ঢাকা     সোমবার   ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৮ ১৪৩১

রসের হাড়ি মামাবাড়ি

সানজিদা জান্নাত পিংকি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৮, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪  
রসের হাড়ি মামাবাড়ি

বাংলার ছয়টি ঋতুই যেন হাজির হয় ভিন্ন ভিন্ন সাজে। নবান্নের পরপরই প্রকৃতিতে শীতের আভাস দিতে চলে আসে কুয়াশা। ভোরের মিষ্টি রোদ আর সবুজ ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দু নিয়েই আগমন ঘটে শীতের। শহরের বাতাসে পাওয়া যায় শীতের গন্ধ।

তবে গ্রামবাংলার শীতের রূপ কিন্তু ভিন্ন। সেখানে শীত মশাই যেন হেমন্ত ও বসন্তের সেতারী রূপেই আসেন! পৌষ-মাঘ আসতেই প্রকৃতি চাদর মুড়ি দেয়। বাঙালি মেতে উঠে পিঠা-পুলির উৎসবে।

এই লেপ মুড়ি দেওয়ার দিন আসলেই মগজে জেগে ওঠে শৈশবের স্মৃতি। ডিসেম্বর এলেই দিন গুণতাম কবে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হবে। কেননা এরপরই তো লম্বা এক ছুটি! ছুটি পেলেই গন্তব্য হতো মামাবাড়ি। কেননা, শীত মানেই তো মামাবাড়ির পিঠাপুলি। সেসব স্মৃতি বেশ সুখকর। সময়ের পরিক্রমায় শৈশব ফুরিয়ে গেছে। পা দিয়েছি যান্ত্রিক জীবনে। যান্ত্রিক কোলাহলে ব্যস্ততা ভরা ত্রস্ত জীবন প্রতিটি মুহুর্ত খুজে চলে কিঞ্চিৎ অবসর-সুখ।

অপস্রিয়মাণ ছোট্ট জীবন কিছুটা উপশম পেল হটাৎ মামাবাড়িতে গিয়েই। চাঁদের বুড়িটা আজো সুতা কাটে কি-না জানি না। কিন্তু অনুভব করলাম মামা এখনো আমাদের অপেক্ষায় মুখিয়ে থাকেন। ডিসেম্বর আসলেও 'লম্বা ছুটি' আসেনি। তবুও যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা পাশ কাটিয়ে ছুটে গেলাম সেই দূরন্ত শৈশবে। পৌঁছুতেই নানা পদের পিঠা। আর সবাই মিলে একসঙ্গে বসে খাওয়ার আনন্দঘন মুহূর্ত।

কথায় আছে, 'মামার বাড়ি রসের হাড়ি।' তবে খেজুরের রসের ঐতিহ্য এখন গ্রামেও হারাতে বসেছে। দিনে দিনে কমে এসেছে গাছের সংখ্যা। বাংলায় শীত মানেই খেজুর রস আর খেজুর গুড়সহ নানা উপাদানে তৈরি পিঠা খাওয়ার ধুম। আবহমান বাংলার চিরন্তন এই সংস্কৃতির ছোঁয়া নিতে মন উতলা হলেও মামা বাড়িতে খেঁজুর গাছ না থাকায় আক্ষেপেরও কমতি নেই।

তবে সে আক্ষেপ বেশি সময়ের নয়। সন্ধ্যায় আড্ডা দিতে দিতেই রসের খোঁজ মিললো। তৎক্ষণাৎ সবাই পরিকল্পনা করে ফেললাম রস খেতে যাবো। যেই কথা, সেই কাজ! গাছির সঙ্গে যোগাযোগ হলো। তবে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়ালো এই কনকনে শীতে ভোরে উঠা। আরামের ঘুম হারাম করা ছাড়া বিকল্প রাস্তাও নেই। কেননা যত ভোরে খাওয়া যাবে, রসের স্বাদ ততই অমৃত হবে।

পরদিন লেপের ওম ছেড়ে আড়মোড় ভেঙে ভোর ৫টায় আমরা ১০ জন ছুঁটে গেলাম ১২ কিলোমিটার দূরে রসের অভিযানে। তখনও প্রকৃতি কুয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন। কুয়াশায় হারাতে হারাতেই পৌঁছে গেলাম রসওয়ালার বাড়িতে। গিয়েই দেখা মিললো আরও ৭/৮ জনের। পাছে কেউ না আবার রস খাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়!

বিকেলে বসানো হাড়ি ভোর না হতেই রসে টইটম্বুর হয়ে যায়। গাছিরা সকাল হওয়ার আগেই গাছ থেকে নামিয়ে আনেন রসে পূর্ণ সেই মাটির হাঁড়ি। রসওয়ালার বাড়িতে গিয়ে দেখলাম ভিন্ন এক চিত্র। রস বিক্রি ছাড়াও পাশেই বিশাল এক কড়াইয়ে জ্বাল দেয়া হচ্ছিলো খেঁজুরের রস। যা থেকে পরবর্তীতে তৈরি করা হবে গুড়। এই গুড়ই মূলত 'খেজুরের গুড়' হিসেবে পরিচিত।

শীতের সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে এক গ্লাস খেজুরের রস যেন এক অন্য রকম অনুভূতির সঞ্চার করলো। খেজুরের রস না খেলে যেন শীতের আগমনী বার্তা পূর্ণাঙ্গ শোভা পায় না। দুই ঘণ্টার অভিযান শেষ করে সকাল ৭টায় সকলে বাসায় ফিরলাম।

(লেখক: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।)

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়