ঢাকা     বুধবার   ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১০ ১৪৩১

চবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ

চবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৯:০৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
চবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল মতিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন একই বিভাগের এক ছাত্রী। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীন আখতারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী।

অভিযোগের অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্রকল্যাণ পরিষদের উপদেষ্টা, যৌন নির্যাতন সেল এবং রসায়ন বিভাগের সভাপতিকে দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন, থিসিস চলাকালে আমার সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. মাহবুবুল মতিন কর্তৃক যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হই। থিসিস শুরুর পর থেকে তিনি আমার সঙ্গে বিভিন্ন যৌন হয়রানিমূলক যেমন- জোর করে হাত চেপে ধরা, শরীরের বিভিন্ন অংশে অতর্কিত ও জোরপূর্বক স্পর্শ করা ও অনুপযুক্ত শব্দের ব্যবহার করেছেন। কেমিক্যাল আনাসহ আরো বিভিন্ন বাহানায় তিনি আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক জাপটে ধরতেন।

গত ৬ জানুয়ারি সকাল সোয়া ১০টার দিকে আমি ল্যাবে একা কাজ করছিলাম। তখন তিনি (শিক্ষক) প্রবেশ করেন এবং তার অনেক ঠান্ডা লাগছে বলে আমাকে জোরপূর্বক জাপটে ধরেন। এমতাবস্থায় আমি তাকে ধাক্কা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নেই এবং তৎক্ষণাৎ আমার ল্যাবমেট উপস্থিত হওয়ায় আমি কোনোরকম বেঁচে যাই। তারপর আমি ও বাকি মেয়েরা মিলে ল্যাবে আর একা না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।

ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা বর্ণনা দিয়ে অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী বলেন, সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে তিনি কেমিক্যাল দেওয়ার বাহানা করে আমাকে রুমে ডাকেন এবং ফ্রিজ থেকে কেমিক্যাল বের করতে বলেন। এসময় পেছন থেকে এসে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরেন এবং স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। আমি তাকে ধাক্কা মেরে রুম থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তিনি দরজা বন্ধ করে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। অনেক ধস্তাধস্তির পর সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হই। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি আমি ল্যাবের বাকি দুজন মেয়েকে অবগত করি। 

অভিযুক্ত শিক্ষক হুমকি দিয়েছেন উল্লেখ করে ভুক্তভোগী বলেন, পরের দিন তিনি আমাকে ও আমার ওই দুই ল্যাবমেটকে রুমে ডেকে নিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন— বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য এবং মধ্যস্থতা করতে আমাদের জোরপূর্বক তার রুমে আটকে রাখেন। আমি খুব অসুস্থবোধ করায় ল্যাবমেটরা বারবার রুম থেকে বের হতে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি আমাদের বের হতে দেননি।

অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই জঘন্য ঘটনার পর আমি শারীরিক-মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমার দৈনন্দিন ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় থিসিস কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। থিসিস ল্যাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

এ বিষয়ে কথা বলতে রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল মতিনের সঙ্গে। কিন্তু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে বিষয়টি নিয়ে কি বলব বুঝতে পারছি না। আমি গবেষণা আর শিক্ষকতার বাইরে কোথাও সময় দেই না। অভিযোগের কথা জেনে আমি খুবই আশ্চার্য হয়েছি। আমি আমার জায়গা থেকে সৎ আছি। এটা সৃষ্টিকর্তা জানেন।’

অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর নুরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘অভিযোগপত্রটি পাওয়ার পর উপাচার্য সেটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ সেলে পাঠিয়েছেন। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/আকিজ/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়