ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

জাবির প্রশাসনিক ভবন অবরোধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৯, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
জাবির প্রশাসনিক ভবন অবরোধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত, শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিতসহ পাঁচ দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করা হয়েছে।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে সকাল ৯টার দিকে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে প্রতিকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন জাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

অবরোধ কর্মসূচিতে আ র ক রাসেলের সঞ্চালনায় নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব মাহফুজ ইসলাম মেঘ তার বক্তব্যে বলেন, আমরা নায্য দাবি আদায়ের জন্য এখানে এসে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। এই প্রশাসন আমাদেরকে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে। আমরা বিশ্বাস করি আজকে যে গুটি কয়েক মানুষ এখানে দাঁড়িয়েছি শুধু তারাই আন্দোলনকারী নয়। বরং প্রত্যেকটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিধি হিসেবে হাজির হয়েছি আমরা।

ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের কোনো বাস্তবায়ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করতে পারেনি। অছাত্রদেরকে বের তো দূরে থাক, বরং প্রশাসন তাদেরকে নিয়ে ভাগবাটোয়ারার মিটিং করছে প্রতিনিয়ত। আমরা প্রথমিকভাবে প্রতিকী অবরোধ করছি। প্রশাসন আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

বিশ্ববিদ্যালায়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য বলেছিলেন পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে অছাত্রদের হল থেকে বের করবেন। গতকাল ছিল শেষ কর্মদিবস। কিন্তু প্রশাসনের কোন কর্মতৎপরতা আমরা দেখিনি। আমরা চাই প্রশাসন প্রত্যেকটি হলে প্রতিটি নিয়মিত শিক্ষার্থীকে আসন নিশ্চিত করুক। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আসন নিশ্চিত হলে স্বাভাবিকভাবেই অবৈধ ছাত্ররা অপসারিত হবে।

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীম সুলতানা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর এখন একটি মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। উপাচার্য কথা দিয়েও সুরাহা করতে পারেননি। প্রশাসনকে বারবার বলেছিলাম আমরা আপনাদেরকে সাহায্য করবো। কিন্তু আপনারা আমাদের সাহায্যে চান না। কেনো চান না, তা জাতি জানে। এই আন্দোলন কোনো দলের আন্দোলন না, এই আন্দোলন একটা পবিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আন্দোলন। ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক দিকটা আজ কোথাও নেই। শুধু শিক্ষার্থীরা ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের একটাই মেসেজ দিতে চাই, ওরা তোমাদের লাটিয়াল বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে, ওরাই তোমাদের ধর্ষক বানাচ্ছে। কোনো মা-বাবা চায় না, তার ছেলে ধর্ষক হোক।

পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে । এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বিচারহীনতার ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাই, তাহলে একটি সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। কিন্তু এই তদন্ত সুষ্ঠুভাবে হবে কিনা, তার সংশয় রয়েছে। ধিক্কার জানাই এই প্রশাসনকে। এই প্রশাসন এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, উপাচার্য গতকাল বলেছেন আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি অছাত্রদের বের করার। তিনি যদি আপ্রাণ চেষ্টা করেই থাকেন, তাহলে এই পাঁচ দিনে অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী বের করার কথা। যদি সেটা না পারেন তাহলে তিনি কোনো নৈতিকতার বলে পদে আছেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গত কয়েক বছর ধরে ঘুরে ঘুরে পদে আসছেন। আমরা জানিনা তার মধ্যে বিশেষ কি গুণ রয়েছে। তিনি নিজেও নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত। অসংখ্য নিপীড়নের ঘটনাকে তিনি উসকে দিচ্ছেন।

তাদের দাবিগুলো হলো- ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, অছাত্রদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্তপূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে, নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তি করা, নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করতে হবে এবং মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণাপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

/আহসান/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়