রাবি শিক্ষার্থী মুরাদের মৃত্যু ডেঙ্গুতে নয়, জন্ডিসে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী মো. মুরাদ আহমেদ মৃধা গত সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও গণিত বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জাকির হোসেন শিক্ষার্থী মুরাদের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছিলেন। তবে তিনি ডেঙ্গুতে নয়, জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলে জানা গেছে।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহমেদ।

মৃত মো. মুরাদ আহমেদ মৃধা রাবির গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার কাটাস্কোল এলাকায়। বাবার নাম মো. সাত্তার মৃধা এবং মায়ের নাম মোছা. মিনা বেগম।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

তার মৃত্যু ও চিকিৎসার বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘রাবি শিক্ষার্থী মুরাদ আহমেদ মৃধার মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়নি। আমরা ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা আলাদাভাবে করে আসছি। ওই শিক্ষার্থীর পেপারস আমি দেখেছি। তিনি হেপাটাইটিস ভাইরাসে (জন্ডিস) আক্রান্ত ছিলেন। হেপাটাইটিস ভাইরাসে কিডনি ফেইলিওরের কারণে তিনি মারা গেছেন।’

মৃত্যু নিশ্চিতের বিষয়ে অধ্যাপক জাকির হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে গণিত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নাসিমা আক্তার বলেন, ‘মুরাদের অসুস্থতার কথা প্রথমে বিভাগকে জানানো হয়নি। পরে তার পরিবার থেকে জানানো হয়, প্রথমে তার ডেঙ্গু হয়েছিল। চিকিৎসার পর ডেঙ্গু নেগেটিভ আসে। পরবর্তী তার কিডনির সমস্যা দেখা দিলে রামেকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়। সেখানে পরীক্ষার পর জন্ডিস ধরা পড়ে।’

জন্ডিসে মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ

এদিকে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে শিক্ষার্থী মৃত্যু এবং নিরাপদ খাবারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাবির ক্রিয়াশীল সাতটি  ছাত্রসংগঠন। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলা থেকে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবনের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা, 'ছাত্র মারা প্রশাসন চাই না, চাই না', 'জন্ডিসে ছাত্র মরে প্রশাসন কি করে', 'জন্ডিসের খাবার, আর না আর না' ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন বলেন, ‘ক্রমাগত এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে মিলনায়তন করা হয়। কিন্তু ক্যাম্পাসে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে পারছে না প্রশাসন। রাস্তাঘাট সবকিছু টাইলস করা হয়, শিক্ষকদের জন্য এসি বাসের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ক্যাম্পাসে খাবারের সংকট সমাধান করা হচ্ছে না।’

নাগরিক ছাত্র ঐক্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী জন্ডিসে মারা গিয়েছে অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে ডেঙ্গুতে। ক্যাম্পাসকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। ক্যাম্পাসে একাডেমিক ভবনগুলোতেও বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় একটা প্রদীপ, কিন্তু শিক্ষার্থীরা এখানে সুপেয় পানির অভাবে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে জীবন হারাচ্ছে। প্রশাসন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না করলে আরও বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

আরও পড়ুন: জন্ডিসের ‘হটস্পট’ রাবি

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সদস্য শামীম ত্রিপুরা বলেন, ‘ক্যাম্পাসে দূর্নীতির কারণে নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ে, জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে শিক্ষার্থী মারা যাচ্ছে। এই প্রশাসন সবসময় সরকারের আনুগত্য প্রকাশ করতে ব্যস্ত। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে তারা চিন্তা করে না।’

এ সময় বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ, ছাত্র গণমঞ্চের সমন্বয়ক নাসিম সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।