল ব্যবহার করলে এই লস সামলানো যাবে।'

খাবারের দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট মক্কা হোটেলের মালিক মো. তাজুল ইসলাম। খাবারের মান পরিবর্তনের জন্য দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিকেই কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন তিনি। তিনি বলেন, 'কিছু কিছু খাবারের দাম কমানো হয়েছে, যা বাজার মূল্যের দাম থেকেও নিম্ন। পাবদা মাছের প্রতি প্লেটে তিনটি মাছ দেওয়া হয়, তার মূল্য ৪৫ টাকা করে রাখা হয়েছে। ৬০০ টাকা কেজি এই মাছ তো আমি এই টাকায় তিনটা কিনতেই পারব না। হয়তো এই খাবারের আইটেম-ই আমাকে তুলে ফেলতেই হবে।'

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, 'প্রথমত আমরা যে দাম নির্ধারণ করেছি তা সম্পূর্ণ অনানুষ্ঠানিক। কারণ, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরের হোটেলের দাম আনুষ্ঠানিকভাবে কমাতে পারি না। যেহেতু শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিয়েছিল, সেই প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষার্থী এবং হোটেল মালিকসহ আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি শুধু নিজেদের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক আলোচনা। এখন যদি দাম কমে যাওয়ায় খাবারের মান কমে গেছে এমন কোনো অভিযোগ আসে, তাহলে আমরা আবার হোটেল মালিকদের সঙ্গে বসবো। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। যদি আসে আমরা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আবার কথা বলবো।'

/এমদাদুল/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়