ঢাকা     রোববার   ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৭ ১৪৩১

নিয়োগ নিয়ে ইবি উপাচার্য-ছাত্রলীগের মুখোমুখি শিক্ষক-কর্মকর্তারা

ইবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
নিয়োগ নিয়ে ইবি উপাচার্য-ছাত্রলীগের মুখোমুখি শিক্ষক-কর্মকর্তারা

নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ে সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং শাখা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের অডিও ভাইরালসহ নানা দুর্নীতির স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এসব নানা অভিযোগে নিয়োগ স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকদের একাংশ ও কর্মকর্তারা।

এদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন উপাচার্যের আস্থাভাজন শিক্ষকদের অপর অংশ ও শাখা ছাত্রলীগ। এ নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম পদের জন্য নিয়োগ বোর্ড ছিল। এর আগে ১২টি দাবিতে সকাল ৯টা থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান করে কর্মকর্তারা। পরে কর্মকর্তারা উপাচার্যের কার্যালয়ে তাদের ১২টি দাবি তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তারা অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সব নিয়োগ স্থগিত রাখার দাবি জানান। 

এরই মাঝে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান, প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেনের নের্তৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। সেখানে তারা নিয়োগ সংক্রান্ত দূর্নীতির অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ স্থগিত রাখতে উপাচার্যের কাছে দাবি জানান। এ সময় উপাচার্য ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মাঝে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। 

এক পর্যায়ে কর্মকর্তারা উপাচার্যের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে গেলে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ‘জয় বাংলা’স্লোগান দিতে দিতে সেখানে প্রবেশ করেন। এসময় তারা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে দালাল, দূর্নীতিবাজসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দিতে থাকেন এবং তারা নিয়োগ বোর্ড চলমান রেখে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের দাবি জানান।

এদিকে উপাচার্য নিজে শিক্ষকদের হেনস্তা করার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কার্যালয়ে ডেকে এনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে উপাচার্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এর সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত ছিলাম না। শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা চলাকালে ছাত্রলীগের প্রবেশ অনাকাঙ্ক্ষিত। তাদের এভাবে প্রবেশ করা উচিত হয়নি।
এর আগে, গতকাল সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ইমাম নিয়োগকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। এর সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

তবে ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, কর্তৃপক্ষ যাদের যোগ্য মনে করবে, তাদের নিয়োগ দিবে। এখানে ছাত্রলীগের কোনো বিষয় নেই। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পরিস্থিতি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক থাকুক।

এসময় উপাচার্যের কার্যালয়ের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে যারা এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন, তারা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী। তারা দীর্ঘদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেক্টরে দিন মজুর হিসেবে কাজ করছে। এখন তারা যদি নিজেদের ব্যক্তিগত বিষয়ে আন্দোলন করে, তাহলে ছাত্রলীগের কিছু করার নেই। 

কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট বলেন, উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগ এখনও সুরাহা হয়নি। এরই মাঝে তিনি নিয়োগ বোর্ড চালু করছেন। আমরা কোনোভাবেই এই নিয়োগ বোর্ড হতে দেব না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন বলেন, উপাচার্যের নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মান চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এজন্য আমরা চায় ইউজিসির তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব নিয়োগ বন্ধ থাকুক।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আজকে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি নজীরবিহীন ঘটনা। আমি বিষয়টি নিয়ে মর্মাহত। আমি মনে করি, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান-মর্যাদা নষ্ট করেছে। আমি এই বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ আশা করছি। 

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গেও আমার কোনো যোগসূত্র নেই।

/ইদুল/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়