ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

জাবিতে সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ

জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫১, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২২:৫২, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
জাবিতে সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সাংস্কৃতিক জোট ধর্ষণের বিচারসহ ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে।

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বরে ধ্বনি'র দপ্তর সম্পাদক ফাইজা মেহজাবিন প্রিয়ন্তির সঞ্চালনায় এই প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ পালন করা হয়।

প্রতিবাদী সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রাপ্তি তাপসী তার বক্তব্যে বলেন, এই ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন কর্মকান্ড নয়। জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের তীব্র আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল অকার্যকর ভূমিকা পালন করছে। অভিযোগ আসে কিন্তু ভুক্তভোগী তার অভিযোগের আশানুরূপ সুরাহা পান না। আমরা দেখেছি এই ধরনের অভিযোগ বারংবার আসার পরেও সে অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় কিন্তু তদন্তের রিপোর্ট পেশ করা হয় না। সাংস্কৃতিক জোট বলতে চায় যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করে বিদ্যমান সকল অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে ও আশু সুরাহা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যে প্রশাসন চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের অভিযোগ আসার পরেও চুপ করে বসে থাকে শিক্ষার্থীরা সেই প্রশাসনকে মান্য করে না। ধর্ষণকাণ্ডের পর থেকে প্রশাসন তাদের দায়িত্ব থেকে যে পিছু হটছে তার দায় এই প্রশাসনকে নিতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে সকল জনসাধারণের জন্য নিরাপদ করতে হবে। প্রশাসন যদি ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্যের নিরসনে কাজ না করে তবে আমরা আরও কঠোর ভূমিকা নিতে বাধ্য হবো।

জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, যারা ধর্ষক তারা একদিনে ধর্ষক হয়ে উঠেনি। তাদের পেছনে আছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মদদ; তার পাশাপাশি  রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আস্থার ছায়াতল। এই আন্দোলন শুধু ধর্ষকের বিরুদ্ধে নয়, এই আন্দোলন সেসব অছাত্র, মাদক চোরাচালানকারী ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে যারা মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে তুলছে এই ক্যাম্পাসে। এই আন্দোলন সেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে যে প্রশাসন যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত মাহমুদুর রহমান জনিকে তাদের ছায়তলে আগলে রেখে সুরক্ষা দেয়।
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সম্পাদক ওমর ফারুক বান্না বলেন, আমরা জানতাম এই ক্যাম্পাসে রাতে-দিনে নারীরা সবসময় নিরাপদ। এই যে মোস্তাফিজ ও মুরাদ তারা একদিনে গড়ে ওঠেনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং ও গণরুম বন্ধ হয়নি এখনো। যে গণরুম বিশ্ববিদ্যালয়ে একেকটি মোস্তাফিজ ও মুরাদ তৈরী করছে সেই গণরুমকে বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার হয় নি। যদি মোস্তাফিজ জানতো এই জনির বিচার হয়েছে তাহলে সে ধর্ষণের মতো এরকম কাজ করার সাহস পেত না। ধর্ষণকাণ্ডে শুধু মোস্তাফিজ ও মুরাদরা জড়িত নয়। এর পেছনে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া জাহান তার বক্তব্যে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের ইতিহাস আন্দোলনের ইতিহাস। ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়েই মূলত জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের উৎপত্তি। এই যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল তৈরি হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগরে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের ফসল হিসেবে। এখন আমরা সবাই জানি যে, যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর তো নেই; উল্টো ভিক্টিমরা অভিযোগ করছেন যে, তাদের ভিক্টিম ব্লেমিং করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনের মূল যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা হচ্ছে হলগুলো থেকে অছাত্রদের বিতারিত করা এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যারা হলে অনেকগুলো সিট একসাথে দখলে রেখেছেন এবং পলিটিক্যাল ব্লক তৈরি করে থাকেন তাদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরন এহসান বলেন,  ধর্ষণের ঘটনার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এবং তার প্রেক্ষিতে মুহুর্মুহু যেসব তথ্য উঠে আসছে সে বিষয়গুলো নিয়ে আজকের এই প্রতিবাদী সমাবেশ। এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা যারা  সাংস্কৃতিক কর্মী রয়েছি শিল্পের মাধ্যমেই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা তুলে ধরতে চাই। গানই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা, কবিতাই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা। গান এবং কবিতার মাধ্যমে আমরা বলতে চাই আমাদের যে দাবিগুলো রয়েছে যেমন- ধর্ষণের সুষ্ঠু বিচার ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে পূর্বোক্ত যে নিপীড়নের মামলাগুলো পড়ে আছে সেগুলোর সুষ্ঠু সুরাহা করা এবং হল থেকে অছাত্রদের বিতাড়িত করা।

তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, একটা প্রসঙ্গ বারবার চোখে পড়ছে সেটা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে দলীয় রাজনীতির ব্যাপক প্রভাব। যা এই সময়ে এসে আরও প্রকট। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত দেখতে চাই। যেনো দলীয় রাজনীতি কখনোই শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রভাব বিস্তার করে মাদক চোরাকারবারি, ধর্ষক, চাঁদাবাজ তৈরি করতে না পারে।

এর আগে, ৪ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট তাদের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করে। দফাগুলো হলো - চলমান ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু সুরাহা এবং জড়িত সকলকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে, যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করে পূর্বের সকল অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারপূর্বক দায়িত্ব অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, হল থেকে অছাত্রদের বিতাড়িত করে সিট সংকট নিরসন করতে হবে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্য নিরসনে পদক্ষেপ নিতে হবে।

আহসান/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়