ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

ইবির শৌচাগারগুলোর বেহাল দশা, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

ইদুল হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৬, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
ইবির শৌচাগারগুলোর বেহাল দশা, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ভবন ও আবাসিক হলগুলোর শৌচাগার নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লা-আবর্জনা জমে গেছে। এতে করে শৌচাগারগুলো একেবারেই অকেজো ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

অনেকটা বাধ্য হয়েই এসব শৌচাগারগুলো ব্যবহার করায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন শিক্ষার্থীরা। তবে জনবল সংকট থাকায় এ দুর্ভোগ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্টেট শাখা।

এদিকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী সংকট থাকলেও গত ১৮ বছরে এ পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। ফলে এ সংকটের সমাধান প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও আবাসিক হলসহ মোট ভবন রয়েছে ১৯টি। এছাড়াও রয়েছে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, চিকিৎসা কেন্দ্র ও চারতলাবিশিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় মসজিদ। এসব ভবনের প্রায় প্রতিটি শৌচাগারেই নানামূখী সমস্যা রয়েছে। অধিকাংশ শৌচাগারের দরজায় নেই ছিটকিনি। নেই পর্যাপ্ত পানির ট্যাব ও বদনা। বেসিনগুলো ব্যবহার না করায় ময়লা পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া নিয়মিত পরিষ্কারের অভাবে শৌচাগারে ব্যবহৃত টিস্যু জমে আছে। এমনকি ব্যবহৃত টিস্যু ফেলার পর্যাপ্ত ডাস্টবিনও নেই।

অ্যাস্টেট অফিস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুমানিক ১ হাজার ৮০০ এর বেশি শৌচাগার রয়েছে। কিন্তু এসব শৌচাগার পরিষ্কারের দায়িত্বে কর্মরত সুইপারের সংখ্যা মাত্র ১২জন। গড় হিসেবে দেড় শতাধিক শৌচাগার পরিষ্কারের জন্য কাজ করছে মাত্র একজন সুইপার। এছাড়াও এ পরিষ্কার কাজ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বছরে বরাদ্দ মাত্র ১৫ হাজার টাকা। যা দিয়ে এ কাজ অব্যাহত রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে অ্যাস্টেট শাখা।

এদিকে সংস্থাপন শাখা সুত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ সংখ্যা ৫৫টি। এর বিপরীতে  নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ৩৫ জনকে। এদের মধ্যে কেউ অবসরে গেছেন এবং কেউ মারা গেছেন। ফলে এর সংখ্যা দাড়িয়েছে ২৮ জনে। সর্বশেষ ২০০৬ সালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এরপর কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা সুইপার নিয়োগ দেয়নি প্রশাসন।

তবে নিয়োগকৃত ২৮ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মধ্যে এ কাজ করছেন মাত্র ১২ জন। বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাস্টেট শাখার দাবি, বাকিদের দিয়ে করা হচ্ছে পিয়নের কাজ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জায়েদ তালুকদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম সুন্দর ভবন হলো রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবন। ভবনের বাহ্যিক সৌন্দর্য ও ভিতরের ক্লাস রুমগুলো শিক্ষার্থীদের মন কাড়লেও ভবনের শৌচাগারগুলোর অবস্থা করুণ। কিছু কিছু শৌচাগারের অবস্থা দেখলে ভিতরে যাওয়ার ইচ্ছা হয় না। নিয়মিত পরিষ্কার ও তদারকির অভাবে শৌচাগারগুলোতে জন্ম নিচ্ছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াসহ নানান রকমের রোগ জীবাণু, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ডা. এস এম শাহেদ হাসান বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ফাঙ্গাস বা চুলকানি জাতিয় রোগে ভুগছে। এ রোগগুলো সাধারণত ওয়াশরুম অপরিষ্কার থাকার কারণে হয়ে থাকে। তাই শিক্ষার্থীদের সুস্থতার জন্য ওয়াশরুমগুলো পরিষ্কার রাখা দরকার।

অ্যাস্টেট অফিস প্রধান সামছুল ইসলাম জোহা বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের শৌচাগারগুলোর অবস্থা ভালো নেই। দিন দিন এগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। জনবল সংকট থাকায় বিষয়টি সমাধানও করা যাচ্ছে না। এ সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তেমন কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৌচাগার এবং ড্রেনেজগুলো পরিষ্কার করার জন্য যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দিতো, এখনো সেটাই চালু আছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আগের পরিমাণ বরাদ্দ দিয়ে এ কাজগুলো করা সম্ভব হচ্ছে না।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান বলেন, বর্তমানে যে সংখ্যাক পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছে তাদের দ্বারা পরিষ্কারের কাজ চলছে। তবে পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কথা চলছে। আশা করি, খুব শীগ্রই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়