ঢাকা     সোমবার   ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৫ ১৪৩১

জোহা দিবস : রাবি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

শাকিবুল হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৫, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
জোহা দিবস : রাবি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি, শহিদ জোহা দিবস। ১৯৬৯ সালের এই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহিদ হন। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম শহিদ বুদ্ধিজীবী। দেশের জন্য আত্মাহুতি দানকারী এই শিক্ষকের মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি করা হয় না। তাছাড়া বহু আগে থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জল নক্ষত্র শামসুজ্জোহার এই প্রয়াণ দিবসকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিন্তু রাবি পরিবারের এ দাবি বরাবরের মতো উপেক্ষিত। এ বিষয়ে রাইজিংবিডি.কম-এ রাবির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

আজকের এই দিনকে বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া শামসুজ্জোহার মতো শিক্ষাবিদদের সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের একটি মর্মান্তিক স্মারক। সার্জেন্ট জহুরুল হকের হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে উত্তাল সময়ে তার সাহসী কাজটি ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের পক্ষে শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকার উদাহরণ দেয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্যার শামসুজ্জোহার হস্তক্ষেপ, প্রতিবাদী ছাত্রদের উপর গুলি না চালানোর আহ্বান জানানো, শিক্ষকতা পেশার অন্তর্নিহিত নিঃস্বার্থতা এবং সহানুভূতি প্রদর্শন করে। তার চূড়ান্ত আত্মত্যাগ প্রতিকূলতার মুখে শিক্ষাবিদদের উৎসর্গ এবং সাহসিকতার একটি শক্তিশালী প্রমাণ হিসাবে কাজ করে।  শামসুজ্জোহা এবং সমাজের উন্নতির জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এমন সমস্ত শিক্ষকের স্মৃতিকে সম্মান করার একটি সুযোগ হচ্ছে জাতীয় শিক্ষক দিবস। মহামারী, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবসহ আজ শিক্ষাবিদদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলির প্রতিফলন করারও এটি একটি সময়। শিক্ষকদের সমর্থন ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে, তাদের কাছে তাদের প্রাপ্য সম্পদ এবং স্বীকৃতি রয়েছে। আমাদের উচিৎ শিক্ষা, জ্ঞানার্জন এবং ক্ষমতায়নের মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করা, যা স্যার শামসুজ্জোহা মূর্ত করেছিলেন। এই শিক্ষক দিবস আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে থাকবে, আমাদের শিক্ষার রূপান্তরকারী শক্তি এবং যারা ন্যায় ও স্বাধীনতার কথা বলেছেন তাদের অদম্য চেতনার কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। তাই ১৮ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণা করার দাবি জানাই।
(লেখক: নুরুল্লাহ আলম নুর, শিক্ষাবর্ষ ২০২২–২৩, আরবি বিভাগ।)

দুঃখের বিষয়, শহিদ ড. জোহার আত্মত্যাগের অর্ধশত বছর অতিবাহিত হতে চললেও এখন পর্যন্ত এ দিবসটিকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ২০০৮ সালে রাষ্ট্র তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে এবং তাঁর নামে একটি স্মরক ডাক টিকিট প্রকাশ করে দায় সেরেছে। এটাই কী তাঁর অবদানের মূল্যায়ন? এমন একজন মহান শিক্ষকের আত্মত্যাগের কথা আগামী প্রজন্ম জানবে না, এটা কী করে হয়! পৃথিবীর ইতিহাসে ছাত্রদের জন্য শিক্ষকের প্রাণ বিসর্জনের ঘটনা বিরল। দেশপ্রেমের এই চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করাকে শ্রেয়জ্ঞান করেছিলেন ড. জোহা। তার রক্তের দাগ, ছাত্রদের প্রতি দায়িত্ব ও কতব্যবোধের যে অণুকরণীয় দৃষ্টান্ত, তা উজ্জীবিত রাখার জন্য আমরা ছাত্রসমাজ রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাই। ১৮ ফেব্রুয়ারি ড. জোহার প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে, তার রক্তের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা উচিত।
(লেখক : ইয়াসিন আরাফাত বিজয়, শিক্ষাবর্ষ ২০২১–২২, স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ।)

