ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ

হারুন ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৪, ২১ মার্চ ২০২৪  
নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ

নির্মাণশৈলী ও নান্দনিকতায় অনন্য নানা কারুকার্যখচিত মসজিদগুলোর একটি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদ। তবে নানা অব্যবস্থাপনা ও সংস্কারের অভাবে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে এ স্থাপনাটি।

প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই সারা দেশে এ মসজিদের গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু ৫৮ বছর বয়সি পুরাতন ঐতিহ্যবাহী মসজিদে আধুনিকায়নের জন্য নেওয়া হয়নি কোনো সংস্কারের উদ্যোগ। অব্যবস্থাপনা, সংস্কারের অভাবে দিন দিন জৌলুস হারাচ্ছে মসজিদটি।

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে অনতিবিলম্বে সার্বিক দিক বিবেচনা করে মসজিদটি আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে বেশির ভাগ জায়গায় বিশেষ করে দেয়াল ও ছাদে পলেস্তারা ও রং উঠে গেছে। মসজিদের ভিতরে এবং বাহিরে লাগানো লোহার গ্রিল মরিচা ধরে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। মেঝের বেশকিছু জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। 

অযুখানায় মুসল্লিদের ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি পানির ট্যাব নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মুসল্লিদের প্রায়ই অযু করার সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। যেগুলো রয়েছে, তা অপরিস্কার ও শেওলা জমে স্যাঁতসেঁতে হয়ে একরকম ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। মসজিদের পাশেই মুসল্লিদের ব্যবহৃত পাঁচটি ওয়াশরুমের দুটি প্রায়ই তালাবদ্ধ থাকে। বাকীগুলোর অবস্থা ব্যবহারযোগ্য নয়। বিশেষ করে জুমার দিনে নামাজিদের চরম বিপাকে পড়তে হয়।

তাছাড়া, ৫৮ বছর বয়সী এ মসজিদে মেয়েদের নামাজ পড়ার জন্য প্রথম থেকেই সংরক্ষিত জায়গা ছিল। সময়ের বির্বতনে মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত কিছু জায়গায় পুরুষদের প্রবেশ লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে অযুখানাতে এক সাথেই জায়গা ভাগাভাগি করেন তারা। এতে বিব্রতকর এক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় বলে জানিয়েছেন মসজিদে আগত মেয়েরা।

প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই পুরুষদের তুলনায় খুব কম জায়গার বরাদ্দ হয়েছিল মেয়েদের জন্য। বর্তমানে স্বল্প আয়তনের এই রুমে জায়গার সংকুলান না হওয়াই অনেক মেয়েই নামাজ পড়তে আসেন না।

এছাড়া মসজিদ প্রবেশমুখে থাকা ভিক্ষুক, হকার, পার্ক করে রাখা যানবাহনের কারণে হাঁটা চলা একরকম দায় হয়ে গেছে। আবার জুমার দিন মসজিদ ভবনে জায়গার সংকুলান না হওয়াই বাইরে অনেকের নামাজ পড়তে হয়।

অন্যদিকে মসজিদে বিশালাকারের বুকশেলফ আছে। কিন্তু পড়ার জন্য নেই পর্যাপ্ত বই। বর্তমানে আনুমানিক ৭০-৮০টি বই আছে। তবে সেগুলোর বেশিরভাগই জীর্ণশীর্ণ। বেশিরভাগ বইয়ের মাঝের অনেকগুলো পাতা  সাদা হয়ে গেছে। 

মসজিদ সুত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর যাবৎ মসজিদে বইয়ের সংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। পাঠকরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। মসজিদে ভিতরে বা বাহিরে নেই নিরাপত্তা ও নজরদারির ব্যবস্থা। অভ্যন্তরে ও বাহিরে সাতটি সিসিটিভি  থাকলেও সেগুলো একরকম অচল। মোবাইল, মানিব্যাগ, জুতা চুরি তো নিত্য - নৈমত্তিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আক্ষেপ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ থেকে ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ। কিন্তু সংস্কারের অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে। আমি নিয়মিত কেন্দ্রীয়  লাইব্রেরিতে পড়তে আসি। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাশে মসজিদ থাকায় বেশিরভাগ দিনই এখানে নামাজ পড়তে হয়। নামাজে এসে প্রায়ই দিন ওয়াশরুমের সমস্যা, অযুখানায় জায়গার সল্পতা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মসজিদের সংস্কার সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আরবি বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তাকিউল ইসলাম বলেন, মসজিদ পবিত্র জায়গা। সেখানে দেখা যায় মেয়েদের নামাজ কক্ষে প্রবেশ করতে হলে পুরুষদের সামনে দিয়ে যেতে হয়। আবার, অযুখানাটা খোলামেলা জায়গায়। নারীদের জন্য সংরক্ষিত অযুখানার জায়গায় পুরুষেরা অযু করছে। এটা ইসলামে দৃষ্টিকটু ও পর্দার খেলাপ।

শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের শিক্ষার্থী রাতুল আহম্মেদ বলেন, নিরাপত্তা ও নজরদারির অভাব যেন জেকে বসেছে ঢাবি কেন্দ্রীয় মসজিদে। আগে নামাজ পড়তে এসে কোরআন তেলাওয়াত করাসহ বিভিন্ন ইসলামী বই পড়তাম। কিন্তু বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে। পাঠকরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এছাড়াও তিনি মসজিদটির সিসিটিভি, ওয়াশরুম ও পানির সমস্যার দ্রুত সমাধানের দাবি জানান।

সংস্কারের বিষয়ে মসজিদ কমিটির  সভাপতি মমতাজ উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, মসজিদের জন্য আলাদা কোনো ফান্ডের ব্যবস্থা নেই। মসজিদের ছোট ছোট সংস্কারের কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে করা হয়। তবে মসজিদে বড় ধরনের প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন এগোবে না।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মাস্টার প্ল্যান রয়েছে। মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পে মসজিদের আধুনিকায়নের জন্য নেওয়া হয়েছে নতুন প্রকল্প। মাস্টার প্ল্যান শুরু হলে প্রথমদিকেই ভবন নির্মাণসহ বড় ধরনের কাজ করা হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা পুনঃস্থাপন, অযুখানার সমস্যাসহ বিভিন্ন ছোট ছোট সংস্কার প্রক্রিয়াধীন আছে।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়