ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

জাবিতে সৌরভ ছড়াচ্ছে মেক্সিকান ফুল কসমস

ইমন ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১০, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
জাবিতে সৌরভ ছড়াচ্ছে মেক্সিকান ফুল কসমস

চোখ বুজে একটু চিন্তা করুন। আপনি একটা রাস্তা ধরে হাঁটছেন। যেখানে পথের দু’পাশে নানা রঙের ফুল ফুটে আছে। আর ফুলে ফুলে উড়ছে রঙিন প্রজাপতি। পুরো আঙিনা জুড়ে নানা বর্ণের, নানা গন্ধের ফুলের ছড়াছড়ি। নাম না জানা অনেক পাখিও ওড়াউড়ি করছে গাছের ডালে। হেঁটে হেঁটে যতদূর পথ যাচ্ছেন ফুলের ছড়াছড়ি। ভেবে বলুন, তবুও কী মন বিষন্ন হয়ে থাকবে! এই বর্ণিল পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করবে! উত্তর হবে, না।

এমনই এক স্থানে বসন্তের সকালে চারিদিকে হালকা কুয়াশার মাঝেই উঁকি দিয়েছে সোনালী সূর্য। মিষ্টি রোদে ঝলমলে হয়ে উঠেছে চারিপাশ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে যার মতো ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছে। শহিদ মিনার যেতেই চোখে পড়লো ফুলের বাগান! বাহারি রঙের ফুল আর ফুল। ফুলঘেরা মাঠের মাঝখানে শিক্ষার্থীরা কথা বলছে। কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে মুঠোফোনে ফুলের ছবিও তুলতে দেখা গেল। প্রথম দেখায় যে কারো মনে হতে পারে-কোনো ফুলের বাগানে এসে পড়লাম বুঝি! যদিও মুহূর্তেই বিভ্রম কেটে যাবে। ঢাকা জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমন পুষ্পশোভিত নান্দনিক ক্যাম্পাস আর চোখে পড়ে না।

এতোক্ষণ বলছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। সবুজ প্রকৃতি আর লাল রঙ্গের ইট-পাথরে ঘেরা এই বিদ্যাপীঠের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ এবং শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে দ্যুতি ছড়াচ্ছে রঙ-বেরঙের কসমস ফুল। নজরকাড়া ফুলের মন মাতানো সৌরভ আর স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ সবাই। দেখে মনে হবে এ যেন কসমস ফুলের বিচরণ। লাল, নীল, হলুদ রঙের কসমস ফুলের সৌন্দর্য্যে যেন স্বর্গীয় রূপ ধারণ করেছে জাবি ক্যাম্পাস।

শীতকালে এই বাহারি রঙের ফুলটির বিস্তার শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, অনুষদ, অফিসের প্রাঙ্গণে দেখতে পাওয়া যায় এই ফুল গাছ। ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় এমনকি অনেকের বাগানেও মাথা তুলতে দেখা যায় লিকলিকে সবুজ এই গাছ। নানা রঙের ফুল ফোটে এতে। হলুদ, কমলা, চকলেট, হালকা ও গাঢ় গোলাপি এবং সাদা রঙের কসমস দেখতে খুবই ভালো লাগে।

সারা বছরই নানা প্রজাতির ফুলে সুশোভিত থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শীতকালে এ সৌন্দর্য বহুগুণ বেড়ে যায়। বসন্ত এলে সেই সৌন্দর্য পায় নতুন মাত্রা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অফিস ও রাস্তার পাশে প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে বিচিত্র ধরনের ফুলের বাগান। বাদ যায়নি প্রশাসনিক ভবন, অনুষদ, আবাসিক হল, লাইব্রেরিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্ত্বর। যেখানে শোভা পাচ্ছে নানা প্রজাতির ফুল।

এদের মধ্যে গাঁদা, গোলাপ, কৃষ্ণচূড়া, মুসুন্দা, সোনালু, শিমুল, কসমস, রঙ্গন, জবা, ঝাউ, বাগান বিলাস অন্যতম। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছি, প্রজাপতি। মনে হয়, বসন্ত যেন তার পুরো রূপ নিয়ে নেমে এসেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে। প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্যাম্পাসের এই সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। মাঝে মাঝে কেউ সেলফি, কেউ গ্রুপ ছবি এবং কেউবা সবুজ প্রকৃতির সাথে মিশে থাকা ফুলের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।

কসমসের বৈজ্ঞানিক নামও Cosmos। রঙ এবং ধরন ভেদে নামের ভিন্নতা দেখতে পাওয়া যায়। যেমন: Cosmos sulphureus হলো আমাদের পরিচিত উজ্জ্বল কমলা-হলুদ কসমস। Cosmos bipinnatus হলো সাদা এবং গোলাপি কসমস। আর চকোলেট রঙের কসমসের নাম Cosmos atrosanguineus। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ প্রজাতির কসমস দেখতে পাওয়া যায় পৃথিবী জুড়ে।

আদি নিবাস মেক্সিকোতে হলেও বাংলাদেশীরা এ ফুলকে আপন করে নিয়েছে। ফলে বেশ জনপ্রিয় এই ফুলটি। গাছ ৯০ থেকে ১২০ সেমি বড় হয়। নজরকাড়া এ ফুলের মন মাতানো সৌরভ আর স্নিগ্ধতায় তাই মুগ্ধ সবাই। তাই তো শত ব্যস্ততার মধ্যেও সুযোগ পেলেই কসমস ফুলের সৌরভ নিতে ছুটে যান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

কসমসের বীজ দ্রুত ছড়ায় এবং খুব কম সময়েই আশেপাশের এলাকা দখল করে ফেলতে পারে বলে আমেরিকার কোনো কোনো জায়গায় একে আগাছা হিসেবেও দেখা হয়। এটি একটি তৃণ জাতীয় গাছ। সাধারণত বহুবর্ষজীবী হলেও বাগানে একে চাষ করা হয় এক বর্ষজীবী গাছ হিসেবে। আর বাগানে থাকলে এরা নিজেরা তো সৌন্দর্য বর্ধন করেই, সঙ্গে সঙ্গে বাগানে ডেকে আনে প্রজাপতি এবং মৌমাছি।

বসন্তের আগমনে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি তার জীর্ণতা মুছতে শুরু করেছে। শীতের পাতাঝরা বৃক্ষগুলো এত দিন যেন বিগত যৌবনা বৃদ্ধার মতো দাঁড়িয়ে ছিল রিক্ত বেশে। বসন্ত এসে তাকে দান করেছে যৌবনের উন্মাদনা। মৃতপ্রায় নগ্ন ডালগুলোতে আসতে শুরু করেছে নতুন পাতার আশীর্বাদ। ঋতুর পালাবদলে এবারও বৈচিত্র্যময় ফুলে সেজেছে পুরো ক্যাম্পাস।

(লেখক : শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।)

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়