ভিন্ন দেশে জন্মগ্রহণ করেও বাংলাদেশের প্রতি এ রকম ভালোবাসা ও ত্যাগের দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন শহিদ ড. শামসুজ্জোহা। এদেশের ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন ও আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন অনন্য পথিকৃৎ। একজন শিক্ষক হয়ে রাজনৈতিক ময়দানে এ রকম বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা বিরল। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের শক্ত অবস্থানের পাশাপাশি অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধেও সবসময় সোচ্চার ছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে প্রাণ হারান এই মহান শিক্ষক। বাংলাদেশ হারায় একজন সাহসী শিক্ষকের পাশাপাশি দেশের প্রথম বুদ্ধিজীবী। দেশের স্বার্থে অসামান্য ভূমিকা পালন করলেও রাবি ছাড়া জাতীয়ভাবে বা অন্য কোনোভাবে কিছুই করা হয় না এই মহান শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীর স্মরণে। তাই আমরা সাধারণ ছাত্র হিসেবে দাবি জানাই, এই বুদ্ধিজীবীর স্মরণে ১৮ ফেব্রুয়ারিকে শুধু রাবিতে নয়, পুরো দেশেই যেন সমানভাবে স্মরণ করা হয়।
(লেখক : মো. শামীম হোসেন, শিক্ষাবর্ষ ২০২২–২৩, মার্কেটিং বিভাগ।)

১৮ ফেব্রুয়ারি শহিদ শামসুজ্জোহা দিবস। ১৯৬৯ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে  শহিদ হন তিনি । তিনিই প্রথম বাঙালি শহিদ বুদ্ধিজীবী। এ শিক্ষাবিদ রাবির রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে গিয়ে জীবন দেন তিনি। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বিরল ঘটনা আর আছে বলে মনে হয় না। রাবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি স্যারের মৃত্যু দিবসকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই দাবিটি গ্রহণ করা হয়নি। তার মৃত্যুর প্রায় ৫৫ বছর পরেও এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এ দিবসটি জাতির নিকট সঠিকভাবে উপস্থাপন করার জন্য ১৮ ফেব্রয়ারিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা প্রদান ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমি রাবি শিক্ষার্থী হিসেবে জোর দাবি জানাচ্ছি।
(লেখক : সাইফ শাহরিয়ার, শিক্ষাবর্ষ ২০২২–২৩, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।)

শহিদ ড. শামসুজ্জোহা ছিলেন একজন শিক্ষক। সেই শিক্ষক, যিনি তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন বাঁচানোর জন্য আত্মাহুতি দিতে পিচ-পা হননি। তিনি এমনই এক শিক্ষক আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার পেছনে যার অবদান অস্বীকার করার কোনো সু্যোগ নেই।

১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ড. জোহার মৃত্যুর ঘটনায় দেশের চলমান মুক্তির সংগ্রাম আরও বেগবান হয়ে ওঠে। তাঁর মৃত্যু দেশবাসীকে স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে ধাবিত করে। আজ এই শিক্ষক্ষের শহিদ হওয়ার ৫৫ বছর পূর্ণ হলো। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম বুদ্ধিজীবী। শিক্ষককে যেখানে বাবার সমতূল্য মনে করা হয়ে থাকে। শহিদ ড. জোহা এমনই এক আদর্শ শিক্ষক, যিনি বাবার মতো তার সন্তানদের (ছাত্র-ছাত্রীদের) জীবন রক্ষার্থে আত্মত্যাগ করেছিলেন। তার এই আত্মত্যাগের বিনিময় মূল্য হিসেবে আমরা কী দিয়েছি তাকে? জানি আমরা তেমন কিছুই দিতে পারি নাই, আর হয়তো পারবোও না। তবুও আমাদের রাবি শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি ড. শামসুজ্জোহার প্রয়াণ দিবস ১৮ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
(লেখক : প্রান্ত কুমার দাস, শিক্ষাবর্ষ ২০২২–২৩, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।)

