ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

জাবি হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়াই ক্যান্টিন ইজারা দিল ছাত্রলীগ

জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১১:৪১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
জাবি হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়াই ক্যান্টিন ইজারা দিল ছাত্রলীগ

ক্যান্টিন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আল-বেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মো. জুলকারনাইন ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে প্রাধ্যক্ষের অনুমতির তোয়াক্কা না করে একজনকে ক্যান্টিন চালানোর অনুমতি দিয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আল-বেরুনি হলের ক্যান্টিন পরিচালনা করতেন মো. রেহান। নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও নানা অযুহাতে ক্যান্টিন বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। তবে ক্যান্টিন মালিকের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাকির পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় ক্যান্টিন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

এ ঘটনার তিনমাস পেরিয়ে গেলেও ক্যান্টিন ইজারা না দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থীদের। সম্প্রতি নিয়োগ নিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে দ্বন্দ্বের মুখে এক সাবেক শিক্ষার্থীকে ক্যান্টিন দিতে চান প্রাধ্যক্ষ সিকদার মো. জুলকারনাইন। তবে ছাত্রলীগের সঙ্গে এ ব্যাপারে বনিবনা না হওয়ায় তাকে ক্যান্টিনের দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ঘটনার পর ক্যান্টিনে তালা ঝুলিয়ে দেন প্রাধ্যক্ষ।

এদিকে প্রাধ্যক্ষের অনুমতি বা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই গত বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ইয়াসিন নামের এক ব্যাক্তিকে ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় হল ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক এনাম, চিন্ময় সরকার ও আনোয়ার হোসেন রকিকে দায়ী করেছেন প্রাধ্যক্ষ।

ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র বলছে, নতুন ক্যান্টিন পরিচালকের কাছ থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগী করে নিয়েছেন সভাপতি ও সম্পাদকের অনুসারীরা।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক এনাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্টিন বন্ধ। আমরা স্যারের কাছে অনেকবার গিয়েছি। নিলাম হোক, যে সর্বনিম্ন রেট দিবে তাকেই দায়িত্ব দিবে- এমন দাবি জানিয়েছি। কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। ছেলেরা সবাই বটতলাসহ অনেক দূরে গিয়ে খেয়ে আসে। অ্যাডমিশনের আগের দিন ৩০-৪০ জন এসে আমাদের কাছে বলে যে, অ্যাডমিশনের সময় এতোদূর গিয়ে কিভাবে খাবো? এজন্য আপাতত রান্না করে খাওয়ানোর জন্য আমরা একজনকে দায়িত্ব দিয়েছি। পরে  বিজ্ঞপ্তি অনুসারে যে পায় তাকেই দেওয়া হবে। কিন্তু প্রাধ্যক্ষ ভাবছেন পুরো ব্যাপারটা আমিই করাচ্ছি। এখানে আমার কি লাভ?

চিন্ময় সরকার বলেন, প্রাধ্যক্ষ স্যার সাত্তার নামে একজনকে দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন। আমরা খুঁজে দেখলাম, তার আগের রেকর্ড ভালো না। সে কোনো জায়গায় দুই-তিন মাসের বেশি সার্ভিস দিতে পারেনি। পরে আমরা একজনকে দায়িত্ব দিয়েছি। স্যার আমাদের নামে যেসব কথা বলছেন, তা অত্যন্ত দু:খজনক। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে আমরা এমন কথাবার্তা কখনোই আশা করি না।

ক্যান্টিন মালিক ইয়াসিন বলেন, আমাকে প্রাধ্যক্ষ স্যার এ দায়িত্ব দেয়নি। বড় ভাইরা আমাকে আপাতত রান্না করে খাওয়াতে বলেছে। তবে টাকা দেওয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, এসব কথা বিরোধী পক্ষের লোকজন ছড়াচ্ছে।

এ ঘটনায় হল প্রাধ্যক্ষ সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, এখানে হল প্রশাসন নিরূপায়। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তারা ক্যান্টিন একজনের হাতে তুলে দিয়েছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমি এখানে একদমই অসহায়। আমি প্রাধ্যক্ষ কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি।

এর আগে, আল-বেরুনী হলের পেছনে খেলার মাঠকে ঘিরে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের নেতাকমীর্রা। পরবর্তীতে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। এর কিছুদিন পর হলে তিনটি পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে আবার স্বার্থগত দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েন তারা। পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ না দেওয়ায় সাক্ষাৎকারের দিন প্রাধ্যক্ষের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করতে বাধ্য হয়। তবে বিভিন্ন সময় হল থেকে টাকা আত্মসাৎ ও ছাত্রদের সমস্যা সমাধানে প্রাধ্যক্ষ যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

/আহসান/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়