ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

কুবিতে পদোন্নতি নিয়ে মুখোমুখি শিক্ষক-উপাচার্য

কুবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৩, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
কুবিতে পদোন্নতি নিয়ে মুখোমুখি শিক্ষক-উপাচার্য

পদোন্নতি নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষক ও উপাচার্য মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। শিক্ষকদের অভিযোগ নীতিমালার বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত শর্ত আরোপ করে বেকায়দায় ফেলা হচ্ছে তাদের। তবে উপাচার্য বলছেন, এসবে তার হাতে নেই। সবই নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে এবং শিক্ষকদের কোয়ালিটি বাড়ানোর জন্য নীতিমালার বাইরে অতিরিক্ত গবেষণার শর্ত আরোপ করা হচ্ছে।

কুবি শিক্ষকদের পদোন্নতির নীতিমালা ঘেঁটে দেখা গেছে, সহকারী থেকে সহযোগী অধ্যাপকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিনটি গবেষণা প্রকাশনী থাকার শর্ত রয়েছে। অন্যদিকে সহযোগী থেকে অধ্যাপকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচটি গবেষণা প্রকাশনী থাকার শর্ত রয়েছে। তবে সেখানে প্রকাশনার কোনো মানের কথা উল্লেখ নেই। বলা আছে, স্বীকৃত প্রকাশনায় প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধই পদোন্নতির ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হবে।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এককভাবে কিউ- ওয়ান মানের জার্নালে প্রকাশের অতিরিক্ত শর্ত আরোপ করা হচ্ছে। কখনো কখনো দেখা যায়, সিনিয়র শিক্ষকদের আগে জুনিয়র শিক্ষকরা প্রমোশন পেয়ে যাচ্ছে। এতে বিভাগগুলোতে সিনিয়র-জুনিয়র মানা হচ্ছে না। তাছাড়া আগে পদন্নোতির ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত শর্তগুলো ছিল না। কিন্তু এখন এগুলো দেওয়া হচ্ছে।

তারা আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও নানা সংকট রয়েছে। নিয়মের বাইরে গিয়ে এমন অতিরিক্ত গবেষণা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো পরিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে উঠেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট অনেক। এক শিক্ষককে চার থেকে পাঁচটা করে কোর্স নিতে হয়। ক্লাসে এতো সময় দিয়ে অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজ করে এক বছরের মধ্যে কিউ-ওয়ান জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব। এতে করে ভুক্তভোগী হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষকদের অভিযোগ, উপাচার্য একেক শিক্ষকের জন্য একেক ধরনের শর্ত আরোপ করেছেন। কোন শিক্ষককে দুইটা করে কিউ-ওয়ান জার্নালে গবেষণা করতে বলছেন। আবার উপাচার্যের যারা কাছের, তাদের কোনো শর্তই দিচ্ছেন না।

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, আগে ছিল স্বীকৃত জার্নালে একটা পেপার পাবলিশের নিয়ম। উপাচার্য ইউজিসির নিয়মে ভালো ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নালের কথা বলতে পারেন। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কী এমন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন যে, উনি কিউ-ওয়ান, কিউ-টু মানের জার্নালে পাবলিকেশন চান? গবেষণার পরিবেশ তৈরি না করেই এভাবে পুশ করলে তো হবে না। গবেষণা কিন্তু সিঙ্গেল অথরে সহজে হয় না। সেখানে সিঙ্গেল অথোর, ফাস্ট অথোর এগুলো কেন? একজন শিক্ষক ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে শুধু গবেষণা নিয়ে থাকবে নাকি?

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, স্থায়ীকরণের বিষয়টি নির্ভর করে কোনো শিক্ষকের নিয়োগপত্রের মধ্যে কী লেখা আছে তার উপর। এ উপাচার্য আসার আগ পর্যন্ত ক্রাইটেরিয়া ফিলাপ হয়েছে, স্থায়ীকরণও হয়েছে। আমার ক্রাইটেরিয়া ফিলাপ হওয়ার পর তিনবার আবেদন করি। কিন্তু আমার সঙ্গে শত্রুতা করে স্থায়ী করেননি তিনি। স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে কখনো কোনো শিক্ষককে বোর্ডে ডাকা হয় না। অথচ একমাত্র আমাকে ডেকে অপমান করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে আমি কোনো সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিতেই পারি। এ বিষয়টাও তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করেছেন। শিক্ষকদের তিনি এক বছরে দুই-তিনটা গবেষণা কিউ-ওয়ান জার্নালে প্রকাশের কথা বলছেন। একটা গবেষণাই তো কিউ-ওয়ান মানে তৈরি করতে এক বছরের বেশি লাগে। তার উপর, এর জন্য পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট নেই। যোগদানের পর থেকে তিনি কোনো আইন তো মানছেনই না, নিজের মন মতো কাজ করে যাচ্ছেন।'

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, পদোন্নতির বেলায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য একটা কাঠামো আছে। তাদের আপগ্রেডেশন বোর্ড ও নীতিমালা আছে। সেখানে দেশসেরা অধ্যাপকরা থাকেন। তাদের দুইজন আমাদের সিন্ডিকেট থেকে, তিনজন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্য থাকেন এবং আমি পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান। এখানে ওই সদস্যরাই সব করেন, আমার কোনো প্রভাবই নেই। বিভাগভিত্তিক বোর্ডের সদস্যরাই সব নির্ধারণ করেন। সেখানে ওই শিক্ষকের বাইরের কোনো ঘটনা প্রভাব পড়ে না।

/এমদাদুল/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়