ঈদের সেরা মুহূর্তনামা
নাফিস সাকিব ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম
ঈদ আমাদের জীবনে অনেক সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত নিয়ে আসে। যখন ঈদ আসে, তখন আমরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই। কারণ ঈদ আসলে একসাথে ঈদের নামাজ পড়ার সুযোগ হয়, নামাজ শেষে কোলাকুলি করি। তারপর পায়েস, সেমাই, জর্দা, ফিরনিসহ বিভিন্ন ভালো ভালো খাবার খাই।
আমরা আমাদের আত্মীয়–স্বজন, ভাই–বোন, পাড়া–প্রতিবেশী সবার সাথে ঈদের উদযাপন হয় হাসি মুখে, এসএমএস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আবার যদি ঈদের উদযাপন হয় নানা কিংবা দাদার বাড়িতে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। আমার ঈদের সবচেয়ে স্মরণীয় স্মৃতি যদি বলতে হয়, তাহলে বলবো আমার নানুর বাড়ি। কারণ নানুর বাড়িতে ঈদের বিশেষ মুহূর্ত জুড়ে রয়েছে আমার স্মৃতিতে, যেটা আমি জীবনেও ভুলবো না।
আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তাম, তখন আমার নানুর বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সালটা তখন ২০১১। আমার নানার বাড়ি গাজীপুরে। তখন রোজার মাস ছিল। ওই সময়ে আমার ক্লাস চলছিল। ২০ দিন ক্লাস করার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ঈদের ছুটির ঘোষণা দেয়। তারপর আমরা সবাই খুশিতে আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেলাম। বাসায় বন্ধের ঘোষণা শোনার পর পরিবারের সদস্যরাও খুশি হলো। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, ঈদের ছুটিতে আমরা নানার বাসায় বেড়াতে যাব।
অবশেষে আমরা নানার বাড়ি গেলাম। নানা–নানি, মামা–মামিসহ সবাই আমাদের দেখে খুব খুশি। আমাদের কিভাবে আপ্যায়ন করবেন, কিভাবে সেবা যত্ন করবেন, এটা নিয়ে সবসময় খেয়াল রেখেছিলেন তারা। তখন তো রোজার মাস, আমি বাদে সবাই রোজা রেখেছিল। আমি তো ছোট মানুষ, রোজা রাখা আমার পক্ষে কষ্টসাধ্য। বাড়িতে যখন পৌঁছলাম, সবার প্রথম নানা–নানির পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। আমাকে দেখে তারা অনেক খুশি হলেন। তারা আমাকে জানালেন, এই ঈদে আমাকে অনেক উপহার দেবেন। এইটা শোনার পর তো আমি মহাখুশি।
এরপর মামা-মামির সাথে দেখা করলাম। আমাকে দেখে তারা অনেক খুশি হলেন, আদরও করলেন অনেক বেশি। তারপর আমার মামাতো ভাই-বোনদের সাথে দেখা করলাম। তাদের সাথে অনেক খোশ গল্পে মেতেছি। তারা তাদের স্কুলে কি কি করতো এসব নিয়ে গল্প গুজব করলাম। মামাতো ভাই-বোনদের সাথে আড্ডা শুরু হলে তো আর শেষ হয় না।
রোজার সময়ে নানা-নানির সাথে গল্প, কাজিনদের সাথে খেলাধুলা যেমন ফুটবল, ক্রিকেট, গোল্লাছুট, বাহিরে ঘুরাঘুরি করা আরও অনেক কিছু হলো। সবশেষ, কাঙ্ক্ষিত ঈদের চাঁদের দেখা মিললো। আমরা সবাই উৎসবে মেতে পড়লাম। একে অপরকে ঈদ মোবারক জানাতে থাকলাম। তখনকার সময়ে আমরা কার্ডের মাধ্যমে ঈদের বার্তা জানালাম। ঈদের চাঁদ দেখার সাথে সাথেই গান গেলাম, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’
কত যে আনন্দ, কত যে আবেগ বয়ে চললো, তার হিসেব নেই। তারপর আসল সেই খুশির ঈদ। বাবার সাথে গেলাম মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে। নামাজ শেষে একে অপরকে কোলাকুলি করলাম। বাড়িতে ফিরে আম্মুর পায়ে সালাম করলাম। তারপর আম্মু আমাকে সালামি দিলেন। এরপর মামা-মামির কাছে গেলাম, তারাও সালামি দিলেন। আমি তো মহাখুশি। সবশেষে, আমি নানা–নানির কাছে গেলাম। তাদের পা ছুঁয়ে সালাম করলাম এবং সাথে সাথে তারা আমাকে ১০০০ টাকা সালামি দিলেন। আমার কাছে এইটা ছিল কল্পনাতীত। আমি তাদেরকে জড়িয়ে ধরি। এটা আমার কাছে ছিল সেরাদের সেরা মুহুর্ত, যা ভোলার নয়।
আরেকটি স্মৃতির মুহূর্ত আমি তুলে ধরতে চাচ্ছি। সময় তখন ২০০৮ সাল। আমি ওই সময়ে অনেক ছোট। বোঝার ক্ষমতা অত ভালো ছিল না, কিন্তু আমার স্মৃতিশক্তি প্রখর। তো আমি আর বাবা মিলে ঈদের নামাজে যাই মসজিদে। কিন্তু সেই মসজিদটি অনেক বড়। আমি খালি চিন্তা করতাম, এত বড় মসজিদ বাংলাদেশে আছে নাকি। আমি অবাক তাকিয়ে রইলাম মসজিদের দিকে। কত মুসল্লি, কত বড় মসজিদ। আমি প্রথম জামাত মিস করি। দ্বিতীয় জামাতে পড়লাম বাবার সাথে। আমি আব্বুর দেখা-দেখি ঈদের নামাজ পড়লাম। দুই ঈদের নামাজ কিঞ্চিৎ মানুষ ভুল করে এটা স্বাভাবিক।
নামাজ পড়ার শেষে খুতবা পাঠ করলেন ইমাম সাহেব। খুতবা শেষে দোয়া মোনাজাত শুরু করলেন। বাবার সাথে আমিও দুই হাত তুলে মোনাজাত করলাম। অনেককেই দেখলাম কান্নাকাটি করছে। পরে বড় হয়ে বুঝলাম, আমরা পাপী, গুনাহগার বান্দা। আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হলে দিন রাত দোয়া মোনাজাত করতে হবে, যেন আল্লাহ আমাদের বার্তা শুনতে পান। তো নামাজ শেষে আমি আর বাবা মসজিদ থেকে বের হলাম। বের হয়ে দেখলাম অনেক গরিব-মিসকিন মসজিদ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পরে আব্বু আমাকে কিছু টাকা দিয়ে বললো, ‘যাও বাবা, ওদেরকে টাকা দিয়ে এসো।’
পরে আমি সাহস করে ওদেরকে টাকা দিলাম। সবকিছু শেষ করে বাসায় ফিরলাম। আস্তে আস্তে যখন বড় হলাম, তখন বুঝলাম যে মসজিদে আমি বাবার সাথে নামাজ পড়েছি, এটা বায়তুল মোকাররম মসজিদ। আমার জীবনে সবচেয়ে সফল মুহুর্তটা হলো- বাবার সাথে ওইদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদে নামাজ পড়া। আমার ইচ্ছা, আমি যখন প্রতিষ্ঠিত হব, তখন আমি বাবাকে নিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদে নিয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।
-শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, প্রথম বর্ষ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন-
/মেহেদী/এসবি/লিপি/