ঢাকা     রোববার   ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৭ ১৪৩১

চবির দুই আবাসিক হলে প্রাধ্যক্ষ আছে, শিক্ষার্থী নেই

আকিজ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪  
চবির দুই আবাসিক হলে প্রাধ্যক্ষ আছে, শিক্ষার্থী নেই

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য সর্বশেষ দুইটি হল নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল। গত বছর ২৭ অক্টোবরে হল দুইটির উদ্বোধন করা হয়।

তবে উদ্বোধনের আগেই নিয়োগ দেওয়া হয় হল প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষক। প্রাধ্যক্ষ হিসেবে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলে পালি বিভাগের অধ্যাপক ড. জ্ঞান রত্ন শ্রমণ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ড. সজীব কুমার ঘোষ দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হল উদ্বোধনের আগেই তিনজন প্রাধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ এখনো শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট হল প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩০ জুন ১ বছরের জন্য অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের প্রথম প্রাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম। পরের বছর ১ জুলাই হলের দ্বিতীয় প্রাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. কুন্তল বড়ুয়া। ২০২২ সালের ২ আগস্ট প্রাধ্যক্ষ হিসেব দায়িত্ব পান ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সুমন বড়ুয়া। ২০২৩ সালের মার্চে প্রশাসন থেকে একযোগে ১৬ জনের পদত্যাগ করা ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। এরপর থেকে এই হলটির প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক জ্ঞান রত্ন শ্রমণ।

ড. জ্ঞান রত্ন শ্রমণ বলেন, উপাচার্য শিক্ষার্থীদের উঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এখানে এখনো লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এখন সবকিছু রেডি থাকলেও শুধু লোকবলের অভাবে শিক্ষার্থী উঠাতে পারছি না। লোকবল দেওয়া হলেই আমি শিক্ষার্থী উঠাবো। এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গেও আমি কথা বলেছি।

পূর্ববর্তী আরও তিনজন প্রাধ্যক্ষের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হলটিতে আগের প্রাধ্যক্ষদের সময় বিভিন্ন সমস্যা ছিল। তাদের বিষয়ে আলাদা করে আসলে আমি বলতে পারবো না। তারা প্রত্যেকেই চেষ্টা করেছেন দ্রুত শিক্ষার্থীদের জন্য হল প্রস্তুত করতে। কিন্তু এখানে অনেক সমস্যা ছিল। চুরির ঘটনাও ঘটেছে। এখন আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ড. সজীব কুমার ঘোষ বলেন, অন্যান্য হলে দীর্ঘদিন আসন বরাদ্দ দেওয়া হয় না। তাই আসন বরাদ্দ দিলে পরিবেশ কোনদিকে যাবে সেগুলোও আমাদের ভাবতে হয়। তাছাড়া উদ্বোধনের পর হরতাল, অবরোধ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এজন্য ধীরতা হয়েছে। এখানে ডাইনিং সমস্যা রয়ে গেছে। প্রশাসন যেকোনোভাবে লোকবল দিবে বলে আমায় জানিয়েছে। এটা হলেই আমরা শিক্ষার্থী উঠাব। উপাচার্যও ছাত্রদের কল্যাণে দ্রুত হলে উঠিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

শিক্ষার্থী উঠানোর পূর্বেই প্রাধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি হল শুরুর ব্যাপারে অনেক প্রাসঙ্গিক কাজ থাকে। প্রাধ্যক্ষ এবং কিছু হাউস টিউটর না থাকলে কে করবে এসব?

তবে হলগুলোয় অনেক আগেই প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া, ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থী উঠাতে না পারা এবং অন্যান্য বিতর্কিত নিয়োগ কর্মকাণ্ডকে 'অনাচার' বলে আখ্যায়িত করেছেন চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক  অধ্যাপক আবদুল হক। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোকিছুই ঠিকমতো চলছে না, প্রশাসনিক অনাচার চলছে। তাদের কাজই হলো প্রাধ্যক্ষ, আবাসিক শিক্ষক, প্রক্টর ইত্যাদি নিয়োগ দিয়ে কিছু শিক্ষককে নিজেদের চৌহদ্দির মধ্যে, পকেটের মধ্যে রাখা। এদের পক্ষে যারাই কাজ করছে, তাদের পুরষ্কার হিসেবে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন, গবেষণা, ছাত্র-শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষা এবং ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর যে বিশ্ববিদ্যালয় আইন এগুলোর দিকে এই প্রশাসনের কোনো আগ্রহ নেই। তাদের একটাই আগ্রহের জায়গা, সেটা হলো নিয়োগ কেমনে দেওয়া যায়।

তবে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেণু কুমার দে। তিনি বলেন, আমি অ্যাকাডেমিক বিষয়ে দায়িত্বে আছি। অ্যাকাডেমিক বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তর দিতে পারবো। নিয়োগসহ অন্যান্য বিষয়ে উপাচার্যকে জিজ্ঞেস করলে তিনি ভালোভাবে বলতে পারবেন। তবে একটা হলের আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন কাজ থাকে, সেগুলো পরিচালনায় প্রাধ্যক্ষ নিয়োগের প্রয়োজন হয়।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়