১৮ ফেব্রুয়ারি দিনটি রাবিসহ দেশের শিক্ষক সমাজের কাছে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৬৯ সালের এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা পাকহানাদার বাহিনীর গুলিতে  নিহত হন। নিজের জীবনের বিনিময়ে সেদিন তিনি তার ছাত্রদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টমেন্টে বন্দি অবস্থায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করার প্রতিবাদে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিবাদের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। তার প্রতিবাদে রাবির ছাত্ররাও রাস্তায় নামে। কিন্তু পাক বাহিনী তাদের দিকে রাইফেল তাক করে গুলি করার জন্য। তখন শামসুজ্জোহা প্লিজ ডোন্ট ফায়ার ডোন্ট ফায়ার বলে অনুরোধ করলেও পাক বাহিনী তাকে সেদিন হত্যা করে। দুঃখের বিষয়, শহিদ ড. জোহার আত্মত্যাগের ৫৫ বছর অতিবাহিত হয়ে গিলেও এখন পর্যন্ত এ দিবসটিকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। জাতি হিসেবে আমাদের সবারই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভেবে দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা উচিত।
(লেখক: মুজাহিদ হোসাইন, শিক্ষাবর্ষ ২০২২–২৩, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।)

১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান, ১৫ ফেব্রুয়ারি, সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি শামসুজ্জোহা স্যারের মৃত্যু দেশেবাসীকে স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে ধাবিত করে। শামসুজ্জোহাকে দেশের প্রথম শহিদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে গণ্য করা হয়। তার মতো নীতিবান ও আদর্শ শিক্ষক দেশের সব সন্মানিত শিক্ষকবৃন্দ ও নাগরিক সমাজকে প্রভাবিত করে। এই মহান শিক্ষকের স্বরণে ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী জাতীয় শিক্ষক দিবস পালিত হোক এটাই প্রত্যাশা। তিনি শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরই নয়, এই জাতির একজন আদর্শ দেশপ্রেমী।
(লেখক : ওয়াজেদ শিশির, শিক্ষাবর্ষ ২০২২–২৩, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ।)

১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯, একটি গৌরবময় ও ঐতিহাসিক দিন। যেদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তাক করা বুলেটের সম্মুখে দাঁড়িয়ে এক বীর বাঙালি শিক্ষক বলেছিলেন। আমার ছাত্রদের গায়ে গুলি লাগার পূর্বে সেই গুলি যেন আমার গায়ে লাগে। এমন এক অকুতোভয়, ছাত্রবান্ধব শিক্ষকের শহিদ হওয়ার দিন। আজকের এই যুগে এমন শিক্ষক বোধহয় পাওয়া সম্ভব না। তার এই দিনটিকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে শুধু তার কর্মস্থল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমন একটি দিন কি ঐতিহাসিক দিন হতে পারে না? এমন একটি দিন কি জাতীয় কোনো দিবস হতে পারে না? এমন একটি দিন কি শিক্ষক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে না?

যে জাতিতে এমন অদম্য বীর সাহসীদের সম্মান করা হয় না, সেই জাতিতে কি আদৌ এমন অদম্য বীর জন্মাবে? সে জাতিতে কি এমন দুঃসাহসিক বুদ্ধিজীবী জন্ম নিবে? সে জাতি কি বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে? এই মানুষটিকে কেনো গোটা জাতি স্মরণ করছে না? কেন তার ইতিহাস প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ানো হচ্ছে না? কেন তাকে নিয়ে পিএইচডি বা থিসিস এর মত গবেষণাগুলো করা হচ্ছে না? এই মানুষটিকে চির স্মরণীয় করে রাখতে হলে এই কাজগুলোর পাশাপাশি অবশ্যই এই দিবসটিকে শিক্ষক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া দেয়া দরকার।
(লেখক : নেসার উদ্দিন চৌধুরী, শিক্ষাবর্ষ ২০২১–২২, আরবি বিভাগ।)

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়